Advertisement
২৪ মে ২০২৪

পুলিশ ঠুঁটো, কান ঝালাপালা দীপাবলিতেও

শব্দবাজির দৌরাত্ম্যে কালীপুজোকে ছাপিয়ে গেল দীপাবলির রাত। মোড়ের মাথায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তবে সেখান থেকে কয়েক হাত দূরে অবাধে ফেটে চলেছে নিষিদ্ধ শব্দবাজি। রবিবার, দীপাবলির রাতে এই ছবি দেখা গেল মিশ্র ভাষাভাষির শহর খড়্গপুরে। মেদিনীপুরেও এক ছবি। রাত যত বেড়েছে, দাপটও তত বেড়েছে শব্দদৈত্যের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর ও খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৬ ০০:২২
Share: Save:

শব্দবাজির দৌরাত্ম্যে কালীপুজোকে ছাপিয়ে গেল দীপাবলির রাত।

মোড়ের মাথায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তবে সেখান থেকে কয়েক হাত দূরে অবাধে ফেটে চলেছে নিষিদ্ধ শব্দবাজি। রবিবার, দীপাবলির রাতে এই ছবি দেখা গেল মিশ্র ভাষাভাষির শহর খড়্গপুরে। মেদিনীপুরেও এক ছবি। রাত যত বেড়েছে, দাপটও তত বেড়েছে শব্দদৈত্যের।

শহরে দফায় দফায় অশান্তির পরিবেশে এ বার সব ধরনের শব্দবাজি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল খড়্গপুরে। কিন্তু মহকুমাশাসকের সেই নিষেধাজ্ঞা কার্যত প্রহসনে পরিণত হয়। অন্য বছরের তুলনায় দাপট কিছুটা কম হলেও খড়্গপুরের বিভিন্ন এলাকায় রবিবার সন্ধে থেকে রাত, দফায় দফায় শব্দবাজি ফেটেছে। এমনকী বাড়ির পুজোর বিসর্জনের শোভাযাত্রাতেও শব্দবাজি ফাটানো হয়েছে অবাধে। আর চুপ করে বসে কান চাপা দিয়েছেন পুলিশকর্মীরা। লঙ্কা পটকা, দেওয়াল পটকা, চকোলেট বোমা থেকে দোদমা, ডবল শট্‌ কোনও কিছু বাকি ছিলনা। খড়্গপুরের সুভাষপল্লি, খরিদা, রাজগ্রাম, ভবানীপুর, গোপালনগর, সোনামুখি, তালবাগিচা, প্রেমবাজার, আয়মা, বিদ্যাসাগরপুরে দেদার বাজি ফেটেছে। এমনকী খরিদা রেলগেটের কাছে পুলিশ মোতায়েন থাকলেও ৫০ মিটারের মধ্যে অবাধে ফেটেছে শব্দবাজি, পুলিশ কিচ্ছু করেনি। রাজগ্রামের বাসিন্দা গৃহবধূ দেবশ্রী দাম বলেন, ‘‘স্বামীর সঙ্গে বেরিয়ে শহরের প্রায় সর্বত্র শব্দবাজির দৌরাত্ম্য দেখেছি। পুলিশ বসে থাকলেও ধরপাকড় চোখে পড়েনি।”

অবাঙালি অধ্যুষিত এলাকার পাশাপাশি শব্দবাজির দাপট দেখা গিয়েছে তালবাগিচা, প্রেমবাজারেও। প্রেমবাজারের বাসিন্দা সাহিত্যক তপন তরফদার বলেন, “দীপাবলিতে প্রচুর শব্দবাজির আওয়াজ পেয়েছি। রাত দশটার পরে পুলিশ যেন ময়দান ছেড়ে দিয়েছিল। রাত একটা পর্যন্ত আযথেচ্ছ শব্দবাজি ফেটেছে।” বিদ্যাসাগরপুরের সোমা সেনগুপ্তও বলছেন, “শব্দবাজিতে প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কার্যকর হয়নি।”

দীপাবলির সন্ধে থেকেই মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকাতেও শব্দবাজি ফাটানো হয়েছে। রাতে বিভিন্ন এলাকায় শব্দের মাত্রা ৯০ ডেসিমেল ছাড়ায়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে নিমতলাচক, বটতলাচক, বড়বাজার, সাহাভড়ংবাজার, শরৎপল্লি, বিধাননগর, কুইকোটা, হবিবপুরে বাসিন্দাদের কান ঝালাপালা হয়েছে। পুলিশি নজরদারির ফাঁক গলে মেদিনীপুর শহর এবং শহরতলিতে প্রচুর শব্দবাজি ঢুকে পড়েছিল আগেই। সদর ব্লকের ছেড়ুয়ায় বাজি তৈরির এলাকায় গতবার যে রকম পুলিশি নজরদারি ছিল, এ বার তা ছিল না। ফলে, সেখান থেকে নিষিদ্ধ বাজি ঢুকেছে শহরে। এবং শনিবার, কালীপুজোর সন্ধে থেকেই দেদার শব্দবাজি ফাটা শুরু হয়। ছবিটা এতটুকু বদলায়নি দীপাবলির রাতে। বরং রবিবার শব্দদৈত্যের দাপট আরও বাড়ে। বিধি-নিষেধের তোয়াক্কা না করেই সশব্দে বাজি ফেটেছে রাতভর। মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা স্বপন দাস, সুদীপ পাত্রদের কথায়, “এ বার শব্দদূষণের বিরুদ্ধে পুলিশকেও সেই ভাবে তৎপর হতে দেখা যায়নি।”

যদিও জেলা পুলিশের এক কর্তার বক্তব্য, “নিষিদ্ধ শব্দবাজি এ বার শহরে কম ফেটেছে। যে সব এলাকা থেকে শব্দদূষণের নালিশ এসেছিল, সেখানে সঙ্গে সঙ্গে পৌঁছেছে পুলিশ। তারপর আর ওই সব এলাকায় বাজি ফাটেনি।” আর খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্য এ জন্য শহরবাসীকে দায়ী করেছেন। তাঁর কথায়, “নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার কথা ছিল পুলিশের। পুলিশ বিষয়টি দেখেছে। তবে মানুষ সচেতন নন। তাই শব্দদানবকে বেছে নিয়েছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sound pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE