Advertisement
E-Paper

জমি গায়েব, এ তো ভেড়ি!

চাষের জমিতে জোর করে ভেড়ি করা নিয়ে গোলমালেই খুন হন ভগবানপুরের তৃণমূল নেতা নান্টু প্রধান। বছর ঘুরেছে। চাষের জমিতে ভেড়ির দাপাদাপিও চলছে সমানে। সেচের জল চুরির অভিযোগও রয়েছে ভেড়ির মালিকদের বিরুদ্ধে। জেলা ঘুরে দেখল আনন্দবাজার।এমনকী চাষের জমিকে জোর করে ভেড়ি করার পিছনে যারা রয়েছে, তাদের পিছনে রাজনৈতিক দলের (বিশেষত শাসক দলের) মদত রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

দিগন্ত মান্না

শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৩৯
গ্রাফিক: জিয়া হক।

গ্রাফিক: জিয়া হক।

জমি তুমি কার। নিশ্চিত উত্তর চাষির।

অথচ আপাত নিশ্চিত এই বিষয়টা নিয়েই অনিশ্চয়তার আশঙ্কায় দিন গুনছেন পূর্ব মেদিনীপুরের রূপনারায়ণ নদ সংলগ্ন কোলাঘাট ও পাঁশকুড়ার বিস্তীর্ণ এলাকার চাষিরা। গত পাঁচ বছর ধরে কোলাঘাট ও পাঁশকুড়া এলাকার বিভিন্ন এলাকায় চাষের জমিতে তৈরি হয়েছে মাছের ভেড়ি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভেড়ি তৈরিতে চাষির আপত্তি ধোপে টেকেনি। বার বারই অভিযোগ উঠেছে, এর পিছনে রয়েছে টাকার প্রলোভন থেকে পারিপাশ্বিক নানারকম চাপ। এমনকী চাষের জমিকে জোর করে ভেড়ি করার পিছনে যারা রয়েছে, তাদের পিছনে রাজনৈতিক দলের (বিশেষত শাসক দলের) মদত রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর হয়ে দাঁড়িয়েছে যে সম্প্রতি মাছের ভেড়ি নির্মাণকে কেন্দ্র করে কোলাঘাটের চাপদা এলাকায় আন্দোলনে নেমেছেন কৃষকরা। প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে আপাতত ওই এলাকায় বন্ধ রয়েছে ভেড়ি নির্মাণের কাজ। কিন্তু অবিরাম প্রলোভন ও ক্ষমতা প্রয়োগের কাছে কতদিন ক্ষুদ্র চাষিরা নিজের চাষের জমি ধরে রাখতে পারবেন তা নিয়ে ঘোর সংশয় তৈরি হয়েছে।

কোলাঘাট ব্লকের ভোগপুর, দেড়িয়াচক, সাগরবাড় বা পাঁশকুড়ার খন্ডখোলা, রঘুনাথবাড়ি ও পুরুষোত্তমপুর—সর্বত্রই এক ছবি। ওই সব এলাকায় বছর চারেক আগে তৈরি হয়েছে একাধিক ভেড়ি। মূলত ‘অলাভজনক’ ধান চাষকে হাতিয়ার করে মাঠে নেমেছেন ভেড়ি মালিকেরা। বছরে বিঘে প্রতি ৩০ থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চাষিদের জমির দখল নিচ্ছেন তাঁরা। জমি নেওয়া পদ্ধাতি নিয়েও নানা অভিযোগ উঠেছে। কোনও ক্ষুদ্রচাষি জমি দিতে না চাইলে তাঁকে জোর করা হয় না। কিন্তু ওই চাষির জমির চারপাশের জমিতে ভেড়ি নির্মাণের ফলে যখন ওই চাষের জমি নিকাশির অভাবে বেহাল হয়ে পড়ে তখন সেই চাষির আর ভেড়ির মালিককে জমি ছেড়ে না দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। আর এ ভাবেই একের পর এক জমি ‘দখল’ হয়ে যাচ্ছে ভেড়ির মালিকদের হাতে।

তবে ইতিমধ্যেই কৃষক সংগ্রাম পরিষদ বিষয়টি নিয়ে সরব হওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। চাষের জমি দখল করে ভেড়ি তৈরির অভিযোগ উঠলে এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্য ভূমি দফতরের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান অর্ধেন্দু মাইতি।

পাশাপাশি, চাষের জল চুরির অভিযোগ উঠেছে ভেড়ি মালিকদের বিরুদ্ধে। প্রতি বছর এই সময় রূপনারায়ণের জোয়ারের মিঠে জল দেহাটি খাল দিয়ে টোপা ড্রেনেজ খাল হয়ে টোপা খাল পর্যন্ত আসত। জোয়ারের জল খালে ঢুকে যাওয়ার পর দেহাটি লকগেটের শাটার নামিয়ে দিলে খালগুলিতে মজুত থাকত জোয়ারের জল। সেই জলে কোলাঘাট ব্লকের বৃন্দাবনচক, পুলশিটা, সিদ্ধা ১ ও ২ পঞ্চায়েত এলাকার শতাধিক মৌজায় বোরো চাষ করতেন চাষিরা। এক সময় ওই জল পাঁশকুড়ার টোপা খাল পর্যন্ত পৌঁছত। ফলে পাঁশকুড়া ১ ও কেশাপাট এলাকার বোরো চাষও ওই জোয়ারের জলেই হয়ে যেত। বেশ কয়েক বছর ধরে কোলাঘাট এলাকায় দেহাটি ও টোপা ড্রেনেজ খালের দুই ধরে চাষের জমি নষ্ট করে তৈরি হয়েছে অসংখ্য ভেড়ি। ভেড়িগুলির জলের চাহিদা মেটাতে ভেড়ির মালিকরা উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন পাম্পের সাহায্যে খালগুলি থেকে জোয়ারের জল তুলে নিচ্ছে। আর তার ফলেই খাল থেকে বোরোচাষের জন্য প্রয়োজনীয় জল মিলছে না বলে অভিযোগ চাষিদের।

ইতিমধ্যেই কোলাঘাটের বিডিওকে লিখিতভাবে সমস্যার কথা জানিয়েছে কৃষক সংগ্রাম পরিষদ। সংগঠনের সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়ক বলেন, ‘‘আমরা বিডিওকে সমস্যা জানিয়েছি। প্রশাসন ভেড়িতে জল তোলা বন্ধ না করলে এলাকায় বোরো চাষ মুখ থুবড়ে পড়বে। আমরা চাই প্রশাসন সমস্যার সমাধানে কড়া পদক্ষেপ করুক।’’সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, ‘‘চাষিদের অভিযোগ খোঁজ নিয়ে দেখব। প্রয়োজনে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

Land Kolaghat কোলাঘাট
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy