Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Student

প্রধান শিক্ষকের হাত ধরে স্বপ্ন দেখছে তিন দুঃস্থ পড়ুয়া

টাকার অভাবে পড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম।পাশে দাঁড়ালেন এক স্কুলশিক্ষক। তাঁর হাত ধরেই এখন স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে যেতে চান তিন ছাত্রী।

ছাত্রীদের সঙ্গে মণীন্দ্রবাবু। নিজস্ব চিত্র

ছাত্রীদের সঙ্গে মণীন্দ্রবাবু। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদাতা
হলদিয়া শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৮ ০৭:৩০
Share: Save:

তিন কন্যা। তিন কন্যারই টাকার অভাবে পড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম। কিন্তু তাঁদের পাশে দাঁড়ালেন এক স্কুলশিক্ষক। তাঁর হাত ধরেই এখন স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে যেতে চান ওই তিন কন্যা।

হলদিয়ার ঢেকুয়ার বাসিন্দা সোমা দলুইয়ের বাবা প্রদীপ দলুই কয়েক মাস আগে ক্যানসারে মারা যান। এবছরই উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে কলেজে প্রথমবর্ষে ভর্তি হয়েছেন সোমা। বাবার মৃত্যুর পরে আর্থিক অনটনে তাঁর কলেজে পড়া অনিশ্চিত হয়েছিল।

কুকড়াহাটি হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী মন্দিরা দলুই বাবা-মা দু’জনকেই হারিয়েছে। বাবা দেবানন্দ দলুই বছর তিনেক আগে ক্যানসারে মারা যান। আর মাস তিনেক আগেই মারা গিয়েছেন মা সুমিত্রা দলুই। বর্তমানে তিন বোনের সংসার কার্যত চলেছে চেয়ে চিন্তে। এই অবস্থায় উচ্চশিক্ষা মন্দিরার কাছে বিলাসিতা বলেই মনে হয়েছিল।

সাহাপুরের অতসী মণ্ডলের দু’মাস আগে বাবা মারা যান। তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছিল অতসীর মা পার্বতী মণ্ডলের। দশম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী অতসীর পড়াশোনার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল।

তিন কিশোরীকেই সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন কুকড়াহাটির ঢেকুয়ার বিবেকানন্দ অগ্রণী সংঘ হাইস্কুল প্রধান শিক্ষক মণীন্দ্রনাথ গায়েন। ওই শিক্ষকই তিনজনের উচ্চশিক্ষার খরচ বহন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মণীন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘টাকার অভাবে পড়া বন্ধ হয়ে যাবে, এটা আমাকে ভাবিয়ে তুলেছিল। শুধুমাত্র একবার সাহায্য নয়, ওরা যতদূর পড়তে চায় পড়তে পারে। তিনজনেরই উচ্চশিক্ষার দায়িত্ব আমি সাগ্রহে নিয়েছি। আমি চাই ওরা নিজের পায়ে দাঁড়াক।’’

সাহায্য পেয়ে আপ্লুত তিন কন্যাই। মন্দিরা বলে, ‘‘ভাবতেই পারছি না স্যার এভাবে পাশে দাঁড়াবেন। স্যার না থাকলে আমাদের সংসার ভেসে যেত।’’ একই কথা কলেজ পড়ুয়া সোমার মুখে। সোমার বক্তব্য, ‘‘স্যারের জন্যই তো কলেজের মুখ দেখলাম। কলেজে ভর্তি হয়েছি। পুলিশের চাকরি করতে চাই।’’

মণীন্দ্রনাথবাবুর ওই পদক্ষেপে গর্বিত স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষিকারা। স্কুলের বাংলার শিক্ষক তরুণকান্তি বৈদ্য বলেন, ‘‘স্যারের মানবিক মুখ নিয়ে আমরা গর্বিত।’’

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু দুঃস্থদের পাশে দাঁড়ানো নয়, মণীন্দ্রনাথবাবু অন্য ছাত্রছাত্রীদেরও খেয়াল রাখেন। তাঁর উদ্যোগে প্রতি মাসের কোনও একটি শনিবার সেই মাসে যে ছাত্রছাত্রীর জন্মদিন রয়েছে, তা ঘটা করে স্কুলে পালন করা হয়। মণীন্দ্রনাথবাবু কেক আনান স্কুলে। আর যাদের জন্মদিন, তাদের দেওয়া হয় কলম এবং বই। আর বাকি পড়ুয়াদের দেওয়া হয় চকলেট।

মণীন্দ্রবাবুর কথায়, ‘‘গরিব বাড়ির ছেলেমেয়েরা স্কুলে পড়ে। ওদের মনের ইচ্ছা পূরণ করতেই এ সবের আয়োজন। তার বেশি কিছু নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education Social work Student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE