Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

গড়বেতার ভেদুয়াসিন্নির পুজোয় সম্প্রীতির সুর

পুজোর ফল কাটার কাজে ব্যস্ত কেনারাম সর্দার, নিমাই সর্দারেরা। হবিবুর শেখ, বুলু মণ্ডলেরা মাঝেমধ্যেই খোঁজ নিয়ে যাচ্ছেন, ‘সব ঠিক আছে তো’। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বদন মণ্ডলকে নির্দেশ দিলেন, ‘দেখিস যেন কোনও অসুবিধা না হয়। যা প্রয়োজন সব ব্যবস্থা করে দিস।’

চলছে পুজো। নিজস্ব চিত্র।

চলছে পুজো। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গড়বেতা শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:৫৩
Share: Save:

পুজোর ফল কাটার কাজে ব্যস্ত কেনারাম সর্দার, নিমাই সর্দারেরা। হবিবুর শেখ, বুলু মণ্ডলেরা মাঝেমধ্যেই খোঁজ নিয়ে যাচ্ছেন, ‘সব ঠিক আছে তো’। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বদন মণ্ডলকে নির্দেশ দিলেন, ‘দেখিস যেন কোনও অসুবিধা না হয়। যা প্রয়োজন সব ব্যবস্থা করে দিস।’

গড়বেতা-১ ব্লকের ভেদুয়াসিন্নির পুজোয় এটাই দস্তুর। বছরভর পুজোর থান দেখভাল করেন ভেদুয়া গ্রামের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। প্রতি বছর মকর সংক্রান্তির পরের দিন হয় পুজো। ভেদুয়া থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে নেকড়াশোল গ্রামের সর্দার সম্প্রদায়ের লোকেরা থানে এসে পুজো করেন। ভেদুয়া গ্রামে কোনও স্থায়ী মন্দির নেই। গাছের তলায় সাজানো থাকে ঘোড়া। বহু দূর থেকে অনেকে এই থানে পুজো দিতে আসেন। মানতও করেন অনেকে। মনোবাসনা পূরণ হলে ঘোড়া দিয়ে যান থানে।

পুজো উপলক্ষে মেলাও হয়। দু’দিনের মেলার সূচনা হল রবিবার। মেলা ঘিরে আনন্দে মেতে ওঠেন উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ। ছোট আঙারিয়া, বলরামপুর, চমকাইতলা-সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ ভিড় জমান ওই মেলায়। কতদিন ধরে এই মেলা চলছে, সে বিষয়ে সঠিক ধারণা নেই কারও। ষাটোর্ধ্ব পুরোহিত কেনারাম সর্দারের কথায়, “বাপ-ঠাকুর্দারাও পুজো করতেন। এখন আমরা করি।”

কেনারামবাবুর দাবি, এক সময় ভেদুয়া গ্রামে জমিদারি ছিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ক্ষীরপাইয়ের বাসিন্দা হালদার পরিবারের। জমিদারি চলে যাওয়ার পর হালদার পরিবারের লোকেরাই তাঁর ঠাকুর্দাকে ভেদুয়া গ্রামের থানে পুজোর দায়িত্ব সঁপে গিয়েছিলেন। পরে হালদার পরিবারের আর কেউ এলাকায় আসেননি। সেই থেকে সর্দার পরিবারের লোকেরাই পুজোর দায়িত্ব সামলে আসছেন।

পুজো উপলক্ষে থাকে ভোগের আয়োজন। স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাত, তরকারি খাওয়ানো হয়। রান্না করেন সর্দার পরিবারের লোকেরা। যদিও বাজার-হাট করা, চাঁদা দিয়ে সাহায্য করা— সব কিছু কাজেই হাত লাগান মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। কেনারামবাবু, অসিতবাবুদের কথায়, “আমরা তো দূরের গ্রামে থাকি। কী ভাবে পুজো ও মেলা পরিচালনা করব। স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষই সব ব্যবস্থা করে দেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Veduasinni Puja Religious Harmony
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE