Advertisement
০৪ মে ২০২৪

সাগরে ছাত্রী খুনে অভিযুক্ত ধৃত নন্দীগ্রামে

সাগরে ছাত্রী ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শুভদীপ ও তার সঙ্গী গ্রেফতার হল নন্দীগ্রাম থেকে। বৃহস্পতিবার সকালে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামের সোনাচূড়া এলাকা থেকে তাদের ধরে পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক ও সাগর শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৬ ০১:০৪
Share: Save:

সাগরে ছাত্রী ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শুভদীপ ও তার সঙ্গী গ্রেফতার হল নন্দীগ্রাম থেকে। বৃহস্পতিবার সকালে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামের সোনাচূড়া এলাকা থেকে তাদের ধরে পুলিশ। যে বাড়িতে শুভদীপ প্রধান ও তার মামাতো ভাই অমিত সর্দার আশ্রয় নিয়েছিল, সেটি এক তৃণমূল কর্মীর। জানা গিয়েছে, অশ্বিনী পাত্র নামে ওই তৃণমূল কর্মী শুভদীপের সম্পর্কিত কাকা। মঙ্গলবার দুপুরেই তারা ওই বাড়িতে এসে উঠেছিল।

এ দিকে, মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতারের দাবিতে মেয়েটির দেহ সৎকার না করে সারা দিন প্রতিবাদ জানায় মেয়েটির পরিবার ও গ্রামবাসীরা। তাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন ‘আক্রান্ত আমরা’র তরফে মইদুল ইসলাম এবং কাকদ্বীপের ধর্ষিতা নিহত ছাত্রীর বাবা-মা। শুভদীপকে গ্রেফতারের খবর পরিবারকে দেওয়ার পরে রাতে দেহ সৎকার করা হয়।

এ দিনই সোনাচূড়া থেকে শুভদীপকে আনার জন্য রওনা হন সাগর থানার অফিসারেরা। শুভদীপকে জেরা করে ঘটনার পুনর্গঠনের উপরে জোর দিচ্ছেন তদন্তকারীরা।

বুধবার রাত আড়াইটে নাগাদ দেহ ডায়মন্ড হারবার থেকে সাগরে পৌঁছয়। এ দিন দেহ বরফ দিয়ে মুড়ে রেখে দেওয়া হয় সারা দিন। প্রতিবাদের সময়ে পুলিশের কাছে ময়না-তদন্তের রিপোর্টও দেখানোর দাবি জানান গ্রামবাসীরা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মেয়েটির যৌনাঙ্গ এবং স্তনে আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। একই সঙ্গে রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, মৃত্যু ফাঁস লেগেই হয়েছে।

পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরে ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের মধ্যে দু’জনকে নন্দীগ্রামের সোনাচুড়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সাগর এলাকায় দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে মোটর বাইকে চাপিয়ে গঙ্গাসাগরে বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিল অভিযুক্ত যুবকেরা। পরে ওই স্কুল ছাত্রীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয় সাগর থানায়।

পুলিশের দাবি, মঙ্গলবার ছাত্রীর দেহ উদ্ধারের পরেই জলপথে পূর্ব মেদিনীপুরে চলে আসে শুভদীপ ও অমিত। গোপনসূত্রে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে নন্দীগ্রাম থানার পুলিশ গিয়ে ওই দুই যুবককে গ্রেফতার করে।

অশ্বিনীবাবুর অবশ্য দাবি করেছেন, এই ঘটনার কথা তাঁর জানা ছিল না। জানা মাত্রই পুলিশে খবর দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘শুভদীপ ও অমিত আমাদের আত্মীয়। এর আগেও একাধিকবার আমাদের বাড়িতে এসেছে। মঙ্গলবার দুপুরেও এসেছিল। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে সাগরে ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় এই দু’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার কথা আজই জানতে পেরেছি।’’

এ দিকে, ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগের ঘটনায় অভিযুক্তেরা নন্দীগ্রামে তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে আশ্রয় নেওয়ায় সরব বিরোধীরা। সিপিআইয়ের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্য তথা নন্দীগ্রাম বিধানসভার জোট প্রার্থী কবীর মহম্মদের অভিযোগ, ‘‘অভিযুক্তেরা নন্দীগ্রামকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ভেবে এখানে দূর সম্পর্কের ওই আত্মীয় বাড়িতে উঠেছিল। ভেবেছিল, তৃণমূল নেতার কাছে আশ্রয় নিলে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করবে না। তবে নির্বাচন কমিশনের চাপেই পুলিশ তাদের ধরতে বাধ্য হয়েছে।’’

নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য বিরোধীদের তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেছে। নন্দীগ্রাম ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি মেঘনাদ পাল বলেন, ‘‘সাগরের ওই দুই যুবক নন্দীগ্রামে তাঁদের আত্মীয় অশ্বিনীবাবুর বাড়িতে এসেছিল। অশ্বিনীবাবু আমাদের দলের কর্মী। তবে অভিযুক্তদের আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপার নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nandigram student murder Sagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE