Advertisement
০৪ মে ২০২৪

অন্নপ্রাশনে রক্তদান, আনন্দ ছাপিয়ে অঙ্গীকার দম্পতির

এগরা মহকুমার পটাশপুর-২ ব্লকের চন্দনপুর গ্রামের বাসিন্দা শ্রীতনু দাসমহাপাত্র। কর্মসূত্রে সস্ত্রীক হলদিয়ায় থাকেন। বাবা অতনু দাসমহাপাত্র অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এবং বর্তমানে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত।

রক্তদান শিবিরে যমজসন্তান-সহ দম্পতি। নিজস্ব চিত্র

রক্তদান শিবিরে যমজসন্তান-সহ দম্পতি। নিজস্ব চিত্র

গোপাল পাত্র
পটাশপুর শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:৫০
Share: Save:

ছয় মাসের ফুটফুটে যমজ শারণ্যা এবং ঈশাঙ্ক। মুখেভাতের অনুষ্ঠানে বাবা-মা’র কোলে দুই খুদেকে ঘিরে চারিদিকে আপনজনের ভিড়। যার সঙ্গে খুব একটা অমিল নেই আর পাঁচটা বাঙালি পরিবারে মুখেভাতের অনুষ্ঠানের। তবে পার্থক্য রয়েছে। আর তা হল সামাজিক সচেতনতার প্রতি দায়বদ্ধতার ভূমিকা। যা আর পাঁচটা মুখেভাতের অনুষ্ঠানের থেকে আলাদা পরিচয় দিয়েছে শারণ্যা ও ঈশাঙ্কের মুখেভাতকে। যমজ দুই ছেলে-মেয়ের মুখেভাতের অনুষ্ঠানকে সামাজিক কতর্ব্যের রূপ দিতেই বাবা শ্রীতনু দাসমহাপাত্র ও মা ঈশিতা দাসমহাপাত্র ছেলেমেয়ের মুখেভাতে আয়োজন করেছিলেন রক্তাদান শিবিরের।

এগরা মহকুমার পটাশপুর-২ ব্লকের চন্দনপুর গ্রামের বাসিন্দা শ্রীতনু দাসমহাপাত্র। কর্মসূত্রে সস্ত্রীক হলদিয়ায় থাকেন। বাবা অতনু দাসমহাপাত্র অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এবং বর্তমানে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। পরিবার সূত্রে জানা গেল, ছোট থেকেই শ্রীতনু নানা সামাজিক কাজে যুক্ত থাকতে ভালোবাসেন। বিয়ের পর স্ত্রী ঈশিতার চিন্তাধারা এবং বাবার ইচ্ছায় সামাজিক সচেতনতায় নতুন কিছু করতে চাইছিলেন। মাস ছয়েক আগে শ্রীতমু-ঈশিতার যমজ ছেলে-মেয়ে জন্ম নেয়। সন্তান জন্মানোর পরেই শ্রীতনু মনের ইচ্ছা ডানা ক্রমশ ডানা মেলতে থাকে। চলতে থাকে তাকে বাস্তব রূপ দেওয়ার প্রস্তুতি। গত শনিবার ছেলে ঈশাঙ্ক এবং মেয়ে শারণ্যার মুখেভাতের অনুষ্ঠান ছিল। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতদের সংখ্যাও কম ছিল না। সেই উপলক্ষে দাসমহাপাত্র পরিবারের তরফে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল রবিবার।

প্রথমে এলাকার মানুষের কাছে বিষয়টা বুঝে উঠতে সময় লেগেছিল। মুখে ভাতের অনুষ্ঠানে রক্তদান! তবে রবিবার সকাল থেকে মেদিনীপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং হলদিয়া ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরা এসে উপস্থিত হলে এমন অভিনব উদ্যোগ দেখে এগিয়ে আসেন স্থানীয় যুবকেরাও। রক্তদাতারাও হাজির হয়ে যান। যাদের ঘিরে এই আয়োজন সেই দুই খুদে তখন মা-বাবার কোলে মুখে একগাল হাসি নিয়ে সবাইকে টা টা করতে ব্যস্ত। এদিনের শিবিরে মোট পঞ্চাশজন রক্ত দেন।

রক্তদিতে আসা চন্দনপুরের এক যুবক সৌমিত্র পাহাড়ী বলেন, ‘‘সমাজ সচেনতার জন্য বিভিন্ন ভাবে মানুষ কাজ করে। প্রত্যন্ত গ্রামে এই ধরনের সচেতনতার বার্তা অভিনব এবং প্রশংসনীয়। এখানে রক্ত দিতে পেরে গর্বিত লাগছে।’’ আর দাসমহাপাত্র পরিবারের কর্তা অতনুবাবুর কথায়, ‘‘বেঁচে থাকার জন্য সমাজ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি। কিন্তু কেউ ব্যক্তিগত উদ্যোগে সমাজের মঙ্গলের জন্য সে ভাবে ভাবি না। তাই মানুষকে সচেনতন করতে এই শিবিরের আয়োজন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rice Ceremony Blood Donation Camp
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE