Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
ডেঙ্গি নিয়ে বিপাকে মেডিক্যাল

রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে সপ্তাহ পার

বিশেষ়জ্ঞরা বলছেন, মেডিক্যালে দু’রকম পরীক্ষা হয়— ম্যাক অ্যালাইজা এবং এনএস- ১ অ্যালাইজা। এ দু’টিই নির্ভুল রিপোর্ট দেয়। এর বাইরে র‌্যাপিড কিটের মাধ্যমেও পরীক্ষা করা হয়।

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৭ ০২:১৯
Share: Save:

ডেঙ্গি সচেতনতায় প্রচার চলছে জোরদার। রোগ যাতে না-হয়, মূলত সে দিকেই নজর দিতে চাইছে প্রশাসন। কিন্তু রোগ নির্ণয় বা চিকিৎসার ক্ষেত্রে রয়ে যাচ্ছে গাফিলতি। এমনটাই অভিযোগ পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের বাসিন্দাদের।

এই দুই জেলার মধ্যে একমাত্র মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজেই ডেঙ্গি নির্ণয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু অভিযোগ, সেখানে রক্ত পরীক্ষা করালে রিপোর্ট পেতে লাগে অন্তত এক সপ্তাহ। কখনও কখনও তা-ও মেলে না। ফলে রোগী বা তাঁদের পরিবার ভরসা করেন না, বাইরে থেকে পরীক্ষা করাতে বাধ্য হন।

কিন্তু সেখানেও সমস্যা। বিশেষ়জ্ঞরা বলছেন, মেডিক্যালে দু’রকম পরীক্ষা হয়— ম্যাক অ্যালাইজা এবং এনএস- ১ অ্যালাইজা। এ দু’টিই নির্ভুল রিপোর্ট দেয়। এর বাইরে র‌্যাপিড কিটের মাধ্যমেও পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু তাকে বছর কয়েক আগে বাতিল করেছে রাজ্য সরকার। কারণ এই পরীক্ষার রিপোর্ট সম্পূর্ণ নির্ভুল নয়। ফলে বিপাকে প়ড়ছেন রোগীরাও। জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধানও বলেন, “এখন বিভিন্ন জায়গায় বাজার চলতি এনএস- ১ র‌্যাপিড টেস্ট করা হচ্ছে। এটা ডেঙ্গির নিশ্চিত পরীক্ষা নয়।” এ দিকে চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি আক্রান্ত ব্যক্তি ‘শক সিনড্রোম’-এ পৌঁছে যেতে পারেন দু’তিন দিনের মধ্যেই। ফলে একসপ্তাহ রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করাও সম্ভব নয়। তাতে চিকিৎসা শুরু করতেই দেরি হয়।

মেদিনীপুর মেডিক্যালে এসে এমনই তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে খড়্গপুরের সুভাষপল্লির বাসিন্দা বরুণ সান্যালের। মাস খানেক আগে তাঁর স্ত্রী জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। মেডিক্যালের চিকিৎসকের পরামর্শে রক্ত পরীক্ষার পরামর্শ দেন। বরুণবাবু বলেন, “নমুনা নেওয়ার সময় বলা হয়েছিল, সাত দিন পরে রিপোর্ট পাওয়া যাবে। কিন্তু তা পাইনি।’’ শুধু তাই নয়, বরুণবাবুর অভিযোগ, তাঁকে বলা হয়েছিল রক্ত পরীক্ষার ‘কিট’ ছিল না। তাই পরীক্ষা হয়নি। রক্তের নমুনাও নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফের নমুনা দিতে হবে। যদিও এর পরে আর মেডিক্যালমুখো হননি বরুণবাবু। খড়্গপুরের এক চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন। সৌভাগ্যক্রমে তাঁর স্ত্রীর ডেঙ্গি হয়নি। রোগ সেরেছে।

কিন্তু পশ্চিম মেদিনীপুর ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা দিতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে খড়্গপুরে কয়েকজন ডেঙ্গি আক্রান্ত বলে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য দফতর। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসা নিয়ে ভাবনাচিন্তার প্রয়োজন আছে বলেই মনে করেছেন বাসিন্দারা। পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার সাফাই, “রিপোর্ট দিতে খুব একটা দেরি হয় বলে শুনিনি! কিট না থাকলে হয়তো একটু সমস্যা হয়। কিন্তু এখন কিটের সমস্যা নেই।”

তবে বাস্তবটা ভিন্ন। সে কথা মানছেন জেলার অন্য এক স্বাস্থ্যকর্তা। তাঁর স্বীকারোক্তি, “মেডিক্যালে এই পরীক্ষা হয় নিখরচায়। একটি কিটে প্রায় ৯০ জনের পরীক্ষা হয়। ফলে, প্রয়োজনীয় সংখ্যক নমুনা না এলে পরীক্ষা হয় না। তাই একটু সমস্যা হয়।” ডেঙ্গি পরীক্ষা হয় মেডিক্যালের মাইক্রো বায়োলজি বিভাগে। কিটের দাম প্রায় ৬০হাজার টাকা। তাই এই দেরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE