‘মিশন নির্মল বাংলা’ কি আদৌ সফল হবে, শুরুতেই উঠে গেল প্রশ্ন। এর কারণ শুধু শৌচালয় নির্মাণে শ্লথ গতি নয়, শৌচালয়হীন বাড়ির যে তালিকা তৈরি হয়েছে ত্রুটি রয়েছে তাতেও। প্রথমে যে তালিকা দেওয়া হয়েছিল তাতে ফাঁক থেকে যাওয়ায় নতুন করে কিছু নাম সংযোজন করে কয়েকটি ব্লক। কিন্তু দ্বিতীয় দফার তালিকা নেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে সরকার। ফলে, পশ্চিম মেদিনীপুরের বেশ কয়েকটি ব্লক প্রশাসন সমস্যায় পড়েছে।
নির্মল গ্রাম পঞ্চায়েত ও নির্মল পঞ্চায়েত সমিতি-র পুরস্কার পেয়েছিল এই জেলারই ৯৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং মোহনপুর পঞ্চায়েত সমিতি। সেই সাফল্য নিয়ে সাড়ে বছর আগে তত্কালীন বামফ্রন্ট সরকার ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ কম বড়াই করেনি। কিন্তু মিশন নির্মল বাংলা শুরুর সময়ই সমীক্ষায় ধরা পড়ে প্রতিটি বাড়িতে শৌচালয় রয়েছে বলে যে গ্রাম পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতি পুরস্কার পেয়েছিল, সেখানেও বহু পরিবার শৌচালয়হীন! সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, পুরস্কারপ্রাপ্ত মোহনপুর পঞ্চায়েত সমিতিতেই ৬৬৮১টি পরিবারে শৌচালয় নেই। সে ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কর্তাদের ব্যাখ্যা ছিল, সমস্যার জেরে বহু পরিবার ভেঙেছে। তাই অত সংখ্যক শৌচালয়হীন পরিবার দেখাচ্ছে। যদিও অভিযোগ ছিল, হিসেবে গরমিল দেখিয়েই পুরস্কার আদায় করা হয়েছিল। চন্দ্রকোনা-১, ২, সবং, মোহনপুর, পিংলা, সবং-সহ একাধিক ব্লকেই এমন ঘটনা ঘটেছে।
মোহনপুরে পরবর্তীকালে আবার দেখা যায়, শৌচাগারহীন পরিবারের প্রকৃত সংখ্যাটা হল ৭৭৯৯টি। অর্থাত্ আরও ১১১৮টি পরিবারের নাম তালিকায় ঢোকানো জরুরি হয়ে পড়ে। কিন্তু সরকার রাজি হয়নি। সংখ্যাটা সব থেকে বেশি ডেবরা ব্লকে। প্রথমে ব্লকের ১৭৫৮৮টি পরিবার শৌচাগারহীন বলে এমআইএসে নথিভুক্ত করা হলেও পরে দেখা যায়, সংখ্যাটা ২৮৪৮১। একই ভাবে পিংলা ব্লকে ১০১৮৮, সবংয়ে ৭৯৯৫টি, চন্দ্রকোনা-১ ব্লকে ১৮৫৪টি, চন্দ্রকোনা-২ ব্লকে ৩৭৭৬টি পরিবারের নাম এমআইএসে ঢোকানো যায়নি। কেন্দ্রীয় সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, প্রথমে এমআইএসে যে তথ্য দেওয়া হয়েছিল সেটাই গ্রহণ করা হবে।
এ দিকে, প্রথমে পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে যে অর্থ মঞ্জুর হয়েছে, সেই কাজই করে উঠতে পারেনি প্রশাসন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় শৌচালয় নির্মাণের গতিও খুব শ্লথ। প্রাথমিক সমীক্ষা অনুযায়ী, জেলার ১১ লক্ষ ৪৬ হাজার ৬২২টি পরিবারের মধ্যে ৫ লক্ষ ৬১ হাজার ৮০৫টিতেই শৌচালয় নেই। অর্থাত্ সংখ্যাটা প্রায় অর্ধেক। গত আর্থিক বছরে ৪৭২৪২টি শৌচাগার নির্মাণ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হলেও ২৮৩৪৫টির বেশি তৈরি করা যায়নি। ৩৪ কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ২৩ কোটি টাকা খরচ করতে পেরেছিল প্রশাসন। চলতি বছরে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ১ লক্ষ ৩৬ হাজার করা হয়। ২০১৭ সালের মধ্যে এই কাজ শেষ করতে হবে। কিন্তু চলতি অর্থবর্ষের তিন মাসে কাজ হয়েছে মাত্র ২১ শতাংশ। বহু গ্রাম পঞ্চায়েতই তিনমাসে একটি শৌচালয়ও তৈরি করেনি। যেমন, খড়্গপুর-১ ব্লকের কলাইকুণ্ডা পঞ্চায়েতের লক্ষ্যমাত্রা ৩৯৭৪টি শৌচালয় হলেও একটিরও কাজ হয়নি। কেশিয়াড়ির লক্ষ্যমাত্রা ২৮১৭। সেখানেও কোনও শৌচাগার হয়নি। দাসপুর-২ ব্লকের রানিচক, গৌরা, খুকুড়দা পঞ্চায়েত, চন্দ্রকোনা-২ ব্লকের ভগবন্তপুর, কুঁয়াপুর-সহ আরও অনেক পঞ্চায়েতেরই এক দশা।
পরিস্থিতি সামলাতে নজরদারির দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ এবং সদস্যদের। জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ বলেন, “যে কোনও মূল্যে আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিটি পরিবারে শৌচাগার নির্মাণ করতে চাই। তাই আরও বেশি করে এজেন্সিকে কাজে লাগানো হচ্ছে। জেলা পরিষদের তরফে নজরদারিও চালানো হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy