Advertisement
E-Paper

কর্মী নেই, ধুলো জমছে গ্রন্থাগারে

একজন গ্রন্থাগারিকের অবসর মানে কম করে দু’টি গ্রন্থাগার বন্ধ। কর্মী সঙ্কটের জেরে পরিস্থিতি এমন জায়গাতেই পৌঁছেছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। কর্মী নিয়োগ না হলে আগামী তিন বছরের মধ্যে জেলার প্রায় সমস্ত গ্রামীণ গ্রন্থাগার বন্ধ হয়ে যাবে বলেই আশঙ্কা। ইতিমধ্যে জেলায় ১৭টি গ্রামীণ গ্রন্থাগার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আর যেগুলি চলছে, তা-ও অস্থায়ী কর্মীদের দিয়ে।

সুমন ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:২৪
তালাবন্ধ গ্রন্থাগার। মেদিনীপুরে অরবিন্দ স্টেডিয়ামের সামনে।

তালাবন্ধ গ্রন্থাগার। মেদিনীপুরে অরবিন্দ স্টেডিয়ামের সামনে।

একজন গ্রন্থাগারিকের অবসর মানে কম করে দু’টি গ্রন্থাগার বন্ধ। কর্মী সঙ্কটের জেরে পরিস্থিতি এমন জায়গাতেই পৌঁছেছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। কর্মী নিয়োগ না হলে আগামী তিন বছরের মধ্যে জেলার প্রায় সমস্ত গ্রামীণ গ্রন্থাগার বন্ধ হয়ে যাবে বলেই আশঙ্কা।

ইতিমধ্যে জেলায় ১৭টি গ্রামীণ গ্রন্থাগার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আর যেগুলি চলছে, তা-ও অস্থায়ী কর্মীদের দিয়ে। ফলে, কোথাও সম্পাহে দু’দিন, কোথাও তিনদিন গ্রন্থাগার খোলা থাকছে। চলতি বছরেই আরও ১৪ জন কর্মী অবসর নেবেন। ফলে, আরও কিছু গ্রন্থাগারের ঝাঁপ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জেলায় গ্রন্থাগার রয়েছে ১৫৮টি। অথচ কর্মী মাত্র ১৩৮ জন। এই হিসেব অনুযায়ী গ্রন্থাগার পিছু এক জন করে কর্মী থাকলেও ২০টি গ্রন্থাগার কর্মী শূন্য। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, জেলা গ্রন্থাগারে ১০ জন কর্মী থাকার কথা। রয়েছেন ৩ জন। ৭টি পদ শূন্য। শহর গ্রন্থাগারে ৪ জন করে কর্মী থাকার কথা। সেই মতো ১৫টি শহর গ্রন্থাগারে ৬০ জন কর্মী প্রয়োজন। রয়েছেন মাত্র ১৯ জন।

অথচ অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে না, এমন নয়। গত চার বছরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা গ্রন্থাগার ভবন নির্মাণ, বই কেনা ও বই রাখার আসবাব কিনতে সাড়ে তিন কোটি টাকারও বেশি পেয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, কর্মীই যদি না থাকে, তাহলে এ সব করে লাভ কী! পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক ইন্দ্রজিত্‌ পানও মানছেন, “কর্মী সঙ্কটের বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগের। দ্রুত কর্মী নিয়োগ না হলে ধীরে ধীরে অনেক গ্রন্থাগার বন্ধ হয়ে যাবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি।’’

কর্মী সঙ্কটে ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে ঝাড়গ্রামের বহড়াদাড়ি বাণী বিদ্যাপীঠ, চর্চিতা নবারুণ পাঠাগার, লালডাঙা ফণীন্দ্র স্মৃতি সংঘ, হরপড়িয়া গ্রামীণ গ্রন্থাগার, মোহাড়ের সৃজনী পাঠাগার, দাঁতনের অগ্নিবীণা পল্লি উন্নয়ন পাঠাগার, নহপাড় পল্লি উন্নয়ন পাঠাগার, কেশিয়াড়ির শ্রীনিবাস স্মৃতি পাঠাগার, কেশপুরের ধলহারা পাগলিমাতা গ্রন্থাগার-সহ একের পর পাঠাগার। কেশিয়াড়ির শহিদ স্মৃতি পাঠাগার বা কেশপুরের সুকান্ত স্মৃতি পাঠাগারের মতো কিছু গ্রন্থাগার আবার সপ্তাহে দু’-তিন দিন খোলা থাকে। মেদিনীপুর সদর ব্লকের নয়াগ্রাম মুকুল সংঘ পাঠাগারও কর্মী শূন্য। পরিচালন সমিতিই কোনওমতেই তা খুলে রাখে। গ্রন্থাগার পরিচালন সমিতির সম্পাদক টোটন করের কথায়, ‘‘সাধারণ ছাত্রছাত্রী থেকে এলাকার মানুষ, দিনে ১৫-২০ জন গ্রন্থাগারে আসেন। খবরের কাগজ, গল্পের বই পড়েন। তাই কষ্ট করে নিজেরাই চালাচ্ছি।’’

এক একজন গ্রন্থাগারিকের অধীনে ২-৩টি গ্রন্থাগারের দায়িত্ব থাকে। জেলা গ্রন্থাগার, শালবনি গ্রামীণ গ্রন্থাগার ও ভাদুতলা গ্রন্থাগারের দায়িত্বে থাকা রবিশঙ্কর শেঠের কথায়, “কী করে বোঝাব, এটা অসম্ভব। তবু করতে হচ্ছে।’’ শীঘ্রই বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম গড়বেতা দেশপ্রাণ গ্রন্থাগারের। গ্রন্থাগারিক মনোরঞ্জন দে-র কথায়, ‘‘চারজনের পরিবর্তে এখন দু’জন রয়েছি। চলতি বছরেই দু’জনে অবসর নেব। তখন হয়তো এই গ্রন্থাগারও বন্ধ হয়ে যাবে।’’

গ্রন্থাগার বিভাগের এক আধিকারিক মনে করিয়ে দিলেন, রাজ্য জুড়েই অবস্থাটা এমন। রাজ্যে মোট গ্রন্থাগারের সংখ্যা ২৪৬০টি। তার মধ্যে কর্মিহীন গ্রন্থাগারের সংখ্যা ৩২৭টি। অনুমোদিত পদের সংখ্যা ৫৫২০, সেখানে শূন্যপদ রয়েছে ২৪৪৩। তাই সর্বত্রই গ্রন্থাগারগুলি খুঁড়িয়েই চলছে।

libraries midnapore specialstory
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy