ডাইন ঠাওরে মারধরের পরে চলছে বিশেষ পুজো। ঘাটালের ঈশ্বরপুর গ্রামে। রবিবার। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
গ্রামে একটি গরু মারা গিয়েছিল। তার কারণ খুঁজতে গিয়ে ডাইনি ঠাওরে এক বৃদ্ধাকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল। ঘটনাস্থল ঘাটালের রাধানগর ঘেঁষা ঈশ্বরপুর। রবিবার গ্রামে পৌঁছে বাধা পায় পুলিশও। কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পরে আদরমণি হাঁসদার (৬১) দেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়। মারধরে জখম পাঁচজনকে ঘাটাল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে পাঠাতেও বিকেল হয়ে যায়। দু’জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি তিন জন ভর্তি আছেন।
ঘটনায় শোরগোল পড়েছে ঘাটাল জুড়ে। প্রশ্ন উঠেছে ডাইনি প্রথার মতো অন্ধ বিশ্বাস কেন নির্মূল করা যাচ্ছে না। এ দিন এলাকায় গিয়েছিলেন আদিবাসী সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের ঘাটাল তল্লাটের নেতারা। ঘাটাল তল্লাটের সভাপতি মনোরঞ্জন মুর্মু বলেন, “আমরা এমন ঘটনা সমর্থন করি না। কিছু অসাধু লোক নিজেদের স্বার্থে নিরীহ গ্রামবাসীকে কুসংস্কারে ডুবিয়ে রাখছে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, দিন পনেরো আগে ঈশ্বরপুরে একটি গরু মারা যায়। তারপরই শ্যামলী মান্ডি ও তাঁর স্বামী কৃষ্ণ মান্ডি বৃদ্ধা আদরমণি হাঁসদা, তাঁর বৌমা সীতা হাঁসদা, পড়শি লক্ষ্মী হাঁসদা-সহ কয়েকজনকে ডাইন ঠাওরে দেয়। প্রথমে মোটা টাকা জরিমানা চাওয়া হয় বলে অভিযোগ। সঙ্গে ফরমান—‘গ্রামের বাইরে যেতে পারবে না। খেতে হবে শুকনো খাবার।’ রবিবার সকাল থেকে গ্রামে পুজোআচ্চা শুরু হয়। একটা সময় আদরমণি-সহ বাকিদের বেঁধে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। জখম হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান আদরমণি। জখম লক্ষ্মী, সীতারা বলছিলেন, “আদরমণি-সহ আমাদের কয়েকজনকে ডাইন অপবাদ দিয়ে জরিমানা চাওয়া হয়। হাজার টাকা দিয়েছিলাম। তারপরেও এ দিন মারধর করা হয়।”
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
খবর পেয়ে পুলিশ যখন পৌঁছয়, ততক্ষণে বৃদ্ধার ধড়ে আর প্রাণ নেই। গ্রামের ‘সমাজ’-এর মাতব্বরেরা সেই দেহ নিয়ে নাচানাচিও করে। করা হয় বিশেষ পুজো। পুলিশ গ্রামে ঢুকতে গেলে বাধা দেওয়া হয়। বেলা বারোটা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় পুলিশের আধিকারিক ও কর্মীদের। পরে গ্রামে পৌঁছন ঘাটালের মহকুমাশাসক অসীম পাল, এসডিপিও কল্যাণ সরকার ও জনপ্রতিনিধিরা। গ্রামে ঢুকে দেহ উদ্ধারের পাশাপাশি জখমদের হাসপাতালে পাঠানোর বন্দোবস্ত করে পুলিশ। মহকুমাশাসক বলেন, “অভিযুক্তদের সকলকেই গ্রেফতার করা হবে। এলাকায় সচেতনতা শিবিরও করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy