Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

ঝাড়গ্রামে মৃত উপভোক্তার নামে বরাদ্দ বাড়ির টাকা

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় এমনই আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠল ঝাড়গ্রামের চন্দ্রি পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৩০
Share: Save:

ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট দূরঅস্ত, মারাই গিয়েছেন বছর চারেক আগে। তবু এমন উপভোক্তার নামেই বরাদ্দ হয়েছে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনার টাকা। শুধু তাই নয়, সেই টাকা জমাও পড়েছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে! যদিও সেটি অন্যের।

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় এমনই আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠল ঝাড়গ্রামের চন্দ্রি পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। বিষয়টি সামনে এসেছে মৃতার ছেলে ঝাড়গ্রামের জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করার পর। তাঁর অভিযোগ, মায়ের নামে বরাদ্দ টাকা অন্য ব্যক্তি ব্যাঙ্ক থেকে তুলে নিয়েছেন। অথচ প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনার উপভোক্তা তালিকায় ওই ব্যক্তি বা তাঁর স্ত্রীর নামই নেই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাল ঝাড়গ্রাম জেলা সফরে আসছেন। তার আগে এমন অভিযোগ নিয়ে অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে জেলা প্রশাসন। তড়িঘড়ি শুরু হয়েছে প্রশাসনিক তদন্ত।

ঝাড়গ্রামের বিডিও সুদর্শন চৌধুরী বলেন, “পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এটা একেবারেই অনভিপ্রেত। কেউ জড়িত থাকলে রেয়াত করা হবে না। আইনানুগ পদক্ষেপ করা হবে।” জেলাশাসক আর অর্জুন বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।”

চন্দ্রি পঞ্চায়েতের কুমারডোবা গ্রামের বাসিন্দা রুবি সিটের মৃত্যু হয় ২০১৪ সালের ২৬ এপ্রিল। অথচ ২০১৭-’১৮ অর্থ বর্ষে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনায় বাড়ি প্রাপকের তালিকায় নাম উঠে গিয়েছে রুবি দেবীর। তাঁর ছেলে বসন্ত সিট বলেন, ‘‘মৃত মায়ের নামে বাড়ি বরাদ্দ হয়েছে শুনে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। পরে ব্লক অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, মায়ের নামে টাকাও অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে গিয়েছে। অথচ মায়ের কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টই ছিল না।”

ঝাড়গ্রামের ব্লক অফিসের নথি অনুযায়ী, ২০১৭-’১৮ অর্থবর্ষে বাড়ি তৈরির জন্য রুবিদেবীর অ্যাকাউন্টে গত নভেম্বরে প্রথম কিস্তির ৪২ হাজার টাকা জমা পড়েছে। সরকারি নথি অনুসারে, রুবিদেবীর বাড়ির ভিত তৈরিও হয়ে গিয়েছে। বসন্তবাবুর দাবি, ‘‘মায়ের অ্যাকাউন্ট বলে ব্যাঙ্কে যে নম্বরটি পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ দিয়েছেন, তা মায়ের নয়।’’

ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই অ্যাকাউন্টটি আশিস শিট এবং সুমতি শিটের জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট। কুমারডোবা গ্রামেরই বাসিন্দা আশিসবাবুকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘বাড়ির জন্য পঞ্চায়েতে আবেদন করিনি।” তা হলে টাকা পেয়ে সেই টাকা তুলেছেন কেন? এ প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি তাঁর কাছে।

এদিকে, উপভোক্তা তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও চন্দ্রি পঞ্চায়েতেরই রুপালি দলুই, নকুল বাগ বাড়ি তৈরির টাকা পাননি। অথচ ব্লক প্রশাসনের নথি অনুযায়ী গত অক্টোবরেই রুপালিদেবী এবং নভেম্বরে নকুলবাবুর অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ, রুপালিদেবী ও নকুলবাবুর নামে বরাদ্দ টাকাও অন্য অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে। চন্দ্রি পঞ্চায়েতের প্রধান অলকা দাসের দাবি, “কী ভাবে এমন হল, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে যাঁরা টাকা পেয়েছেন, তাঁরাও বাড়ি পাওয়ার যোগ্য।”

ব্যাঙ্কের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ও ব্লক প্রশাসনিক স্তর থেকে যে অ্যাকাউন্ট নম্বর পাঠানো হয়, সেই অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করে দেওয়া হয়। উপভোক্তা আসল কী নকল সেটা খতিয়ে দেখা ব্যাঙ্কের কাজ নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE