Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus Lockdown

বেঁচে থাকার লড়াইয়ে তুলি ছেড়ে কোদাল হাতে পটশিল্পীরা

পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুর ব্লকে নানকারচক, হবিচক, মুরাদপুরে প্রায় দেড়শো পরিবার পটশিল্পের সঙ্গে যুক্ত।

আবেদ ও সায়রা (চিহ্নিত)। নিজস্ব চিত্র

আবেদ ও সায়রা (চিহ্নিত)। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
হলদিয়া শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২০ ০৫:৫৪
Share: Save:

বহু লড়াইয়ের পর শিল্পীর মর্যাদা মিলেছিল চিত্রকরদের। কিন্তু করোনাভাইরাস অতিমারি পটশিল্পীদের আবার জীবনের লড়াইয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পটের বিক্রি নেই। ফলে কেউ একশো দিনের প্রকল্পে মাটি কাটার কাজে নাম লিখিয়েছেন। কাউকে চাষের কাজ করতে হচ্ছে। রং-তুলি ছেড়ে কাস্তে-কোদাল ধরেছেন নামী চিত্রকরেরাও।

পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুর ব্লকে নানকারচক, হবিচক, মুরাদপুরে প্রায় দেড়শো পরিবার পটশিল্পের সঙ্গে যুক্ত। রয়েছেন আবেদ চিত্রকর, তাঁর স্ত্রী সায়রা, বাবলু পতিদার, ববি বিবি, আয়েশা পতিদারের মতো শিল্পীরা। দিল্লি, মুম্বই, গোয়া, চণ্ডীগড়, শ্রীনগরে প্রদর্শনীতে গিয়েছেন আবেদ এবং সায়রা। তাঁরা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরে নথিভুক্ত লোকশিল্পী।

করোনার কারণে মেলা, প্রদর্শনী বন্ধ হয়ে প্রায় পাঁচ মাস কার্যত উপার্জন বন্ধ পটশিল্পীদের। শুক্রবার হবিচক গ্রামে দেখা গেল, খাল সংস্কারের কাজে অংশ নিয়েছেন আবেদ, সায়রা, বাবলু, আয়েশা-সহ ৭০-৮০ জন পটশিল্পী। তেরপেক্ষা খাল, নানকারচক, হবিচকের বিভিন্ন নিকাশি নালা সংস্কার করা হচ্ছে। তাতে কাজ করছেন শিল্পীরা। আবেদ বলছেন, ‘‘বাড়িতে সাতজন সদস্য রয়েছেন। তাঁদের পেট চালাতে আমি এবং আমার মতো অনেকেই এখন ১০০ দিনের কাজ করছেন।’’ সায়রার কথায়, ‘‘যে হাতে এক সময় তুলি ধরতাম সেই হাতে এখন কোদাল ধরতে হচ্ছে। কিন্তু এছাড়া কিছু করারও নেই।’’ পট আঁকার জন্য চিত্রকরেরা জৈব রং নিজেরাই তৈরি করে নেন। এখন হাড়ভাঙা খাটুনির পরে সেই রং বানানো এবং ছবি আঁকার আর ইচ্ছা থাকে না বলে জানাচ্ছেন শিল্পীরা।

করোনার ধাক্কার পাশাপাশি আমপানেও প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ খাদি শিল্প শিল্প পর্ষদের তিন জেলার (দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম) খাদি আধিকারিক অসিত পাইন বলেন, ‘‘আমি নিজে গিয়ে দেখেছি। পটুয়া পাড়ায় ঝড়ে খুব ক্ষতি হয়েছে। ৭০টির মতো বাড়ি এবং বেশ কিছু পটের সামগ্রী নষ্ট হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তা জানানো হয়েছে।’’

চণ্ডীপুর-হবিচকের নামী শিল্পী নুরদিন চিত্রকর ও তাঁর স্ত্রী কল্পনা। দু’জনেই রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছেন। নুরদিন বললেন, ‘‘আমাদের পটশিল্পী পরিবারগুলোর মধ্যে পাঁচ-ছ’জনের অবস্থা একটু ভাল। কিন্তু তাঁরাও এতদিন ধরে ঘরে বসা। ফলে তাঁদের অবস্থাও খারাপ হচ্ছে। আমাকেও চাষের কাজ করতে হচ্ছে। এলাকার অনেকেই নানা কাজ করছেন। পট বিক্রির জন্য বিভিন্ন দফতরে ফোন করেছি। কিন্তু উপায় কিছু হয়নি।’’ করোনা-কালে শিল্পের সঙ্কটের কথা স্বীকার করেন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক গিরিধারী সাহা। তিনি বললেন, ‘‘শিল্পীকে অবশ্যই বাঁচাতে হবে। কিন্তু আমাদেরও তো কিছু বিধিনিষেধ মেনে কাজ করতে হয়। ওঁরা অনুষ্ঠান পেতেন। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে ওঁদের সুযোগ কমছে। এ বিষয়ে রাজ্য সরকার যদি কিছু পরিকল্পনা করেন আমরা তা রূপায়ণ করব।’’

ঐতিহ্য বাঁচাতে নুরদিনরাও তৎপর। তিনি একসময়ে রিকশা চালিয়েছেন। ইটভাটার কাজ করেছেন। কিন্তু পট আঁকা ছাড়েননি। এলাকার শিল্পীদের তিনি বোঝাচ্ছেন, যত কষ্টই করতে হোক না কেন, পট আঁকা যেন তাঁরা না ছাড়েন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown 100 Days Work
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE