Advertisement
২১ মে ২০২৪
তমলুকে গৃহকর্তার মাথায় ভোজালির কোপ দিয়ে লুঠপাটের নালিশ

রাতে তালা ভেঙে তাণ্ডব দুষ্কৃতীদের

দুষ্কৃতীরাজ চলছেই! মাস কয়েক আগেই তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লক অফিসের কাছে পাইকপাড়ি গ্রামে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে হানা দেয় সশস্ত্র দুষ্কৃতী দল।

লন্ডভন্ড বাড়ি। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

লন্ডভন্ড বাড়ি। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৩৪
Share: Save:

দুষ্কৃতীরাজ চলছেই!

মাস কয়েক আগেই তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লক অফিসের কাছে পাইকপাড়ি গ্রামে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে হানা দেয় সশস্ত্র দুষ্কৃতী দল। অভিযোগ, শিশুর মাথায় ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে লুঠপাট চালিয়ে পালায় তারা। তার রেশ এখনও কাটেনি। ফের শনিবার গভীর রাতে তমলুকের কাপাসবেড়িয়ায় গৃহকর্তার মাথায় ভোজালির কোপ মেরে ডাকাতির অভিযোগ উঠল। ভোজালির আঘাতে আহত হন বাড়ির মালিক সঞ্জিত সিংহ। ঘটনায় প্রশ্নের মুখে
শহরের নিরাপত্তা।

তমলুক স্টেশনের কাছেই ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাপাসএড়িয়ায় বাড়ি পেশায় রাজমিস্ত্রি সঞ্জিতবাবুর। বাড়িতে স্ত্রী, দুই ছেলে ছাড়াও রয়েছেন বৃদ্ধা মা। সঞ্জিতবাবুর মা আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ায় এ দিন ছিলেন না। অভিযোগ, রাত একটা নাগাদ ছ’জনের সশস্ত্র দুষ্কৃতীর দল দরজার তালা ভেঙে বাড়িতে ঢোকে। বাড়ির একটি ঘরে ঘুমিয়ে ছিল সঞ্জিতবাবুর দুই ছেলে সৌরভ ও গৌরব। পাশের ঘরেই শুয়েছিলেন সঞ্জিতবাবু ও তাঁর স্ত্রী গায়ত্রীদেবী। সৌরভ কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। গৌরব স্কুলের ছাত্র।

অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা প্রথমেই সৌরভ আর গৌরবের মাথায় ভোজালি ঠেকিয়ে জোর করে পাশের বাবা-মার ঘরে নিয়ে যায়। ওই ঘরে সঞ্জিতবাবু, গায়ত্রীদেবী-সহ চারজনকে খাটের সঙ্গে গামছা ও শাড়ি দিয়ে বেঁধে দেয়। অভিযোগ, চিৎকার শুরু করলে দুষ্কৃতীরা সঞ্জিতবাবুর মাথায় ভোজালির কোপ মারে। এরপরই শুরু হয় লুঠপাট।

অভিযোগ, প্রথমেই ডাকাতেরা তিনটি মোবাইল ফোন লুঠ করে নেয়। সঞ্জিতবাবুর কাছে তারা আলমারির চাবি ও এটিএম কার্ড চায়। চাবি না দিলে দুই ছেলের মাথায় ভোজালির কোপ মারার হুমকি দেয় তারা। বাধ্য হয়ে সঞ্জিতবাবু চাবি কোথায় আছে বলে দেন। সঞ্জিতবাবুর দাবি, দুষ্কৃতীরা আলমারি থেকে আট ভরি সোনার গয়না ও নগদ ৮ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। সঞ্জিতবাবুর মাথা থেকে রক্ত ঝরতে শুরু করায় দুষ্কৃতীরা গামছা বেঁধে দেয়। মেঝে থেকেও রক্তের দাগ মুছতে জল ঢেলে দেয় তারা।

ঘণ্টাখানেক তাণ্ডবের পর পালায় দুষ্কৃতীরা। কোনওরকমে গামছার বাঁধন খুলে স্থানীয়দের ডাকেন সঞ্জিতবাবু। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। সঞ্জিতবাবুর অভিযোগ, ‘‘ছ’জনের ডাকাত দলের প্রত্যেকের মুখ গামছা বাঁধা ছিল। সকলের কাছেই ধারালো অস্ত্র ছিল। রাত একটা নাগাদ বাড়িতে ঢুকে আমাদের চারজনকেই খাটের সঙ্গে বেঁধে দেয়। তারা আমাদের তিনটি মোবাইলও ছিনিয়ে নেয়।’’

পুলিশ ও পরিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়ি মেরামতির জন্য সঞ্জিতবাবুর স্ত্রী একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। দিনকয়েক আগে ব্যাঙ্কে অপেক্ষার সময় এক মহিলার সঙ্গে কথা বলতে বলতে ওই টাকার বিষয়টি জানান তিনি। সেই সূত্র ধরেও দুষ্কৃতীরা হানা দিয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান। সেই কারণেই হয়তো দুষ্কৃতীরা এটিএম কার্ড ও পিন নম্বর চেয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দা চৈতন্য ফদিকার ও বসুদাম ফদিকার বলেন, ‘‘গতকাল রাতে ঘটনার সময় আমরা কিছু টের পাইনি। আগে এ ভাবে ডাকাতদল হানা দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। চিন্তায় রয়েছি।’’

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতীদের ধরতে তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘তমলুকের ওই বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় আমরা কিছু সূত্র পেয়েছি। ঘটনায় জড়িতরা দ্রুত ধরা পড়বে বলে আশা করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Miscreant Rampage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE