Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

কোটালপাড়ায় পুর-পরিষেবা সেই আঁধারেই

পুরসভা হওয়ার পর ২২ বছর কেটে গিয়েছে। অভিযোগ, আজও অমিল শহরের নূন্যতম নাগরিক পরিষেবা। শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতিবারই ভোটের আগে ঝুড়ি ঝুড়ি প্রতিশ্রুতির বুলি আওড়ান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। কিন্তু আজও শহরের নিকাশি বেহাল। জীর্ণ অধিকাংশ রাস্তাই। এমনকী শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কোটাল পাড়ার প্রায় ৭৫টি পরিবারে এখনও বিদ্যুৎ আসেনি। অন্ধকারে সমস্যায় দিন কাটান প্রায় হাজার খানেক মানুষ।

ভাঙা পানীয় জলের ট্যাপ কল। বেহাল নিকাশি নালা। শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কোটালপাড়ার পুর পরিষেবার চিত্রটা এমনই।  — নিজস্ব চিত্র।

ভাঙা পানীয় জলের ট্যাপ কল। বেহাল নিকাশি নালা। শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কোটালপাড়ার পুর পরিষেবার চিত্রটা এমনই। — নিজস্ব চিত্র।

কৌশিক মিশ্র
এগরা শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৩৬
Share: Save:

পুরসভা হওয়ার পর ২২ বছর কেটে গিয়েছে। অভিযোগ, আজও অমিল শহরের নূন্যতম নাগরিক পরিষেবা।

শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতিবারই ভোটের আগে ঝুড়ি ঝুড়ি প্রতিশ্রুতির বুলি আওড়ান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। কিন্তু আজও শহরের নিকাশি বেহাল। জীর্ণ অধিকাংশ রাস্তাই। এমনকী শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কোটাল পাড়ার প্রায় ৭৫টি পরিবারে এখনও বিদ্যুৎ আসেনি। অন্ধকারে সমস্যায় দিন কাটান প্রায় হাজার খানেক মানুষ।

১৯৯৩ সালে এগরা পুরসভা গড়ে ওঠে। কিন্তু আজও বৃষ্টি হলেই হাঁটুজলে দুর্ভোগে পড়েন শহরের বাসিন্দারা। শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের একাংশে অনুন্নয়নের চিত্রটা আরও বেআব্রু। এগরা সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডের অদূরে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত কোটালপাড়ার বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকায় পানীয় জলের কয়েকটি ট্যাপ কল ছাড়া আর কিছুই নেই। বর্ষাকালে মাটির রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। কোথাও কোথাও রাস্তায় মোরাম পড়লেও তা অতি সঙ্কীর্ণ। কোটালপাড়া, রাউলপাড়া ও মাইতিপাড়ার বেশ কিছু ঘরে এখনও আলো জ্বলে না। বছর দু’য়েক আগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি বসানো হলেও আসেনি বিদ্যুৎ। কোটালপাড়ার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ কোটালের অভিযোগ, “বৃষ্টির সময় রাস্তার অবস্থা এমন হয়, যে চলাফেরাই দুষ্কর হয়ে ওঠে। নিকাশি ব্যবস্থা না থাকায় এলাকায় জল দাঁড়িয়ে যায়। তখন রাস্তাঘাট ও পুকুর এক হয়ে যায়।” স্থানীয় বাসিন্দা প্রৌঢ় সত্যেন্দ্র রাউল বলেন, “পঞ্চায়েতের সময়েই অবস্থা ভাল ছিল। না হলে পুরসভা হওয়ার এত বছর পরেও কখনও কাঁচা রাস্তায় হাঁটতে হয়!” এলাকার অপর এক বাসিন্দা সমর চক্রবর্তী বলেন, “পরিষেবা নিয়ে পুরসভায় আবেদন করেও কোনও লাভ হয়নি। ঘেরাও করেও ফল মেলেনি।”

৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলরও তৃণমূলের। তাহলেও কেন উন্নয়নে ব্রাত্য এই এলাকা? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতা বলেন, “দলীয় স্তরে ওই এলাকার উন্নয়ন নিয়ে একাধিকবার আলোচনা করেছি। কিন্তু এ বিষয়ে কেন পুরসভা কিছু ভাবেনি, তার কোনও উত্তর পাইনি।” এলাকায় সর্বত্র পানীয় জলের ট্যাপ নেই। জলের পাইপ থেকেই অস্বাস্থ্যকর ভাবে পানীয় জল নেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কোটালপাড়া এলাকার বাসিন্দা কাজল জানা বলেন, “প্রতিবার পুরভোটের আগেই নেতারা এসে বলেন, এটা করে দেবেন, ওটা করে দেবেন। কিন্তু কিছুই হয় না। বর্ষাকালে কোনও প্রসূতি বা কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে এলাকায় গাড়ি ঢুকতে না পারায় খুব সমস্যা হয়।”

কোটালপাড়া এলাকার প্রায় ৭৫টি পরিবারে বিদ্যুৎ নেই। হুকিং করেই অনেকে ঘরে আলো জ্বালাচ্ছেন বলে অভিযোগ। তারপরেও পুরসভার টনক নড়েনি। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, “আমরা প্রায় প্রত্যেকেই বিদ্যুতের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু বছরের পর বছর কেটে গেলেও পুরসভা এখানে বিদ্যুৎ আনতে উদ্যোগী হয়নি।” এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলর শেখ হাফিজুদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, অসুস্থতার কারণে তিনি ওড়িশায় গিয়েছেন। কাউন্সিলরের এক আত্মীয় লিয়াকত মল্লিক বলেন, “এলাকাটি বড় হওয়ায় সব কাজ করা যায়নি। তবু ওই এলাকার কয়েকটি রাস্তায় মোরাম দেওয়ার কাজ হয়েছিল। কিন্তু জল প্রকল্পের কাজের জন্য রাস্তা খোঁড়ায় ফের রাস্তা খারাপ হয়ে যায়।”

৮ নম্বর ওয়ার্ডের কোটালপাড়া-মাইতিপাড়ায় অনুন্নয়নের কথা মানছেন এগরা পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান স্বপন নায়কও। তিনি বলেন, ‘‘উন্নয়নের দিক থেকে ওই এলাকা এগরা পুরসভার মধ্যে পিছিয়ে রয়েছে। ওই এলাকায় বিদ্যুৎ, রাস্তা ও নিকাশি সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে।’’ তাঁর দাবি, কংগ্রেস পুরবোর্ডে থাকার সময় সে ভাবে অর্থ আসেনি। পরে কিছুটা টাকা আসায় উন্নয়নের চেষ্টা করেছি। এগরা পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের সদস্য তথা স্থানীয় বিধায়ক সমরেশ দাস বলেন, ‘‘২০০৯ সালে পুরবোর্ড গঠিত হলেও তখন রাজ্যের বাম সরকার টাকা না দেওয়ায় সমস্যা হত। ২০১১ সালে রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর পুরসভাকে টাকা দেওয়া হয়। সেই টাকাতেই উন্নয়নের কাজ চলছে। মহকুমাশাসকের সঙ্গে ওই এলাকার উন্নয়নের বিষয়েও আলোচনা করব।’’ এগরা পুরসভার প্রশাসক তথা মহকুমাশাসক অসীমকুমার বিশ্বাস বলেন, “ওই এলাকার অনুন্নয়নের বিষয়ে শুনেছি। আইন মেনে সব কিছু খতিয়ে দেখে যদি কিছু করা
যায় দেখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE