স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ শুরু হল দুই মেদিনীপুরের কলেজগুলোয়। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি কলেজে অধ্যক্ষরা দায়িত্বভার বুঝে নিয়েছেন। বেশ কয়েকটি কলেজে চলতি মাসেই অধ্যক্ষদের যোগদান করার কথা।
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত দুই মেদিনীপুরের ৪২টি কলেজের মধ্যে ২৩টিতেই স্থায়ী অধ্যক্ষ ছিলেন না। কোথাও তিন-চার বছর, কোথাও বা তারও বেশি সময় ধরে দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন টিচার-ইনচার্জরা। কিন্তু টিচার-ইনচার্জদের নিয়মমাফিক ক্লাস নিতে হয়। ফলে, অনেক সময়ই প্রশাসনিক কাজকর্ম সময়মতো সেরে ওঠা সম্ভব হচ্ছিল না। কলেজগুলোয় স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ হলে এই সমস্যার সুরাহা হবে বলেই মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
দুই মেদিনীপুরের প্রায় ১৪টি কলেজে ইতিমধ্যে স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ শুরু হয়েছে। মেদিনীপুর শহরের তিনটি কলেজেই সম্প্রতি অধ্যক্ষরা যোগদান করেছেন। মেদিনীপুর কলেজের টিচার-ইনচার্জ ছিলেন সুধীন্দ্রনাথ বাগ। তাঁর কাছ থেকে দায়িত্বভার বুঝে নিয়েছেন অধ্যক্ষ গোপালচন্দ্র বেরা। কমার্স কলেজের টিচার- ইনচার্জ ছিলেন বিবেকানন্দ দাস মহাপাত্র। তাঁর কাছ থেকে দায়িত্বভার বুঝে নিয়েছেন অধ্যক্ষ দুলালচন্দ্র দাস। মহিলা কলেজের (গোপ কলেজ) টিচার-ইনচার্জ ছিলেন কৃষ্ণা মাইতি। সেখানে অধ্যক্ষা হয়েছে জয়শ্রী লাহা। অন্য এলাকার কলেজগুলোতেও অধ্যক্ষরা যোগদান করতে শুরু করেছেন। যেমন, গড়বেতা কলেজের টিচার-ইনচার্জ ছিলেন মন্টুকুমার দাস। তাঁর কাছ থেকে দায়িত্বভার বুঝে নিয়েছেন অধ্যক্ষ হরিপ্রসাদ সরকার। খড়্গপুর কলেজের টিচার-ইনচার্জ ছিলেন অচিন্ত্য চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন অধ্যক্ষ নির্মল হাজরা। কেশপুর কলেজ, হিজলি কলেজেও চলতি মাসেই অধ্যক্ষদের যোগদান করার কথা।
এক সময় রাজ্যে সব মিলিয়ে ২০৭টি কলেজে অধ্যক্ষের পদ শূন্য ছিল। পরিস্থিতি দেখে মাস কয়েক আগে কলেজ সার্ভিস কমিশন বিজ্ঞপ্তি দেয়। বিজ্ঞপ্তি দেখে ইচ্ছুক অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা কলেজ সার্ভিস কমিশনে আবেদন জানান। পরে ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে ১৫০ জনের প্যানেল তৈরি হয়। পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, অধ্যক্ষ হওয়ার ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ অধ্যাপক-অধ্যাপিকা ইচ্ছুক নন। এর কারণ নিয়ে অবশ্য নানা মত রয়েছে। বাম প্রভাবিত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুটার মতে, শিক্ষাক্ষেত্রে বারবার নৈরাজ্যের ঘটনার পরেও মুখ্যমন্ত্রী বা শিক্ষামন্ত্রী কড়া অবস্থান নেননি। উল্টে যে সব ক্ষেত্রে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ জড়িত, সেখানে ‘ছোট ছেলেদের ভুল’ বলে দায় এড়িয়ে গিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়ে বিপাকে পড়তে চাননি কলেজ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটা বড় অংশ। তৃণমূল প্রভাবিত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপার অবশ্য দাবি, এ সবই কুত্সা-অপপ্রচার। বাম-আমলেই শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্যের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। এখন বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ঘটে। এবং সে সব কড়া হাতেই দমন করা হয়। পালাবদলের পর জেলার ঘাটাল কলেজ, গড়বেতা কলেজ, কমার্স কলেজ, খড়্গপুর কলেজ, হিজলি কলেজ, বেলদা কলেজেও ছাত্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পঠনপাঠন ব্যাহত হয়েছে।
টিচার-ইন-চার্জ নিয়োগ করে কলেজ পরিচালন সমিতি। রাজ্যের বেশির ভাগ কলেজেই এই মুহূর্তে তৃণমূল প্রভাবিত কলেজ পরিচালন সমিতি রয়েছে। ওয়াকিবহল মহলের মত, টিচার-ইন-চার্জদের নিয়োগ কর্তা যেহেতু পরিচালন সমিতি সেহেতু তাদের প্রতি একটা দায়বদ্ধতা থেকেই যায়। অনেক টিচার-ইন-চার্জ পরিচালন সমিতির কোনও সিদ্ধান্ত মনোমত না হলেও প্রতিবাদ করার সাহস দেখান না। রাজনীতির সুবাদে অনেক কলেজেই পরিচালন সমিতির সঙ্গে ছাত্র সংসদের সুসম্পর্ক থাকে। ফলে টিচার-ইন-চার্জ ছাত্র সংসদের কোনও অন্যায় দেখলেও অনেক ক্ষেত্রে তেমন জোরদার প্রতিবাদ করতে চান না। ছাত্র সংসদ কিংবা পরিচালন সমিতির বিরাগভাজন হয়ে টিচার-ইন-চার্জ পদত্যাগ করেছেন— এমন উদাহরণও রয়েছে। ‘‘কলেজে স্থায়ী অধ্যক্ষ থাকলে এই প্রবণতায় অনেকটাই রাশ টানা যায়’’— মত বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিকের।
বিদ্যাগার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সূত্রে খবর, অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলেও কিছু কলেজে অবশ্য অধ্যক্ষ পদ শূন্যই থাকবে। কারণ, অধ্যক্ষ পদে প্রার্থী মেলেনি। সেখানে টিচার-ইনচার্জদেরই আপাতত দায়িত্ব সামলে যেতে হবে।