কবে চালু হবে দমকল কেন্দ্র, এখন প্রশ্ন সেটাই। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
সৌন্দর্য আর আমোদের পিছনে মন্দারমণির নিতান্ত অস্থিসার চেহারাটা ধরা পড়েছে দিন কয়েক আগেই। তবে শুধু মন্দারমণিতে পযর্টক মৃত্যুই শেয নয়। দিঘার বাজারও হয়ে রয়েছে জতুগৃহ। দিঘা, মন্দারমণি, তাজপুর বা শঙ্করপুর— বাইরে থেকে সৌন্দর্যায়ন আর পর্যটক টানার চেষ্টার শেষ নেই কোথাও। কিন্তু ভিতরে ভিতরে পুরোটাই যে পোকায় কাটা, তা দিব্যি বোঝা যায় ঘুরে দেখলেই।
হোটেল, লজ, মার্কেট কমপ্লেক্স, ব্যাঙ্ক, পেট্রোল পাম্প নিয়ে প্রায় জতুগৃহ হয়ে উঠেছে এই পর্যটনকেন্দ্রগুলো। তার উপর রয়েছে ছোট ব্যবসায়ীদের ভিড়। সৈকত পর্যটন কেন্দ্রের আকর্ষণ মূলত ঝিনুকের উপর। সৈকত বা সৈকতের আশেপাশে হোগলা, টিন, দরমার দোকান ঘর বানিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দিব্যি পসরা সাজান। এ গুলি অত্যন্ত বিপজ্জনক। তা ছাড়া প্রতিদিনই গড়ে উঠছে ফাস্ট ফুডের দোকান। সৈকতে বা ঘিঞ্জি এলাকায় এ ভাবে কেরসিনের স্টোভ বা ছোট গ্যাসের উনুন জ্বালিয়ে রান্না করাটা বেআইনি। কিন্তু আইন মানে কে?
হোটেল গুলির ভিতরেও কোনও রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। অগ্নিনির্বাপণের কোনও সরঞ্জাম নেই প্রায় ৮০ শতাংশ হোটেলেই। নেই কোনও আপৎকালীন দরজা। দিঘা বা মন্দামমণির ৯০ শতাংশ হোটেলেই একটি মাত্র দরজা। সিঁড়িও যথেষ্ট অপ্রশস্ত। কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে পর্যটকদের বের করে আনা হবে কী ভাবে তা ভাবতেই কেটে যাবে অনেকটা সময়। বাইরের চাকচিক্য যতই থাক, সব হোটেলেই রান্নাঘরের পাশেই ডাঁই করে রাখা থাকে নানা রকম আবর্জনা।
এমনকী আগুন লাগলে তা মোকাবিলা করার জন্য কোনও রকম ব্যবস্থাই নেই সরকারি তরফে। আজও এই বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র গুলিকে নির্ভর করে থাকতে হয় কমবেশি ৩৫ কিলোমিটার দূরে কাঁথির উপরই।
সৈকত পর্যটনকেন্দ্রগুলির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে বাম আমলের শেষদিকে দিঘার কাছে নিমতলায় একটি দমকল কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ২০১১ সালের ১০ জানুয়ারি নিমতলায় প্রস্তাবিত দমকল কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনও করেন তৎকালীন দমকলমন্ত্রী প্রতিম চট্টোপাধ্যায়। সেই কেন্দ্র আজও চালু হয়নি।
দিঘা-কলকাতা সড়কের ধারে মাঠের মধ্যেই দেখা যায় নীল-সাদা বাড়িটি। কিন্তু কোনও কাজই এগোয়নি। কবে থেকে শুরু হবে ওখানকার কাজ, জানেন না কেউই। এ দিকে দমকলকেন্দ্র চালু না হওয়ার দায় একে অপরের ঘাড়ে চাপাচ্ছেন প্রাক্তন এবং বর্তমান উভয় শাসকদলই।
রামনগরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক স্বদেশ নায়কের অভিযোগ, “বিস্তর ছোটাছুটি করার পর রাজ্য সরকারের অনুমতি পেয়েছিলাম নিমতলায় দমকল কেন্দ্র তৈরির। কাজ শুরুও হয়েছিল, কিন্তু ভোটের সময় তা বন্ধ হয়ে যায়। আর কাজ এগোয়নি। চার বছরেও কেন্দ্রটি চালু করতে পারল না তৃণমূল।’’ তাঁর কথা অনুযায়ী দিঘা আর রামনগরের মাঝে নিমতলায় ৫৩ ডেসিমিল খাস জমির উপর দমকল কেন্দ্রের জন্য তৎকালীন রাজ্য সরকার ১কোটি ৬০লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছিল। এমনকী প্রস্তাবিত জমিটি ভরাট করার জন্য বিধায়ক তহবিল থেকে ৮লক্ষ টাকা তিনি দিয়েছেন বলে দাবি স্বদেশবাবুর।
একই ভাবে দলের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য আশিস প্রামাণিক আক্রমণ করেছেন শাসকদলকে। তাঁর কথায়, “বাম আমলে স্থাপিত শিলা ফলকটিও তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা রাতের অন্ধকারে খুলে নিয়ে নির্লজ্জ দলবাজীর নমুনা রেখেছে। অথচ কোনও কাজ করেনি তারা। এখন বিধানসভা ভোটের আগে কোনও রকমে অসম্পূর্ণ অবস্থাতেই উদ্বোধন করে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে তারা।’’
স্বাভাবিক ভাবেই যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রামনগর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নিতাই সার বলেন, “বাম আমলে শুধু শিলান্যাসই করা হয়েছিল। দমকল কেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন বা আর্থিক বরাদ্দ কোনও কিছুই ছিল না। তৃণমূল ক্ষমতায় এসে নতুন করে প্রায় ২কোটি ২২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে। দমকল ভবন ও কর্মীদের আবাসন তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। আগামী দিনে মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধনও করবেন।’’
তবে সাধারণ মানুষের এত হিসাব নিকাশে কাজ নেই। তাঁরা জানতে চান ঠিক কবে চালু হবে দমকল কেন্দ্রটি? স্পষ্ট জানাতে পারেননি কেউই। দমকলের ডিভিশন অফিসার তরুণ সিংহ বলেন, “সম্প্রতি দমকলের ডিজি নিজে গিয়ে নির্মাণের কাজ দেখে এসেছেন। ভবনটি তৈরি হয়ে গেলও বিদ্যুৎ, পাম্প, রাস্তা নির্মাণের কাজ বাকি। চারপাশের নিচু জমি ভরাটও করা হয়নি। ফলে এ গুলি না হলে বলা সম্ভব নয় কবে কেন্দ্রটি চালু হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy