পঁচেট গড় জমিদার বাড়ির এই ঠাকুর দালানে দুর্গাপুজো হয়। —নিজস্ব চিত্র।
পঁচেটগড় জমিদার বাড়ির ইতিহাসের সূত্রপাত ষোড়শ শতাব্দীতে। জমিদার বাড়ির ঠাকুর দালানে দুর্গা পুজোয় সঙ্গে জমিদারি ইতিহাস মিলেমিশে একাকার। প্রাচীন এই পুজোয় এখনও আশপাশের এলাকা থেকে মানুষের ঢল নামে।
কথিত আছে, সঙ্গীতজ্ঞ যদুভট্ট এক সময় জমিদার বাড়িতে গান শেখাতেন। সেই গানের খাতা ও এসরাজ আজও জমিদার বাড়ির সংগ্রহে রয়েছে। মাঝের কিছুটা সময় জমিদারির টালমাটাল পরিস্থিতিতে পরিবারের প্রাচীন গৌরব হারিয়ে যেতে বসেছিল। এখন জমিদারি না থাকায় অর্থভাবে পুজোর ঐতিহ্য ধরে রাখাটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবারের বর্তমান সদস্যদের কাছে।
২০১৮ সালে রাজ্য সরকারের তরফে পঁচেট গড় জমিদার বাড়িকে ‘হেরিটেজ’ বলে ঘোষণা করা হয়। যদিও ভবন সংস্কারের কাজ আজ পর্যন্ত শুরু হয়নি। জমিদার বাড়ির কুলদেবতা কিশোররাই জীউয়ের সুবিশাল মন্দিরের পাশে রয়েছে দুর্গা দালান। একটা সময় জমিদার বাড়িতে কোনও দুর্গাপুজো হতো না। কুল পুরোহিতের কথা মতো মাটির দুর্গা প্রতিমা গড়ে দুর্গা দালানে পুজো শুরু হয়েছিল। কথিত আছে, মাটির প্রতিমা পুজোয় নানা বাধা বিঘ্ন ঘটে জমিদার বাড়িতে। ফলে মৃন্ময়ী দুর্গা পুজো বন্ধ হয়ে যায়। পরিবর্তে শোলা ও পটের দুর্গা প্রতিমা ঘটের উপর স্থাপন করে পুজো হয়ে আসছে জমিদার বাড়িতে। পঁচেটগড় জমিদার বাড়ির প্রবীণ সদস্য সুব্রতনন্দন দাস মহাপাত্র বলেন, ‘‘প্রথা মেনে দুর্গা পুজো হয় ঠাকুর দালানে। স্থানীয় সংগীত শিল্পীদের নিয়ে সুরের আসর বসে। পর্যটকদের থাকার জন্য অতিথিশালার ব্যবস্থা রয়েছে। চাইলে জমিদার বাড়িতে রাত্রি বাস করতে পারবেন তাঁরা।’’
জমিদারি আমলে মহালয়া থেকে দুর্গাপুজো শুরু হতো। অর্থাভাবে এখন তা হয় না। এখন মহালয়া থেকে দুর্গাদালানে পটের দুর্গা প্রতিমা তৈরি শুরু হয়। ষষ্ঠী থেকে দশমী সেই পটের দুর্গা পুজিত হয়। পুজোয় অন্নভোগের প্রচলন নেই। শুধুমাত্র লুচি সুজি সহযোগে ভোগ দেওয়া হয়। অষ্টমীতে খিচুড়ি ভোগ হয়। হেরিটেজ ঘোষণা হওয়ার পরে কিছুটা জাঁক ফিরেছে জমিদার বাড়ির দুর্গা পুজোয়। জমিদার বাড়ির অন্দরে পর্যটকদের থাকার জন্য অতিথিশালা রয়েছে। চাইলে আগাম বুকিং করে সেখানে থাকা যেতে পারে।খাওয়া যাবে জমিদারি থালি।
পুজোয় স্থানীয় সংগীত শিল্পীদের নিয়ে জমিদার বাড়ির জলসাঘরে বসবে সঙ্গীতের আসর। শোনা যাবে এসরাজের সুর। পুজোয় খোলা থাকবে জমিদার বাড়ি। পর্যটকেরা ঘুরে দেখতে পারবেন জমিদার বাড়ি অন্দরমহল। দেখতে পাবেন সংগ্রহশালায় রাখা যদুভট্টের সেই গানের খাতা ও এসরাজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy