এসপি অফিস চত্বরের নিরাপত্তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
দলের কর্মীর বিরুদ্ধে খোদ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ঢুকে পানীয় জলে বিষ মেশানোর অভিযোগ ওঠায় অস্বস্তিতে শাসক দল। ঘটনায় নাম জড়িয়েছে রেলশহরের যুব তৃণমূল নেতা মনোজ থাম্বেরও। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুরের ওই ঘটনায় হাতেনাতে সতীশ গুপ্তকে গ্রেফতার করা হয়। সতীশ খড়্গপুরের তৃণমূল কর্মী। পরে খড়্গপুরের নিমপুরা থেকে পাকড়াও করা হয় মনোজকে। তৃণমূল অবশ্য মনোজ ও সতীশের সঙ্গে যোগ এড়াতে মরিয়া।
তৃণমূলের দাবি, ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। মনোজ আগে যুব তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি ছিলেন। মাস কয়েক আগে দলবিরোধী কাজের অভিযোগে তাঁকে এই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এক সময় তৃণমূল যুবার জেলা সভাপতিও ছিলেন তিনি। সতীশ মনোজের ছায়াসঙ্গী ছিলেন। এই দুই নেতাকর্মী গ্রেফতার হওয়ায় বিড়ম্বনায় পড়েছেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বও। দলের এক সূত্রে খবর, জেলা তৃণমূলের সহ- সভাপতি তথা খড়্গপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান জহরলাল পালের হাত ধরেই জেলা রাজনীতিতে উত্থান মনোজের। এক সময় জহরবাবুর ছায়াসঙ্গী ছিলেন এই যুব তৃণমূল নেতা। জহরবাবুর সঙ্গে একই গাড়িতে করে মাঝেমধ্যেই মেদিনীপুরে আসতেন। দলের জেলা নেতাদের সঙ্গে দেখা করতেন। মাস কয়েক আগেও তিনি জহরবাবুর সঙ্গে মেদিনীপুরে তৃণমূলের জেলা কার্যালয়ে আসেন।
কী বলছেন তৃণমূল নেতৃত্ব?
যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো বলেন, “মনোজ দলের কেউ নয়। এই নামে কাউকে চিনিই না!” তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষও বলেন, “সব ঘটনায় দলকে জড়িয়ে দেওয়া ঠিক নয়। কেউ অপরাধ করে থাকলে শাস্তি পাবে। আইন আইনের পথে চলবে।” একইভাবে, তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “ও (মনোজ) যুব সংগঠনের কোনও দায়িত্বে ছিল না। দলের সঙ্গে ওর কোনও সম্পর্কও নেই।” তৃণমূল যুবার জেলা সভাপতি মনোজ ছিলেন না? এ বার দীনেনবাবুর জবাব, “যুবা এখন আর নেই। যুবা তো যুব-তে মিশে গিয়েছে! আজ নয়, অনেক দিন আগেই!”
আর এ বিষয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট অভিযোগেই দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একজন পুলিশের সদর দফতরে এসে পানীয় জলে বিষ মেশানোর চেষ্টা করেছিল। হাতেনাতে ধরা পড়ে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘পরে ধৃতকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে অন্য একজনের নাম পাওয়া যায়। অন্য একজনকেও গ্রেফতার করা হয়। তদন্তে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্রে আর কেউ যুক্ত রয়েছে কি না দেখা হচ্ছে।’’ প্রাথমিক তদন্তে অবশ্য পুলিশ নিশ্চিত, ধৃত দু’জন মিলে এই কাজের পরিকল্পনা করেননি। আরও কয়েকজন ষড়যন্ত্রে যুক্ত রয়েছে।
তৃণমূলের এক সূত্রে অবশ্য খবর, কয়েক মাস ধরেই পুলিশের একাংশ কর্তার সঙ্গে সম্পর্ক ভাল ছিল না মনোজের। মনোজ সিন্ডিকেট- ব্যবসাও শুরু করেছিলেন বলে খবর। একাধিক ঠিকাদারকে নানা ভাবে তিনি ভয় দেখাচ্ছিলেন বলেও অভিযোগ। পুলিশের একাংশ কর্তা তাঁকে সতর্কও করেন। অবশ্য তারপরেও শোধরাননি যুব তৃণমূলের ওই নেতা। বরং পুলিশ কর্তাদের তিনি জানিয়ে দিতেন, কেউ তাঁর কিছু করতে পারবে না। তিনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘লোক’ ।
পুলিশের এক সূত্রে খবর, রেলশহরের একটি ছিনতাইয়ের ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে জানা গিয়েছিল, মনোজ এক বা একাধিক পুলিশ-কর্তাকে খুন করার ষড়যন্ত্র করছেন। ফোনে আড়ি পেতেই এই তথ্য পায় পুলিশ। অবশ্য সেই ষড়যন্ত্র যে এমনটা হতে পারে, তা বুঝতে পারেনি পুলিশ। তবে মনোজের গতিবিধির উপরে নজর রাখা হচ্ছিল। সপ্তাহ কয়েক আগেই অবশ্য মেদিনীপুরে এসে দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে গিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সী। তাঁর বার্তা ছিল, দলের কেউ কোনও অন্যায় কাজের সঙ্গে জড়িয়ে গেলে তখন দল তাঁর পাশে থাকবে না।
সুব্রত বক্সীর ওই বার্তার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তৃণমূলের এক জেলা নেতা বলেন, “কেউ অন্যায় করলে দল কখনওই তার পাশে দাঁড়াবে না। তিনি যত বড়ই নেতা হন না কেন! মেদিনীপুরের এই ঘটনাই তো তার প্রমাণ!” মেদিনীপুরের এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে জেলা পুলিশের সদর দফতরের নিরাপত্তা নিয়েও। প্রশ্ন উঠছে, জঙ্গলমহলের জেলায় পুলিশের সদর দফতরের নিরাপত্তা এতটা ঠুনকো হল কেন? এই ঘটনায় কি জেলা পুলিশের সদর দফতরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে না? জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের জবাব, “ও (সতীশ) দেখা করার নাম করে অফিসের সামনে আসে। পরে জানা যায়, পানীয় জলে বিষ মেশানোর পরিকল্পনা করেই এখানে এসেছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy