Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

পুরসভা হয়নি, আঁধারে পরিষেবাও

কাটেনি অনুন্নয়নের আঁধার। বর্গিদের ভূমি পটাশপুর শহরে আজও ন্যূনতম নাগরিক পরিষেবা অমিল। জনশ্রুতি, মোগল আমলে পটাশপুরে একটি মোগলঘাঁটি ছিল। যোগেশচন্দ্র বসুর লেখা ‘মেদিনীপুরের ইতিহাস’ গ্রন্থ থেকে জানা যায় ১৬১১ খ্রিস্টাব্দে সুবর্ণরেখার যুদ্ধে আফগানদের পরাজয়ের মধ্য দিয়েই পটাশপুরে মোগল শাসনের সূত্রপাত।

আয়তনে বাড়লেও মানোন্নয়ন হয়নি পটাশপুর বাজারের। —নিজস্ব চিত্র।

আয়তনে বাড়লেও মানোন্নয়ন হয়নি পটাশপুর বাজারের। —নিজস্ব চিত্র।

কৌশিক মিশ্র
পটাশপুর শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৫ ০০:২৫
Share: Save:

কাটেনি অনুন্নয়নের আঁধার। বর্গিদের ভূমি পটাশপুর শহরে আজও ন্যূনতম নাগরিক পরিষেবা অমিল।

জনশ্রুতি, মোগল আমলে পটাশপুরে একটি মোগলঘাঁটি ছিল। যোগেশচন্দ্র বসুর লেখা ‘মেদিনীপুরের ইতিহাস’ গ্রন্থ থেকে জানা যায় ১৬১১ খ্রিস্টাব্দে সুবর্ণরেখার যুদ্ধে আফগানদের পরাজয়ের মধ্য দিয়েই পটাশপুরে মোগল শাসনের সূত্রপাত। মীর বংশের অধীনে ছিল এই মোগল ঘাঁটি। এই বংশের উত্তরাধিকাররা এখনও পটাশপুরেই বাস করেন। ব্রিটিশ আমলে পটাশপুরে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য বাড়ে। আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক মন্মথ দাসের ‘পটাশপুরের সেকাল-একাল’ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, ১৮০৩ সালে দু’জন ইংরেজ সামরিক অফিসার ফার্গুসন ও হারকট সাহেব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পটাশপুর থানা গড়ে তোলেন। এই থানা সংলগ্ন এলাকা পরে পটাশপুর বাজার হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

প্রদ্যোতকুমার মাইতির লেখা ‘পূর্ব মেদিনীপুর জেলার স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সংগ্রামীদের কথা’ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, ১৯৪২ সালে ২৯ সেপ্টেম্বর পটাশপুর বাজার থানা দখল করে স্বাধীন সরকার গঠিত হয়। এই সরকার প্রায় ছ’মাস ছিল। পড়শি রাজ্য ওড়িশা ও পশ্চিম মেদিনীপুর যাওয়ার পথে পটাশপুর বাজার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। নন্দ কাপাসিয়া-ঘাটাল-পটাশপুর হয়ে সবং, নারায়ণগড়ের উপর দিয়ে ওড়িশা এবং খেজুরি-জনকা ভায়া পটাশপুর হয়ে ললাট-বেলদা এই এলাকার উপর দিয়েই গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্বাধীনতার পর পঁয়ষট্টি বছরের বেশি সময় কেটে গেলেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি
পটাশপুরের গায়ে।

পটাশপুর বাজার এলাকাটি মূলত পটাশপুর পাঁচ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের তুপচিবাড়, কসবা পটাশপুর, হরিডাঙর ও মতিরামপুর গ্রামের এগরা-বাজকুল রাজ্য সড়কের পার্শ্ববর্তী এলাকা নিয়ে গঠিত। পটাশপুরে মংলামাড়ো, অমর্ষি, প্রতাপদিঘির মতো ছোট শহর গড়ে উঠেছে। তবে শহরের আয়তন বাড়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উন্নয়নের পরিকল্পনা তৈরি করা হয়নি বলে শহরের একাংশ বাসিন্দার অভিযোগ। স্থানীয় এক প্রবীণ বাসিন্দার কথায়, ‘‘১৯৭০ সাল পর্যন্ত পটাশপুর বাজারে কোনও পাকা বাড়ি ছিল না। সামনের রাজ্য সড়ক দিয়ে সারাদিনে মাত্র দু’টি বাস চলাচল করত। বাজারের দক্ষিণে সপ্তাহে দু’দিন বুধবার ও শনিবার দুইদিন বসত দাইতলা হাট। ছিল সাব-রেজিস্ট্রি অফিসও। ধীরে ধীরে বাজার ক্রমে আয়তনে বেড়েছে।’’ বর্তমানে পটাশপুর বাজারে প্রায় ২১০টির মতো স্থায়ী ও অস্থায়ী দোকান রয়েছে। যদিও এলাকায় পরিকাঠামোর মানোন্নয়নে প্রশাসন উদ্যোগী হয়নি বলে অভিযোগ।

পটাশপুরের প্রাক্তন বিধায়ক রাধানাথ দাসঅধিকারীর ছেলে সোমনাথ অধিকারী জানান, ১৯৭২ সালে থানার সামনে তাঁদের বাড়িতেই ছিল পোস্ট অফিস। ১৯৭৭ সালে পটাশপুর বাজারেই ছিল রাজস্ব আদায়ের অফিস যা পরে অমর্ষি ও প্রতাপদিঘিতে সরে যায়। ১৯৮৪ সালের মার্চ মাসে বর্তমান ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সহযোগিতায় পটাশপুর বাজারে রাধানাথবাবুর বাড়িতেই এলাকার প্রথম ব্যাঙ্ক গড়ে ওঠে।

বাজার এলাকায় পানীয় জল সরবরাহের অবস্থা তথৈবচ। যে সমস্ত পরিবার ও দোকানে টিউবওয়েল নেই, জলের জন্য তাদের ভরসা রাস্তার টিউবওয়েল। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকায় দু’একটি টিউবওয়েল থাকলেও সেগুলির জল পানের অযোগ্য। স্থানীয় বাসিন্দা বিদেশ দাসের কথায়, ‘‘পানীয় জলের সমস্যা দীর্ঘদিনের। সমস্যার সমাধানের জন্য একাধিক বার আবেদন করেও কাজ হয়নি।’’

নিকাশি নালাগুলিরও জীর্ণ দশা। নিয়মিত সাফাই না হওয়ায় নালাগুলি আবর্জনায় অবরুদ্ধ। বর্ষাকালে নালার নোংরা জল রাস্তায় উপচে পড়ে। স্থানীয় শেখ সেলিম, তাপস সাউদের অভিযোগ, ‘‘নিয়মিত জঞ্জাল পরিষ্কার না হওয়ায় দূষণ ছড়ায়। তাছাড়া পটাশপুর বাজারে রাস্তার ধারেই হকাররা বসায় যানজটে নাভিশ্বাস ওঠে।’’ একইভাবে, শেখ আমজাদ আলিও ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘‘নামেই এটি শহর। নিকাশি ব্যবস্থা বলতে এখানে কার্যত কিছু নেই।’’

পটাশপুর বাজারের মোতিরামপুর এলাকার বাসিন্দা প্রবীণ শেখ আব্দুল সামাদের বক্তব্য, ‘‘উন্নয়নের প্রশ্নে আমাদের এলাকা চিরকালই ব্রাত্য থেকে গিয়েছে।’’ বিগত বাম জমানাতেও এই এলাকার পরিকাঠামো উন্নয়নে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলে দাবি জেলা পরিষদের বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ মৃণাল দাসেরও। তিনি বলেন, ‘‘পটাশপুর বাজার এলাকার কথা আগে কেউ ভাবেনি। রাজ্যের বর্তমান সরকারের আমলে এই মৃতপ্রায় শহরে প্রাণ সঞ্চারের চেষ্টা চলছে।’’ মৃণালবাবুর দাবি, ‘‘জেলা পরিষদ ওই এলাকায় একটি উদ্যান, জল সরবরাহ প্রকল্প, নতুন বাসস্ট্যান্ড তৈরি-সহ বেশ কিছু কাজের পরিকল্পনা নিয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই কাজও শুরু হবে।’’

কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান। district@abp.in-এ। subject-এ লিখুন ‘আমার শহর পটাশপুর ’। ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানান: www.facebook.com/anandabazar.abp অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর বিভাগ, জেলা দফতর, আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০০১ ঠিকানায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE