Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
মেডিক্যালে পরিষেবা বেহাল
Dengue

ডেঙ্গি রোগী চলে যাচ্ছেন ভিন্ রাজ্যে

পশ্চিম মেদিনীপুর জুড়ে এ বার ডেঙ্গির দাপট। জেলায় ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা চারশো ছাপিয়েছে। সদর শহর মেদিনীপুরেও ১২ জন ডেঙ্গির কবলে পড়েছেন। এই পরিস্থিতিতে জেলার অন্যতম প্রধান হাসপাতাল মেদিনীপুর মেডিক্যালেই রোগীর ভিড় বেশি।

অগত্যা: শয্যা বাড়ন্ত। তাই মেঝেতেই রোগীরা। নিজস্ব চিত্র

অগত্যা: শয্যা বাড়ন্ত। তাই মেঝেতেই রোগীরা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৭ ০০:৪৭
Share: Save:

প্রচণ্ড জ্বর নিয়ে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসেছিলেন মমতা গিরি। কিন্তু একদিন ভর্তি থাকার পরেই তিনি হাসপাতাল ছাড়েন। পরিজনেরা তাঁকে নিয়ে গিয়ে পড়শি রাজ্য ওডিশার কটকের এক হাসপাতালে ভর্তি করেন। এখনও সেখানে চিকিত্সাধীন মেদিনীপুর শহরের এই বাসিন্দা। তাঁর ডেঙ্গি ধরা পড়েছে। মমতাদেবীর শ্বাশুড়ি আরতি গিরির ক্ষোভ, “মেদিনীপুরের এই হাসপাতালে বৌমার ঠিক মতো চিকিত্সা হচ্ছিল না। কোনও সিনিয়র ডাক্তার এসে দেখেননি। জ্বরও কমছিল না। বাধ্য হয়ে বৌমাকে কটকের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’’

পশ্চিম মেদিনীপুর জুড়ে এ বার ডেঙ্গির দাপট। জেলায় ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা চারশো ছাপিয়েছে। সদর শহর মেদিনীপুরেও ১২ জন ডেঙ্গির কবলে পড়েছেন। এই পরিস্থিতিতে জেলার অন্যতম প্রধান হাসপাতাল মেদিনীপুর মেডিক্যালেই রোগীর ভিড় বেশি। কেউ ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে, কেউ ম্যালেরিয়ার, কেউ বা জ্বর গায়ে এখানে ভর্তি হচ্ছেন। তবে মেডিক্যালে ঠিকমতো চিকিত্সা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। অনেকেই কলকাতায়, এমনকী ভিন্ রাজ্যের হাসপাতালেও রোগীকে নিয়ে চলে যাচ্ছেন।

ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে মেডিক্যালে যাঁরা ভর্তি হচ্ছেন, তাঁদের জন্য পৃথক কোনও ওয়ার্ডও নেই। সকলেই ভর্তি হচ্ছেন সেই মেডিসিন ওয়ার্ডে। এ নিয়েও অনেকের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, ডেঙ্গি মোকাবিলা নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকেও মেদিনীপুর মেডিক্যালের এই বেহাল পরিকাঠামোর বিষয়টি উঠেছে। দিন কয়েক আগে মেদিনীপুর পুরসভায় ওই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে সব কাউন্সিলরদের সঙ্গে কথা বলেন জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা, জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা। কেন মেডিক্যালে এই সময় পৃথক কোনও ‘ফিভার ওয়ার্ড’ খোলা হয়নি, সেই প্রশ্ন সামনে আনেন কাউন্সিলর সৌমেন খান। সৌমেনবাবুর কথায়, “রোজ মেডিক্যালে প্রচুর মানুষ জ্বর নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন। অথচ, জ্বরে আক্রান্তদের চিকিত্সায় তেমন নজর দেওয়া হচ্ছে না। সবই গতানুগতিক চলছে।’’

জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্রবাবুর অবশ্য দাবি, “জ্বরে আক্রান্তদের চিকিত্সার দিকে বাড়তি নজর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। জ্বর নিয়ে কেউ হাসপাতালে এলে সময় নষ্ট না করে তাঁর রক্ত পরীক্ষা করানোর কথা বলা হয়েছে।’’ আর মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের যুক্তি, জ্বর নিয়ে যাঁরা আসছেন, তাঁরা যে সকলেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত তা নয়। তাছাড়া, নতুন ওয়ার্ড খুলে দিলেই তো হল না। সেখানে নার্স, কর্মী দিতে হবে। হাসপাতালে এ সব প্রয়োজনের তুলনায় কমই রয়েছে। মেদিনীপুর মেডিক্যালের সুপার তন্ময়কান্তি পাঁজা বলেন, “পৃথক ওয়ার্ড নেই। তবে আইসোলেশন ওয়ার্ড রয়েছে। শারীরিক পরিস্থিতি দেখে প্রয়োজনে রোগীকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়।’’ সুষ্ঠু চিকিত্সাই যদি মিলছে তাহলে মেদিনীপুর ছেড়ে লোকে কটকে যাচ্ছে কেন? কেন সিনিয়র ডাক্তাররা সময় মতো আসছেন না? সুপার তন্ময়কান্তি পাঁজার জবাব, “বিষয়টি এই শুনলাম। খোঁজখবর নিয়ে দেখছি।’’ হাসপাতালের অন্য এক কর্তার সাফাই, “ভাল চিকিত্‌সার জন্য কেউ কেউ কটকের হাসপাতালে যেতে চান। আমরা তো আর রোগীকে জোর করে আটকে রাখতে পারি না।’’

মেডিক্যালে এসে জ্বরে আক্রান্তদের অনেকে দিনে দিনে শয্যাও পাচ্ছেন না। হাসপাতালের মেঝেতে তাঁদের ঠাঁই হচ্ছে। মেডিক্যালের এক কর্তা মানছেন, এখানে শয্যা সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। এখন এখানে ৬৬০টি শয্যা রয়েছে। অথচ, রোগী ভর্তি থাকেন গড়ে ৭৫০- ৮০০ জন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, হাসপাতালে ভর্তি থাকা এক রোগীর শরীর থেকে মশার মাধ্যমে সেই রোগ অন্যদের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। সব শুনে মেডিক্যালের ওই কর্তার স্বীকারোক্তি, “কিছু ফাঁকফোকর হয়তো রয়েছে। এত বড় হাসপাতালে যা থাকা অনুচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Midnapore Medical College Dengue ডেঙ্গি
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE