Advertisement
E-Paper

বৃত্তি জুটছে না, আঁধারে তফসিলি পড়ুয়ারা

বছরে একাধিক মেলা-উৎসবের জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়। ক্লাবের দান-খয়রাতিতেও অভাব হয় না টাকার। অথচ তফসিলি জাতি ও উপজাতির ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তির টাকা বরাদ্দের ক্ষেত্রেই কৃপণ রাজ্য, এমনই অভিযোগ করছে বিরোধীরা।

সুমন ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৬ ০০:৫৪

বছরে একাধিক মেলা-উৎসবের জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়। ক্লাবের দান-খয়রাতিতেও অভাব হয় না টাকার। অথচ তফসিলি জাতি ও উপজাতির ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তির টাকা বরাদ্দের ক্ষেত্রেই কৃপণ রাজ্য, এমনই অভিযোগ করছে বিরোধীরা।

শুধু বৃত্তির টাকা নয়, বহু স্কুলে তফসিলি ছাত্রছাত্রীদের হস্টেলের জন্য গত অর্থবর্ষে বরাদ্দ অর্থ এখনও মেলেনি। টাকা না মেলায় নুন আনতে পান্তা ফুরনোর অবস্থা স্কুলগুলির। নিয়মমাফিক প্রতি মাসে পড়ুয়াদের বৃত্তি ও হস্টেলের খরচের টাকা পাওয়ার কথা। পড়ুয়াদের টাকা দিয়েই হস্টেলে রান্নার জন্য ভূষিমাল সামগ্রী, জ্বালানির কাঠ কেনা হয়। কিন্তু টাকা না আসায় বিপাকে হস্টেল কর্তৃপক্ষ। সঙ্কটে পড়ুয়ারাও।

তফসিলি জাতি ও উপজাতির পড়ুয়াদের পড়াশোনার জন্য বৃত্তি দেয় সরকার। স্কুলের হস্টেলে থেকেই যাঁরা পড়াশোনা করে, তাঁদের শ্রেণি অনুযায়ী মাসিক ৭৫০-১২০০ টাকা পর্যন্ত ভাতা দেওয়া হয়। এই বৃত্তির মধ্যে পড়ুয়াদের পড়াশোনার পাশাপাশি হস্টেলে থাকা-খাওয়ার খরচও অন্তর্ভুক্ত থাকে। আর যাঁরা বাড়ি থেকে স্কুলে যাতায়াত করে তাঁদের মাসিক ২৩০-৫৩০ টাকা ভাতা দেওয়া হয়। এই ভাতার টাকার বেশিরভাগটাই দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। বাকি টাকা দেয় রাজ্য সরকার। পড়ুয়ার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেই প্রতি মাসে এই টাকা চলে যাওয়ার কথা। যদিও নিয়মিত এই টাকা মেলে না বলে অভিযোগ। কখনও চার মাস আবার কখনও বছরের শেষে মেলে সারা বছরের ভাতার টাকা। অনেক দরিদ্র ছাত্রই পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য এই ভাতার উপর নির্ভর করে। নিয়মিত টাকা না মেলায় চরম সমস্যার মুখে পড়ে তাঁরা।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন স্কুলের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির তফসিলি জাতিভুক্ত পড়ুয়া রয়েছে ১১,২০৪ জন। তাঁদের বৃত্তি বাবদ বছরে ৮ কোটি ৬৬ লক্ষ ৬০ হাজার ১৮০ টাকার প্রয়োজন। আর একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির তফসিলি উপজাতিভুক্ত ৭২১১ জন পড়ুয়ার জন্য প্রয়োজন ৬ কোটি ৪ লক্ষ ৬০ হাজার ৮০০ টাকা। সব মিলিয়ে ১৪ কোটি ৭১ লক্ষ ২০ হাজার ৯৮০ টাকা। এর মধ্যে গত অর্থবর্ষে ৫ কোটি ৫৯ লক্ষ ৬৪ হাজার ২৮০ টাকা পেয়েছে জেলা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর। ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষ শেষ হয়ে গেলেও এখনও পাওনা ৯ কোটি ১১ লক্ষ ৫৬ হাজার ৭০০ টাকা।

কয়েকটি ক্ষেত্রে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির তফসিলি জাতি ও উপজাতির পড়ুয়াদের হস্টেলের টাকাও বকেয়া রয়েছে বলে অভিযোগ। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বকেয়া টাকা চেয়ে দফতরের রাজ্য কমিশনারকে বারবার চিঠিও দিয়েছে জেলা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর। যদিও আর্থিক বছর শেষ হয়ে গেলেও বরাদ্দ টাকা মেলেনি।

এ নিয়ে ক্ষোভ ঘনাচ্ছে পড়ুয়াদের মধ্যে। এক ছাত্রের কথায়, ‘‘সরকারের মেলা, উৎসব আর ক্লাবকে দেওয়ার জন্য টাকা কম পড়ে না। যত বঞ্চনা আমাদের বেলায়।’’ একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রের আবার আক্ষেপ, “বাবা দিন মজুর। ফলে বই, খাতা, কলম কিনতেই হিমশিম অবস্থা।’’ সে আরও বলে, ‘‘গৃহশিক্ষকের খরচও রয়েছে। প্রতি মাসে সময়ে গৃহশিক্ষককে বেতন দিতে পারি না। বেতন দিতে দেরি হলে নিজেরই লজ্জা হয়। আমাদের দুঃখের কথা ভেবে এ ব্যাপারে সরকারের আরও সক্রিয় হওয়া উচিত।” বরাদ্দ না মেলায় সমস্যায় স্কুলগুলিও। বিভিন্ন স্কুলের হস্টেলে পড়ুয়াদের খাওয়াদাওয়ার জন্য সারা বছর মুদির দোকান থেকে ধারেই ভূষিমাল সামগ্রী কেনা হয়। পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকলে তা দিয়েই দোকানদারদের দেনা মেটানো হয়। টাকা না আসায় মুদি দোকানির কড়া কথাও শুনতে হচ্ছে হস্টেল কর্তৃপক্ষকে।

সমস্যা রয়েছে অন্যত্রও। যে সকল পড়ুয়া হস্টেলে থাকে, তাঁদের হস্টেলে থাকা-খাওয়ার খরচও পড়ুয়ার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেই চলে যায়। সে ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকলে তবেই মুদি দোকানের ধার মেটানো হয়। দ্বাদশ শ্রেণির অনেক পড়ুয়ার অ্যাকাউন্টে এখনও টাকা ঢোকেনি। উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পর ওই সব পড়ুয়ার সঙ্গে স্কুলের নিয়মিত যোগাযোগ থাকে না। ফলে টাকা জোগাড় করতে
স্কুলগুলি সমস্যায় পড়ে। এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকার পর পড়ুয়াদের দেখা না পাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। অনেক গরিব পরিবার হস্টেলের টাকা অন্য কাজেও খরচ করে ফেলে। সে ক্ষেত্রে হস্টেলের পড়ুয়াদের খাওয়ার খরচ মেটানো কঠিন হয়ে পড়ে।’’

স্কুলের এক প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘‘ওই টাকা আদায়ের জন্য আমাদের কাছে একটি পথ রয়েছে। তা হল ছাত্রছাত্রীদের পাশের শংসাপত্র। অনেকে তো বছরের পর বছর শংসাপত্র নিতেই আসে না। ফলে একটা দুশ্চিন্তা থেকেই যায়।”

ভাদুতলা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিতেশ চৌধুরীর কথায়, “হস্টেল খরচ বাবদ অনুদানের টাকা প্রতি মাসে পাওয়া গেলে ভাল হত। তা না মেলায় ভীষণ সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে।” এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘এখন সব্জি অগ্নিমূল্য। হস্টেলে থাকার জন্য পঞ্চম-দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের মাথাপিছু টাকা আসে মাসে ৭৫০ টাকা। ওই টাকায় দু’বেলা টিফিন ও দু’বেলা ভাত খাওয়ানো দুরূহ বিষয়। তারপরে সেই টাকাও নিয়মিত না আসায় সমস্যা চরমে উঠেছে।’’ অমিতেশবাবু বলেন, “আমাদের মতো যে সব স্কুলে হস্টেল রয়েছে, সকলেই অনুদান বাড়ানোর দাবি জানিয়েছি। কিন্তু মেলেনি।’’

ভাতা বাড়নো দূরে থাক, প্রাপ্য ভাতার টাকাই কবে মিলবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। তবে পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত) সুশান্ত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’

Scheduled Caste Stipend
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy