Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Care

নার্স ‘মা’-দের কোলে কান্না ভুলেছে একরত্তি

স্থানীয় খাদালগোবরা গ্রামের এক মহিলার সম্প্রতি কন্যা সন্তান হয়েছে। তিনি প্রসূতি বিভাগের মধ্যে মেয়েকে কোলে নিয়ে বলেন, ‘‘মানবিকতা হারিয়ে গিয়েছে বলে, অনেকে  আফশোস করেন। তাঁদের বলব, দিঘার হাসপাতালে এসে এই শিশুটিকে একবার দেখে যান। বাবা-মা নেই তো কী হয়েছে? এখানে আমরা সবাই ওর অভিভাবক।’’

দিঘা হাসপাতালে নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে। নিজস্ব চিত্র

দিঘা হাসপাতালে নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে। নিজস্ব চিত্র

শান্তনু বেরা
দিঘা শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৮ ০২:৩২
Share: Save:

দোলনায় দুলতে দুলতে মাঝেমধ্যেই কেঁদে উঠছে একরত্তি ছেলেটা। তা শুনে দুধের বোতল হাতে এগিয়ে আসছেন একাধিক নার্স। তাঁদের কোলে চড়েই কান্না থামছে খুদের।

গত দু’সপ্তাহ ধরে দিঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে এভাবেই কয়েক সপ্তাহ বয়সের এক শিশুপুত্রকে সামলাচ্ছেন নার্সেরা। তাঁদের সঙ্গ দিয়েছেন প্রসূতি বিভাগে থাকা অন্য শিশুদের মা এবং পরিজনেরা। হাসপাতাল সূত্রের খবর, গত ১৩ মে ওল্ড দিঘার বিশ্ববাংলা পার্কিংয়ের কাছে ওই সদ্যোজাত শিশুকে পাওয়া গিয়েছিল। দিঘা থানার পুলিশ তাকে উদ্ধার করে স্টেট জেনারেল হাসপাতালে দিয়ে গিয়েছিল। তারপর থেকে হাসপাতালেই ঠিকানা ওই শিশুর।

প্রসূতি বিভাগে অন্য শিশুদের সঙ্গে শিশুটি বেড়ে উঠছে। এখনও খোঁজ পাওয়া যায়নি তার বাবা-মায়ের। তবে তাতে আদৌ বিচলিত নন নার্সেরা। নিজেদের ডিউটির ফাঁকে তাঁরা শিশুর যত্নের বিশেষ খেয়াল রাখছেন। যে যাঁর নিজের মত করে নাম দিয়ে ওই শিশুকে ডাকছেন, আদর করছেন, খেলছেন। প্রসূতি বিভাগের নার্স অনিমা মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা সকলে ডিউটির ফাঁকে শিশুটির যত্ন নিচ্ছি। আমার না থাকার সময় ও কাঁদলে বিভাগের অন্য মায়েরাও ওকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন। ও যাঁরই সন্তান হোক না কেন, ফুটফুটে হাসি মুখটা দেখলে মনটা ভরে যায়।’’

স্থানীয় খাদালগোবরা গ্রামের এক মহিলার সম্প্রতি কন্যা সন্তান হয়েছে। তিনি প্রসূতি বিভাগের মধ্যে মেয়েকে কোলে নিয়ে বলেন, ‘‘মানবিকতা হারিয়ে গিয়েছে বলে, অনেকে আফশোস করেন। তাঁদের বলব, দিঘার হাসপাতালে এসে এই শিশুটিকে একবার দেখে যান। বাবা-মা নেই তো কী হয়েছে? এখানে আমরা সবাই ওর অভিভাবক।’’

হাসপাতালের সুপার বিষ্ণুপদ বাগ ওই শিশু প্রসঙ্গে বলেন, “যখন শিশুটিকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল, তখন ওর নাভিতে সংক্রমণ ছিল। সকলের মিলিত পরিচর্যায় সে এখন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে আমরা পুলিশকে খবরও দিয়েছি।’’ পুলিশ জানিয়েছে, আজ, মঙ্গলবারই শিশুটিকে জেলা চাইল্ড লাইনের হাতে তুলে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে জন্য প্রয়োজনীয় নথির কাজ শুরু হয়েছে।

কিন্তু শিশুটি হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাবে— তা ভেবেই প্রসূতি বিভাগের অনেকের মন খারাপ। এ ব্যাপারে দিঘার সমাজকর্মী সুমন জানার বক্তব্য, “নার্স বা অন্যেরা শিশুটিকে বাবা-মার অভাব বুঝতেই দেননি। হাসপাতালের দোলনায় যে ভাবে শিশুটির পরিচর্যা হচ্ছে, তার নিজের বাবা-মা’ও এমন যত্ন নিতেন কি না সন্দেহ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Care Nurse New born
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE