Advertisement
E-Paper

রাস্তায় পড়ে সিরিঞ্জ-গজ, ছড়ায় দূষণ

হাসপাতাল, নার্সিংহোম ও ডায়গনোস্টিক সেন্টারগুলির মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কড়া নির্দেশ রয়েছে।

আনন্দ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৪৭
তমলুক হাসপাতালে জরুরি বিভাগের সামনে পড়ে বর্জ্য।

তমলুক হাসপাতালে জরুরি বিভাগের সামনে পড়ে বর্জ্য।

দৃশ্য ১: হাসপাতালের মেল সারজিক্যাল বিভাগের দেওয়ালের পিছনে ফাঁকা জায়গায় পড়ে রয়েছে পরিত্যক্ত স্যালাইনের বোতল-নল,। জরুরি বিভাগের কাছে দেওয়াল ঘেঁষে যাওয়া তারে লেগে ঝুলছে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের গ্লাভস। হাসপাতাল সংলগ্ন নিকাশিনালায় ভাসছে ফেলে দেওয়া ওষুধের শিশি থেকে নানা বর্জ্য। দুর্গন্ধে নাকে রুমাল চাপা দিয়ে পাশেই বিশ্রামরত রোগীর পরিজনরা। পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক জেলা হাসপাতালে গেলে নজরে পড়বে এমনই সব ছবি।

দৃশ্য ২: ব্যস্ত সড়কের পাশেই নার্সিংহোম। প্রতিদিন সকালে সেই নার্সিংহোমের যাবতীয় বর্জ্য বালতি ভরে এনে ফেলে দেওয়া হয় সড়কের পাশেই খোলা জায়গায়। রক্ত মাখা তুলো, সূচ-সিরিঞ্জ-গজ কাপড়ের টুকরো থেকে কী নেই সেখানে! তার পাশ দিয়েই নাকে রুমাল চাপা দিয়ে হেঁটে যাতায়াত করছেন পথচারীরা। এই ছবিও তমলুক শহরের শঙ্করআড়া এলাকায়।

হাসপাতাল, নার্সিংহোম ও ডায়গনোস্টিক সেন্টারগুলির মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কড়া নির্দেশ রয়েছে। পর্ষদের নির্দেশিকা অনুযায়ী বায়ো মেডিক্যাল বর্জ্য ভরতে হবে লাল, হলুদ ও সবুজ প্ল্যাস্টিকের প্যাকেটে। হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলি ওই সব বায়ো মেডিক্যাল বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে রাখবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ওই বায়ো মেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহ করে বিজ্ঞানসম্মতভাবে নষ্ট করে ফেলবে। আর বায়ো মেডিক্যাল নয় এমন বর্জ্য কালো প্যাকেটে ভরে রাখতে হবে। পুরসভার কর্মীরা তা সংগ্রহ করবেন। কিন্তু এমন নিয়ম থাকলেও তমলুক জেলা হাসপাতাল এবং শহরের অধিকাংশ নার্সিংহোমের সংলগ্ন এলাকায় আবর্জনা ফেলে রাখার এমন ছবি গা সওয়া হয়েছে গিয়েছে রোগীপ পরিজন থেকে শহরের বাসিন্দাদের। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শহরের যত্রতত্র এ ভাবে মেডিক্যাল আবর্জনা ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ।

তমলুক জেলা হাসপাতালের সুপার গোপাল দাসের অবশ্য দাবি, ‘‘হাসপাতালের মেডিক্যাল বর্জ্য নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে প্যাকেটে ভরে নির্দিষ্টস্থানে জমা করা হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ওই বর্জ্য সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। তা ছাড়া হাসপাতাল চত্বরের আবর্জনাও নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়।’’

শহরে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৪০টি নার্সিংহোম রয়েছে। এই সব নার্সিংহোমের মেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহের দায়িত্বে রয়েছে হলদিয়ার একটি সংস্থা। অথচ তার পরেও নার্সিংহোমগুলির একাংশ তাদের মেডিক্যাল বর্জ্য প্যাকেটে না ভরে রাস্তার ধারে ভ্যাটে কিংবা খোলা জায়গায় ফেলে রাখে বলে অভিযোগ। অভিযোগ যে নেহাত অমূলক নয় তা মেনে নিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুর ডিস্ট্রিক্ট নার্সিংহোম ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কানাই দাস। তিনি বলেন, ‘‘নার্সিংহোমের মেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহ করার দায়িত্ব হলদিয়ার একটি সংস্থার। এর ওই সংস্থা নির্দিষ্ট হারে টাকাও নেয়। সপ্তাহে ৬ দিন বর্জ্য সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়ার নিয়ম থাকলেও সপ্তাহে তিন-চারদিনের বেশি ওই সংস্থার গাড়ি আসে না। ফলে নার্সিংহোমগুলিকে অসুবিধায় পড়তে হয়। তবে নার্সিংহোমগুলি যাতে মেডিক্যাল বর্জ্য খোলা জায়গায় না ফেলে সে জন্য তাদের সতর্ক করা হয়েছে।’’

তমলুকের পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ সেন বলেন, ‘‘শহরের কিছু নার্সিংহোম মেডিক্যাল বর্জ্য রাস্তার ধারে বা ভ্যাটে ফেলে দিচ্ছে বলে বার বার অভিযোগ আসছে। নার্সিংহোমগুলিকে এ বিষয়ে একাধিকবার সতর্কও করা হয়েছে।’’

Medical Pollution Environment
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy