Advertisement
২১ মার্চ ২০২৩
নজরে মেদিনীপুর

কাগজ কলের বিষ জল চাষজমিতে, কমছে ফলন

খালের জলে ধুসর ফেনা। সঙ্গে তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ। দু’পাশের চাষজমিতেও পলির মতো রাসায়নিক পদার্থের স্তর জমে রয়েছে। ঘটনাস্থল ঝাড়গ্রাম ব্লকের মানিকপাড়া পঞ্চায়তের এলাকা।

চাষজমিতে ঢুকছে দূষিত জল। মানিকপাড়ার ইন্দ্রবেনিতে।—নিজস্ব চিত্র

চাষজমিতে ঢুকছে দূষিত জল। মানিকপাড়ার ইন্দ্রবেনিতে।—নিজস্ব চিত্র

কিংশুক গুপ্ত
মানিকপাড়া শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:২১
Share: Save:

খালের জলে ধুসর ফেনা। সঙ্গে তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ। দু’পাশের চাষজমিতেও পলির মতো রাসায়নিক পদার্থের স্তর জমে রয়েছে। ঘটনাস্থল ঝাড়গ্রাম ব্লকের মানিকপাড়া পঞ্চায়তের এলাকা। এই গ্রাম পঞ্চায়েতের গোটা দশেক গ্রামের প্রায় বারোশো একর চাষজমি স্থানীয় এক কাগজ কলের বর্জ্য জলে উর্বরতা হারিয়ে ফেলেছে বলে অভিযোগ। গত দশ বছর ধরে এই সমস্যা চলছে। সম্প্রতি দূষণের মাত্রা আরও বেড়েছে।

Advertisement

দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাগজপত্র অবশ্য বলছে ‘সব ঠিক আছে’। আর তাতেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে, স্থানীয় কালাঝরিয়া, ইন্দ্রাবনি, ধাতকিনালা, বারোবিঘা, সীতাভুলা, জলজলি রাধামহুলির মতো গ্রামগুলির বাসিন্দাদের মধ্যে। মানিকপাড়ার ওই সব গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া রাঙ্গির খাল এক সময় এলাকার ‘লাইফ লাইন’ ছিল। কাগজ কলের দূষিত বর্জ্য জল নিয়মিতভাবে ওই খালেই ফেলা হচ্ছে। এতে খালটি মজে গিয়েছে। এবং দূষিত জল পার্শ্ববর্তী চাষ জমিতে গিয়ে পড়ছে। ফলে, চাষিরা সেচের জল পাচ্ছেন না। নিত্য ব্যবহারের জলও অমিল হয়ে উঠেছে। বিষ জলের ছোঁয়ায় ছড়াচ্ছে চর্মরোগ, বিষ জল পান করে গবাদি পশুর মৃত্যু হচ্ছে বলেও অভিযোগ।

ইন্দ্রাবনি গ্রামের শ্যামল মাহাতো, অচিন্ত্য মাহাতো, জলজলির উপেন্দ্রনাথ মাহাতো, রাধামহুলির গুরুচরণ মাহাতোরা বলছিলেন, “আগে খালের জল পাম্পে তুলে সেচ দেওয়া হত। কিন্তু বিষ জলে ফসল মরে যাচ্ছে। খালের জলে থকথকে নোংরা থাকায় পাম্পগুলি অকেজো হয়ে যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে সেচ বাঁধগুলির জলও।’’ এই পরিস্থিতিতে বৃষ্টিনির্ভর ধান চাষটুকু হচ্ছে। জলাভাবে সব্জি ও তৈলবীজ চাষ করা যাচ্ছে না। চাষিদের দাবি, আগে যেখানে বিঘে প্রতি দশ কুইন্ট্যাল ফলন হত, এখন তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। জলজলি গ্রামের চৈতন মাহাতো আবার বললেন, “মাস দু’য়েক আগে খালের জল পানের পরে আমার তিনটে ছাগল মরে গিয়েছে।” ইন্দ্রাবনির শ্যামল মাহাতোর দু’টো গরুও মারা গিয়েছে। ইন্দ্রাবনির বধূ মাধুরী মাহাতো, জলজলির সমলা মাহাতোরা বলেন, ‘‘খালের জলে জামাকাপড় কাচলে কিংবা বাসন মাজলে চর্মরোগ হচ্ছে। পরিস্থিতি যেখানে এত ভয়ঙ্কর, সেখানে মানিকপাড়ার কাগজকলটি কী ভাবে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্র পাচ্ছে সেটাই প্রশ্ন! ইন্দ্রাবনির বাসিন্দা পেশায় ঝাড়গ্রাম আদালতের আইনজীবী অবনী মাহাতো বলেন, “এই বিষয়টি আমাদেরও বোধগম্য হচ্ছে না। বহুবার অভিযোগ জানিয়েও সমস্যার কোনও সুরাহা হয়নি।” চাষিদের অভিযোগ, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের লোকজন কারখানায় পরিদর্শনে এলে তখন বর্জ্য জল পরিশোধন যন্ত্রগুলি চালানো হয়। অন্য সময় সেগুলি বন্ধ রাখা হয়। তাই এই পরিস্থিতি। কারখানার ম্যানেজার শিবশঙ্কর নন্দ অবশ্য অভিযোগ মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “আমরা নিয়মিত বর্জ্য জল ট্রিটমেন্ট করছি। বেশিরভাগ জল পরিশোধন করে উৎপাদনের কাজে লাগানো হচ্ছে। অভিযোগ একেবারে ভিত্তিহীন।” শিবশঙ্করবাবুর দাবি, সামান্য জল বাইরে ছাড়া হয়। হয়তো কোথাও জল আটকে গিয়ে নোংরা হয়েছে। সেটাকেই বড় করে দেখানো হচ্ছে। ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক নকুলচন্দ্র মাহাতোর আশ্বাস, “অভিযোগ খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।”

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.