ভিড় নেই চৈত্র সেলের বাজারে। মেদিনীপুরের বড়বাজারে। —নিজস্ব চিত্র।
চৈত্র সেলের মরসুম শুরু হয়েছে। নানা পসরা কম দামে দিতে প্রস্তুত ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সে ভাবে ক্রেতার দেখা মিলছে না। ব্যবসায়ীদের ধারণা, আলু চাষে দাম না পাওয়াতেই এই পরিস্থিতি।
ঘাটাল মহকুমা-সহ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার একটা বিস্তীর্ণ অংশের অর্থনীতি কৃষি নির্ভর। কৃষকদের একটা বড় অংশ আলু চাষ করেন। কিন্তু এ বার আলুর ফলন মাত্রাতিরিক্ত হওয়ায় দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। ফলে, চাষিদের হাতে টাকা নেই। তাই অন্যান্য বার যেমন আলু বিক্রির টাকায় এই সময়টা তাঁরা চৈত্র সেলের কেনাকাটা করেন, সেটা এ বার হচ্ছে না। ফলে, মার খাচ্ছেন জামাকাপড়-সহ অন্য জিনিসের ব্যবসায়ীরা। চৈত্র সেলের বাজারে যেটুকু ভিড় করছেন তা শহরের চাকুরিজীবী মানুষজন।
ঘাটাল বাজার বন্ধ থাকে রবিবার। চৈত্র সেলের সময়টা অবশ্য রবিবার দোকান খোলা থাকে। এ বারও ব্যবসায়ীরা দোকান খোলা রাখছেন। কিন্তু ক্রেতা কোথায়? ঘাটালের বস্ত্র ব্যবসায়ী তপন গুঁই বলেন, ‘‘কী আর বলব, আলুর দাম না থাকায় এবার চৈত্র সেল বলে বোঝায় যাচ্ছে না। আমরা তো রবিবারও দোকান খুলে রেখেছি। কিন্তু খদ্দের নেই।’’ ঘাটাল ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম আহ্বায়ক দেবাশিস হড়েরও বক্তব্য, ‘‘আলুর দাম না থাকায় ব্যবসায় ৮০ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে। ঘাটাল যে চাষের উপরেই নির্ভরশীল।”
গড়বেতা, মেদিনীপুর, খড়্গপুরেও ছবিটা একই। তা ছাড়া শুধু চৈত্র সেলের বাজার নয়, মোটর বাইক, মোবাইলের কেনাকাটাতেও ভাটার টান। মেদিনীপুরের এক মোটর বাইক শো-রুমের মালিক পার্থ পালের কথায়, “গত বছর মার্চ মাসে ১৫৩০টা মোটর বাইক বেচেছিলাম। যা অন্য মাসের তুলনায় কিছুটা বেশিই। কিন্তু এ বছর মাত্র ৯৩০টি মোটর বাইক বিক্রি হয়েছে।” খড়্গপুরের এক মোটর সাইকেল শো-রুমের মালিক সতীশ মূর্তিরও বক্তব্য, গত বছর মার্চ মাসে তিনি ১১৯৫টি মোটর সাইকেল বেচেছিলেন। এ বার সেখানে বিক্রি হয়েছে ৮০০-এর কাছাকাছি।
মোবাইল দোকানগুলিতেও খদ্দের এ বার কম। মোবাইল ব্যবসায়ী পরিমল রায়ের কথায়, ‘‘গত বছর মার্চ মাসে দিনে গড়ে ১৮টা মোবাইল বিক্রি করেছিলাম। আর এ বার ৩-৪ টে মোবাইল বিক্রি করতেই হিমসিম খেতে হচ্ছে!’’ আলু বিক্রির পরে হাতে টাকা এলে কৃষকেরা বাড়ি তৈরির কাজও সারেন। এ বার তা না হওয়ায় নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সকলেই সমস্যার মধ্যে আছেন। গড়বেতা চেম্বার অফ কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক তথা নির্মাণ সামগ্রী ব্যবসায়ী সুব্রত মহাপাত্রের কথায়, ‘‘এ বার ব্যবসা কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। আমাদের এলাকা তো একেবারেই আলু চাষের উপর নির্ভরশীল। আলুর দাম না থাকায় শুধু আমাদের ব্যবসা কেন সব ব্যবসারই একই অবস্থা। যদি আলুর দাম ওঠে তো মঙ্গল। ব্যবসায়ীরাও বাঁচবেন। নাহলে সব কিছুই মুখ থুবড়ে পড়বে।”
হিমঘরে আলু ঢোকা শুরু হলেই সাধারণত আলুর দাম বাড়তে থাকে। কিন্তু এ বার তার কোনও লক্ষণই দেখা যায়নি। আলুর দাম কুইন্টাল প্রতি ৪০০ টাকার বেশি ওঠেনি। এখন তো কমতে কমতে তা ৩৭০ টাকায় নেমেছে। প্রতি বিঘায় বড় জোর ৬০ কুইন্টাল আলুর ফলন হয়। কুইন্টাল প্রতি ৪০০ টাকা দাম ধরলেও ২৪ হাজার টাকায় বিক্রি হবে এক বিঘার আলু। কিন্তু সেই আলু চাষ করতেই তো ২২ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে! ফলে লোকসান হচ্ছেই। আলু চাষি উত্তম পালের কথায়, ‘‘রাসায়নিক সার, আলু বীজ, কীটনাশক কেনার ধারই এখনও মেটাতে পারিনি। এই অবস্থায় নতুন জামা প্যান্ট কিনতে গেলে যাঁদের কাছে ধার নিয়েছি তাঁরা কী বলবেন?” শ্রীকান্ত পান আবার বলেন, “এ বার মোটর বাইক কেনার ইচ্ছা ছিল। নিজের জমি নেই। তাই অন্যের জমি লিজ নিয়ে আলু চাষ করেছিলাম। মোটর বাইক কেনা তো হলই না, উল্টে আরও ধার বাড়ল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy