Advertisement
১৩ অক্টোবর ২০২৪
Flood Situations at Ghatal

বানের জল পেরিয়ে ৩৬২ জন অন্তঃসত্ত্বাকে উদ্ধার পুলিশের, ঘাটালে মা হলেন ২৪৫ জন, ‘অপেক্ষায়’ ১১৭

পুলিশ সূত্রে খবর, গত আট দিনে মা হয়েছেন ২৪৫ জন মহিলা। তাঁরা সকলেই ভাল আছেন। এলাকা থেকে বানের জল নেমে যাওয়ায় বেশ কয়েক জন সন্তান নিয়ে বাড়িও ফিরে গিয়েছেন।

Ghatal Hospital

অন্তঃসত্ত্বাদের খবরাখবর নিতে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরী, পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকারেরা। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
ঘাটাল শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২২:০০
Share: Save:

যে দিকে চোখ যায় শুধু জল আর জল! হঠাৎ প্রসব যন্ত্রণা হলে কী করবেন, ভেবে কূল পাচ্ছিলেন না ঘাটালের প্রায় সাড়ে তিনশো প্রসূতি এবং তাঁদের পরিবার। কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁদের মা হওয়ার কথা ছিল। সেই সময় ‘মসিহা’ হয়েছিল জেলা পুলিশ-প্রশাসন। প্রসূতিদের তালিকা তৈরি করে স্পিড বোট নিয়ে বন্যাবিধ্বস্ত এলাকায় বাড়ি বাড়ি পৌঁছে গিয়েছিলেন পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিক ও কর্মীরা। তাঁদের উদ্ধার করা হয়েছিল। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার জানিয়েছেন, এমন ৩৬২ জন অন্তঃসত্ত্বাকে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। গত আট দিনে তাঁদের মধ্যে ২৪৫ জন সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। মা-সন্তান সকলেই সুস্থ রয়েছেন। বাকি ১১৭ জন অন্তঃসত্ত্বার চিকিৎসায় যাতে কোনও রকম অসুবিধা না-হয়, সেই ব্যবস্থা করেছে পুলিশ-প্রশাসন।

প্রসূতিদের থাকা-খাওয়া এবং চিকিৎসায় কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না, সেই খোঁজখবর নিতে মঙ্গলবার ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে গিয়েছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরী, পুলিশ সুপার ধৃতিমান, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গীরা। ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের ‘মাদারস্ হাব’ এবং প্রসূতি বিভাগ পরিদর্শন করে ওই বিভাগে চিকিৎসাধীন মহিলাদের হাতে শাড়ি তুলে দেন তাঁরা। পাঁচ সদ্যোজাতের মায়ের হাতে ফল এবং কিছু দরকারি জিনিস তুলে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন রোগীর পরিজনেরা। খুশি অন্তঃসত্ত্বরাও।

ঘাটালে বন্যায় জল থইথই চতুর্দিক। তার মধ্যে কাউকে ট্র্যাক্টরে চাপিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কোনও কোনও অসুস্থ মানুষ অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের কর্মীদের সহায়তায় স্পিড বোটে চেপে বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতির মধ্যে হাসপাতালে যান। আশাকর্মী, চিকিৎসক, সিভিল ডিফেন্সের কর্মী-সহ প্রশাসনিক কর্তারা এগিয়ে এসেছিলেন অন্তঃসত্ত্বাদের সাহায্য করতে। জেলা প্রশাসনের সূত্রে খবর, এলাকা থেকে বানের জল নেমে যাওয়ায় ৫৬ জন মা সন্তানকে নিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। অন্তত ৩০ জন মা এখন ‘মাদারস্ হাব’-এ চিকিৎসাধীন।

জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরি বলেন, ‘‘বন্যা পরিস্থিতির সময় আশাকর্মীদের কাছ থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পরেই সন্তানসম্ভবাদের উদ্ধারের জন্য স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়েছিল পুলিশ এবং মহকুমা প্রশাসন। ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে ছাড়াও অন্যত্র ভর্তি করানো হয়েছে বেশ কয়েক জনকে।’’ তিনি জানান, বন্যার কারণে অনেকে হয়তো পর্যাপ্ত পোশাক নিয়ে আসতে পারেননি। তাঁদের এবং নবজাতকদের জন্য পোশাকের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার বলেন, ‘‘পুলিশ, সিভিল ডিফেন্স, স্বাস্থ্য দফতর, রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী— সকলের সহযোগিতায় এই কাজটা করতে পেরেছি আমরা।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE