ফের এক আলু চাষির অপমৃত্যু হল পশ্চিম মেদিনীপুরে। এ বার কেশপুরের আনন্দপুরে। মৃতের নাম স্বপন হাজরা (৪৫)। রবিবার সন্ধ্যায় কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে শুরুতে তাঁকে কেশপুর গ্রামীণ হাসপাতাল, পরে মেদিনীপুর মেডিক্যালে এনে ভর্তি করা হয়। সোমবার সকালে মেডিক্যালেই তাঁর মৃত্যু হয়।
আনন্দপুরের বেউচ্যাবাঁধি এলাকার বাসিন্দা স্বপনবাবু এ বার প্রায় চার বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। তাঁর পরিজনেরা পুলিশ-প্রশাসনে কোনও অভিযোগ জানাননি। তবে তাঁদের বক্তব্য, এ বার আলুর দাম একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। দিন কয়েক আগের বৃষ্টিতেও আবার মাঠের আলুর ক্ষতি হয়েছে। এই অবস্থায় মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন স্বপনবাবু। পরিবার সূত্রে খবর, প্রায় চার বিঘা জমিতে আলু চাষ করার জন্য তিনি একাধিকজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। ঋণ শোধের জন্য মহাজনেদের তাগাদা আসাও শুরু হয়েছিল।
দিন কয়েক আগে চন্দ্রকোনার ঝাঁকরাতে এক আলু চাষির অপমৃত্যু হয়। তিনিও কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়েছিল। এবং ওই চাষির পরিজনেরাও জানিয়েছিলেন, আলুর দাম না পাওয়ায় তিনি অবসাদে ভুগছিলেন। আনন্দপুরের চাষির মৃত্যু নিয়ে অবশ্য ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “ওই চাষি কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। পরে হাসপাতালে মারা যান। তবে কী জন্য তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তা এ ভাবে বলা কঠিন।’’ আর কেশপুরের বিডিও সৌরভ মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘আনন্দপুরের একজনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।’’
হিমঘর খুলে গিয়েছে। তবে চাষিরা এখনও আলুর ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়েই এ বার এই ছবি। ন্যায্য মূল্যে আলু কেনার দাবিতে জেলায় দফায় দফায় বিক্ষোভও দেখাচ্ছে একাধিক কৃষক সংগঠন। বিরোধী কৃষক সংগঠনগুলোর দাবি, চাষিদের সমস্যার দিকে রাজ্য সরকারের নজরই নেই। ধানের মতো সহায়ক মূল্যে আলু কেনার দাবিও উঠছে।
জেলায় এ বার আলুর স্বাভাবিক ফলন হয়েছে। প্রায় ৭৮ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। অন্য বছরের তুলনায় ফলনও বেড়েছে। পাল্লা দিয়ে কমেছে দাম। এখন খোলাবাজারে আলু বিকোচ্ছে ১৬০-২০০ টাকা কুইন্টাল দরে। আলু চাষিদের বক্তব্য, যে দরে আলু বিকোচ্ছে তাতে চাষের খরচটুকুও উঠবে না। কৃষি দফতরের এক সূত্রের মতে, এখনও জেলার সর্বত্র আলু ওঠেনি। সব আলু উঠলে উত্পাদন ৩০ লক্ষ টন ছাড়িয়ে যেতে পারে। জেলার এক কৃষি কর্তা মানছেন, “এ বার আলুর ফলন বেশি হয়েছে। ফলন বেশি হওয়ায় চাষিরা সমস্যায় পড়েছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy