অভিযুক্ত: ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল।
চিত্র-১। জ্বর ও পেটে ব্যাথার উপসর্গ নিয়ে ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে হাজির এক জন্ডিসের রোগী। ভর্তি করানোর পরে তাঁর পরিজনদের বলা হল, রক্তের বিলিরুবিন পরীক্ষা করাতে হবে বাইরে থেকে। কারণ সরকারি হাসপাতালে ওই পরীক্ষা হয় না। বেলপাহাড়ির প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা দরিদ্র রোগীর পরিজনদের তখন মাথায় হাত।
চিত্র-২। সাপে কাটা সঙ্কটজনক এক রোগী ভর্তি হওয়ার পরে চিকিৎসক জানালেন, অবিলম্বে রক্তের প্রোথ্রম্বিন টাইম পরীক্ষা করাতে হবে। রক্ত জমাট বাঁধার সময়সীমা নির্ধারণে ওই পরীক্ষাটিও মোটা টাকা দিয়ে বাইরের নির্ণয় কেন্দ্র থেকে করাতে হয়।
চিত্র-৩। ডায়ালিসিস করানোর জন্য এক রোগীকে সিসিইউতে ভর্তি করানো হল। ডায়ালিসিসের আগে রোগীর রক্তের হেপাটাইসিস-বি ও সি এবং এইচআইভি পরীক্ষা করা জরুরি। কিন্তু হেপাটাইসিস বি এবং সি পরীক্ষা হাসপাতালে হয় না। আবার দুপুরের পরে হাসপাতালে এইচআইভি টেস্টও হয় না। অগত্যা রোগীর পরিজনেরা সে সব পরীক্ষা করানোর জন্য পড়িমড়ি করে ছুটলেন বাইরের পরীক্ষাকেন্দ্রে।
এগুলি ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের প্রতিদিনের ছবি। দিনের পর দিন এ ভাবেই বাইরের বেসরকারি ল্যাবগুলির উপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে রোগীদের। রোগীর পরিবারের অভিযোগ, সরকারি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে অধিকাংশ পরীক্ষা করা হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে মোটা টাকা খরচ করে বাইরের বেসরকারি নির্ণয় কেন্দ্রগুলি সে সব করাতে হচ্ছে। এমনকী বেসরকারি ওই সব পরীক্ষাগারের কর্মীরা প্রয়োজনে হাসপাতালে এসে রোগীর রক্তের নমুনা নিয়ে যাচ্ছেন। হাসপাতাল সূত্রে খবর, একমাত্র রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিমা যোজনা ও জননী শিশু সুরক্ষা যোজনার আওতায় থাকা রোগীরা কেবলমাত্র বিনামূল্য রক্ত-সহ আনুসঙ্গিক বিভিন্ন পরীক্ষার সুযোগ পান। কিন্তু সেক্ষেত্রেও পরীক্ষাগুলি পিপিপি মডেলে বেসরকারি নির্ণয় কেন্দ্রেই করতে হয়।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, রক্ত ও মূত্রের কয়েকটি পরীক্ষা অবশ্য সেখানে হয়। তবে ওই পরীক্ষাগুলি কেবলমাত্র দিনের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হয়। ২৪ ঘণ্টা ওই পরিষেবা পাওয়া যায় না। সে ক্ষেত্রেও দুপুরের পরে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বাইরের বেসরকারি পরীক্ষাগারই ভরসা। এমনকী হাসপাতালে কফ ও মূত্রের জীবাণু পরীক্ষা এবং ওষুধের সেনসিটিভিটি পরীক্ষাও হয় না। ফলে বাইরের করানো পরীক্ষার রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত রোগীকে নির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যায় না।
রোগীদের পরিবারের অভিযোগ, বেসরকারি পরীক্ষাগারগুলির রমরমা ব্যবসার স্বার্থে সরকারি হাসপাতালে ওই সব গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা চালু করা হচ্ছে না। ‘সার্ভিস ডক্টরস্ ফোরাম’-এর রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, “সাইনবোর্ড সর্বস্ব সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল হয়েছে। ফলে রোগীর পরিজনদের ক্ষোভের মুখে পড়ছেন চিকিৎসকেরা। জেলাস্তরের হাসপাতালে সামান্য রক্তের বিলিরুবিন পরীক্ষা হয় না, এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এই সব পরিষেবা অবিলম্বে চালু করার জন্য আমরা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে দাবি জানিয়েছি।”
ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সুপার মলয় আদক বলেন, “রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর ধাপে ধাপে সমস্ত পরিষেবা চালু করার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা চালুও হয়েছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক টেকনিশিয়ান নিয়োগ হয়ে গেলে সমস্যা আর থাকবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy