E-Paper

ওড়িশা থেকেও ঢুকছে গাড়ি

সৈকতে দাপট বাড়ছে টোটোর। রাশ টানতে উদ্যোগী পুলিশ।

কেশব মান্না

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৫ ০৮:১৮

এক সময় চলত ইঞ্জিন রিকশা। সৈকত শহরের ওল্ড দিঘা থেকে নিউ দিঘা যাওয়ার ভরসা ছিল সেই যানগুলিই। সংখ্যাটাও ছিল অল্প— কমবেশি ৫০টি। ধীরে ধীরে ইঞ্জিন রিকশার বদলে দিঘার রাস্তায় বাড়ল টোটোর সংখ্যা। গত কয়েক বছরে শুধু নিউ দিঘাতেই টোটো চলত অন্তত ৩০০টি। ২০২২ সাল থেকে ছবিটা একে বারেই পাল্টে গিয়েছে। গত তিন বছরেদিঘায় টোটোর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় দু’হাজার হয়েছে। আর সেই সঙ্গে বেড়েছে টোটো চালকদের দৌরাত্ম্য।

কিন্তু হঠাৎ করে এত টোটো দিঘায় এল কোথা থেকে?

স্থানীয় সূত্রের খবর, অধিকাংশ ক্ষেত্রে নম্বর প্লেটহীন ব্যাটারি চালিত এই তিনচক্র যান আসছে দিঘার সংলগ্ন আশেপাশের এলাকা থেকে। আবার একটা অংশ আসে দিঘা লাগায়ো ওড়িশা থেকেও। স্থানীয়রা অনেকেই জানাচ্ছেন, পার্শ্ববর্তী রামনগর, বালিসাই, এগরা, ওড়িশার বালেশ্বর থেকে কেউ কেউ এসে টোটো চালান দিঘায়। ওল্ড দিঘায় জেলাশাসকের বাংলোর কাছে টোটো নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন বালিসাইয়ের যুবক তারাপদ ভঞ্জ। তিনি বলছেন, ‘‘এলাকায় চাহিদা কম। তাই বাড়তি ভাড়ার আশায় সকাল থেকে দিঘা চলে আসি।’’ স্বপন জানা নামে আর এক টোটো চালক বলছেন, ‘‘সংগঠনের সদস্যভুক্ত টোটোয় স্টিকার লাগানো থাকে। তার পরেও মাঝেমধ্যে দেখি জগন্নাথ মন্দিরের সামনে নতুন কিছু লোকেরা টোটো নিয়ে আসছেন।’’

বিরোধীদের অভিযোগ, স্থানীয় কোনও পরিচিতের বাড়ি থাকায় সেই পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে এলাকার তৃণমূল নেতাদের হাজার হাজার টাকা দিয়ে শহরের টোটো চালানোর অনুমতি নেওয়া হচ্ছে। আবার কখনও তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের পরিবার তিন থেকে চারটি করে টোটো কিনে সেগুলি লিজে চালাতে দিচ্ছে। বিরোধীদের দাবি, রাজ্যে কর্মস্থানের সুযোগ কমে গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে বেকারদের একাংশ টোটো কিনে রাস্তায় চালালে স্থানীয় শাসকদলের নেতাদেরও প্রচ্ছন্নমদত থাকছে।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য আশিস প্রামাণিক বলছেন, ‘‘বাম জমানায় হাত রিকশাগুলির কাছ থেকে বার্ষিক ১২ টাকা হারে সংগঠনের সদস্য ফি নেওয়া হত। গত কয়েক বছরে তৃণমূল প্রথমে টোটো চালানোর জন্য ১৫-২০ হাজার টাকা করে নিচ্ছে। পরে আবার নিজেদের দলের শ্রমিক সংগঠনের নাম করে টাকা চাইছে। যাঁরা টাকা দিতে পারছেন, সকলেই টোটো চালাচ্ছেন। ফলে টোটোর সংখ্যা বাড়ছে। আর সেগুলির উপরে কোনও নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছে না প্রশাসন।’’ যদিও স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নিতাই সার বলছেন, ‘‘এ ভাবে টোটোর সংখ্যা বাড়ানোর অভিযোগ ঠিক নয়। যাঁরা ইঞ্জিন বা হাত রিকশা চালাতেন, তাঁরাই এখন টোটো করেছেন।’’

আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, অধিকাংশ টোটোর ‘ই-রিকশা’র শংসাপত্র নেই। ফলে সংখ্যাও হিসাব রাখা যাচ্ছে না। জেলা পুলিশও জানাচ্ছে, সরকারি অনুমতি না থাকায় টোটো নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ছে তারাও। জোড়-বিজোড় নীতিতে টোটো চালাতে গিয়ে সরকারি ভাবে স্টিকার কোনও কোনও টোটো মালিকদের দেওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্র্যাফিক) শ্যামল মণ্ডল বলেন, ‘‘দিঘায় তিনটি টোটো সংগঠন রয়েছে। তারা ১৮৫০টি টোটোর কথা বলেছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা ১৬০০ টোটোরঅস্তিত্ব পেয়েছি।’’

টোটোর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং চালকদের দাপটে রাশ টানতে পুলিশ অবশ্য সম্প্রতি উদ্যোগী হয়েছে। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, উল্টো মিটলেই তারা অভিযান করবে। (শেষ)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Toto digha

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy