কেন্দ্রের রেল শুরু করেছে। এ বার রাজ্যের ব্লক প্রশাসনও শুরু করে দিল। সরকারি অফিসে নামের বোর্ডে এখন ঠাঁই পাচ্ছে অলচিকি লিপিও। বোর্ডে বাংলা, ইংরেজির পাশাপাশি সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপিতে লেখা হচ্ছে দফতরের বা আধিকারিকের নাম।
পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহল এলাকার অন্তর্গত শালবনি ব্লকের একাধিক জায়গায় ইতিমধ্যে এমন ‘নেম বোর্ড’ চোখে পড়েছে। ব্লক সদরে শালবনির বিডিও-র নামের বোর্ডে অলচিকি লিপি জায়গা পেয়েছে। গড়মাল গ্রাম পঞ্চায়েতের দেওয়ালেও পঞ্চায়েতের নাম অলচিকি লিপিতে লেখা হয়েছে। সামনে বিধানসভা ভোট। তার আগে আদিবাসী-মন পেতেই কি এই পদক্ষেপ, জল্পনা শুরু হয়েছে। জানা যাচ্ছে, একে একে শালবনির সব গ্রাম পঞ্চায়েতের দেওয়ালেই পঞ্চায়েতের নাম অলচিকি লিপিতে লেখা হবে। শালবনির বিডিও সঞ্জয় মালাকার বলেন, ‘‘এলাকায় অনেক আদিবাসী মানুষের বসবাস। তাঁদের সুবিধার জন্যই ‘নেম বোর্ডে’ অলচিকি লিপি রাখা হচ্ছে।’’ জেলাশাসক রশ্মি কমলের মন্তব্য, ‘‘এটা তো ভালই।’’
এখন জঙ্গলমহলের বিভিন্ন স্টেশনেও ‘নেম বোর্ডে’ বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজির পাশাপাশি সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপিতে স্টেশনের নাম লেখা হচ্ছে। মেদিনীপুর থেকে ঝাড়গ্রাম— সর্বত্র স্টেশনে এক ছবি। বিজেপি প্রচারও শুরু করেছে যে, এই কৃতিত্বের দাবিদার ঝাড়গ্রামের সাংসদ কুনার হেমব্রম। এক অনুষ্ঠানে কুনারও বলেছেন যে, তাঁর আবেদনে সাড়া দিয়েই রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল খড়্গপুর ও আদ্রা ডিভিশনের স্টেশনগুলির ‘নেম বোর্ডে’ সাঁওতালিতে স্টেশনের নাম লেখার বিষয়টিতে অনুমোদন দিয়েছেন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনুমান, বিজেপির প্রচারকে ‘ভোঁতা’ করতে জঙ্গলমহলের সরকারি অফিসের ‘নেম বোর্ডে’ও অলচিকি লিপি রাখা হচ্ছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি অজিত মাইতি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘আদিবাসীদের উন্নয়নে আমাদের সরকার নানা পদক্ষেপ করেছে। সাঁওতালি ভাষার প্রতি আমরা সকলেই শ্রদ্ধাশীল।’’ বিজেপির মেদিনীপুর জেলা সভাপতি শমিত দাশ পাল্টা বলেন, ‘‘শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানীয় জল সহ আদিবাসী উন্নয়নের অনেক দাবিই পূরণ হয়নি। ২০২১ সালে রাজ্যে বিজেপি সরকারে এসে ওই সব বকেয়া উন্নয়নের কাজ সেরে ফেলবে।’’
গত পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটে জঙ্গলমহলে বিজেপির উত্থান হয়েছে। আদিবাসীদের একটা বড় অংশ কেন তৃণমূলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, সে নিয়ে কাটাছেঁড়াও শুরু হয়। তাঁর সরকার যে আদিবাসীদের পাশে রয়েছে, বারবার এই বার্তা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আদিবাসী অধ্যুষিত কেশিয়াড়িতে এসে মমতা বলে গিয়েছেন, ‘‘স্কুলে স্কুলে সাঁওতালিতে পঠনপাঠন চালু করেছে কে? আমাদের সরকার, তৃণমূলের সরকার। প্যারাটিচার দিয়ে স্কুলে স্কুলে সাঁওতালি পড়াচ্ছে কে? সাঁওতালি ডিকশনারি তৈরি করেছে কে? মা-মাটি-মানুষের সরকার। আমরাই জহরথান করে দিয়েছি।’’
জঙ্গলমহলের রাজনীতিতে জনজাতি ভোটের বড় ভূমিকা রয়েছে। রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোট ও ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে জনজাতিদের একাংশ শাসক তৃণমূলকে বিমুখ করাতেই জঙ্গলমহলে পদ্ম ফুটেছে। বিধানসভা ভোটে জনজাতিদের ওই অংশকে ফের নিজের দিকে টানতে তৎপর হয়েছে তৃণমূল। আদিবাসী-মন ছুঁতেই অফিসের ‘নেম বোর্ডে’ অলচিকি লিপিকে ঠাঁই দেওয়ার ভাবনা বলে মনে করছেন অনেকে।