নির্মল জেলার তকমা পেয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর। অথচ জেলারই সবচেয়ে বড় শহর হলদিয়া ও সংলগ্ন এলাকার কোনও শ্মশানে নেই বৈদ্যুতিক চুল্লি। এখনও কাঠের চুল্লিতেই দাহ করা হয় শবদেহ।
হলদিয়া, নন্দীগ্রাম ও মহিষাদলে মোট চারটি শ্মশান রয়েছে। এর মধ্যে মহিষাদলের শ্মশানটি সবচেয়ে পুরনো হলে এখানে পরিকাঠামোর মানোন্নয়নের কাজ হয়নি। হলদিয়ার দু’টি শ্মশান রয়েছে টাউনশিপ এলাকার রায়রায়নারচক ও দুর্গাচক থানার অন্তর্গত খঞ্জনচকে। যদিও এই শ্মশানগুলির কোনওটিতে নেই বৈদ্যুতিক চুল্লি। কাঠের চুল্লিতে দেহ পোড়ানোয় চারিদিকে ছড়িয়ে থাকে ছাই, বর্জ্য পদার্থ। তা থেকে ‘গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি’ হলদিয়ায় ছড়াচ্ছে দূষণও।
কাঠের চুল্লির দূষণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালের বিশিষ্ট চিকিৎসক নিউটন দাসও। তিনি বলেন, “কাঠের চুল্লিতে দেহ দাহ করলে দূষণের মাত্রা বাড়ে। ছাই, পোড়া কাঠ থেকেও দূষণ ছড়ায়। ফলে শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’’
শিমূলবেড়িয়া উচ্চ মাধ্যমিক হাইস্কুলের জীববিজ্ঞানের শিক্ষক চম্পককুসুম মিশ্র বলেন, কাঠের চুল্লিতে মৃতদেহ দাহ করা হলে কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড গ্যাস নির্গত হয়। এর ফলে শ্মশান সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ফুসফুসের সমস্যা, হাঁপানির সমস্যা বাড়ে। পোড়়ানোর সময় মৃতদেহ থেকে নির্গত জল বাষ্পীভূত হয়। সেই বাষ্প শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে দেহে প্রবেশ করলে এমফাইসেমা রোগ হওয়ার সম্ভাবনা হতে পারে। এমফাইসেমা হল শ্বাসনালিত জটিল সংক্রমণ। যা থেকে হৃৎপিন্ডের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
অভিযোগ, শ্মশানগুলিতে নিয়মিত সাফাইও করা হয় না। ফলে একটি দেহ দাহ করার পর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই পরের মৃতদেহ দাহ করা হয়। প্রতিটি শ্মশানে নিরাপত্তারক্ষী থাকার কথা থাকলেও অধিকাংশ সময়ই তাঁরা থাকে না
বলে অভিযোগ।
টাউনশিপ এলাকার বাসিন্দা তথা ব্যবসায়ী নিতাই ধারা বলেন, “শ্মশানগুলিতে এখনও কেন বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানো যাচ্ছে না জানিনা। প্রযুক্তির যুগেও আমরা ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছি।’’ শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানোর ব্যাপারে আশ্বাস দিচ্ছেন হলদিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান দেবপ্রসাদ মণ্ডল। তিনি জানান, ইতিমধ্যেই বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। দ্রুত কাজ হবে। ছবি: আরিফ ইকবাল খান।