Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ভাইফোঁটা পর্যন্ত হাত পুড়বেই সাফ কথা সব্জি ব্যবসায়ীদের

দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো মিটে গিয়েছে। এ বার কালীপুজো-ভাইফোঁটার পালা। উৎসবের মরসুম জুড়েই বাজার অগ্নিমূল্য। চড় চড় করে বাড়ছে শাক-সব্জি থেকে মাছের দাম। বাদ নেই ফলমূলও। মেদিনীপুর-খড়্গপুর দুই শহরেই এক ছবি।

ঝুড়িতে হরেক সব্জি। দেখা নেই ক্রেতার। গোলবাজারে। —নিজস্ব চিত্র।

ঝুড়িতে হরেক সব্জি। দেখা নেই ক্রেতার। গোলবাজারে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৩৫
Share: Save:

দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো মিটে গিয়েছে। এ বার কালীপুজো-ভাইফোঁটার পালা। উৎসবের মরসুম জুড়েই বাজার অগ্নিমূল্য। চড় চড় করে বাড়ছে শাক-সব্জি থেকে মাছের দাম। বাদ নেই ফলমূলও। মেদিনীপুর-খড়্গপুর দুই শহরেই এক ছবি।

মেদিনীপুরের বাজারগুলোয় এখন আলুর দাম ১৮-২০ টাকা কেজি। টম্যাটো ২৮-৩০ টাকা, ফুলকপি ১৮-২০ টাকা প্রতি পিস, বাঁধাকপি ৩০ টাকা কেজি। মাছের দামও চড়া। রুই-কাতলা বিকোচ্ছে কেজি প্রতি ২০০ টাকায়, চিংড়ি ৩০০-৪০০ টাকা, ভেটকি ৪৫০-৫০০ টাকা। দাম বেড়েছে মুরগির মাংসেরও। মাস দু’য়েক আগেও যে মাংস ১১০-১২০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছিল তাই এখন ১৬০ টাকা কেজি।

মেদিনীপুরের কোতোয়ালিবাজার, রাজাবাজার, গেটবাজার, স্কুলবাজারে প্রচুর সব্জির দোকান রয়েছে। তবে শহরের এক-একটি বাজারে একই জিনিসের দামের হেরফের রয়েছে। কেন? ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, পাইকারি ব্যবসায়ীরা দী দামে সব্জি বিক্রি করছেন, তার উপরই নির্ভর করে ওই সব্জির দাম খুচরো বাজারে কী হবে। শহরের বিভিন্ন বাজারে বিভিন্ন এলাকার সব্জি আসে। তাই এ ক্ষেত্রে ২-৩ টাকা ফারাক হতে পারে। ভাইফোঁটা অবধি দাম চড়া থাকবে বলেই সাফ জানালেন রাজাবাজারের সব্জি ব্যবসায়ী দুর্গা কর্মকার, বিমল চাওলারা। খড়্গপুরে আবার অশান্তির জেরে গোলবাজারের পাইকারি বাজার বন্ধ থাকায় খরিদা, ইন্দার মতো বাজারগুলিতে সব্জির দর আকাশছোঁয়া হয়েছিল লক্ষ্মীপুজোর আগেই। এখন পাইকারি বাজার খোলায় দাম কিছুটা নেমেছে। তবে বছরের অন্য সময়ের তুলনায় দাম অনেকটাই চড়া। এ দিন গোলবাজারে প্রতি কিলো আলুর দাম ছিল ২০টাকা, বেগুন ৩০টাকা, উচ্ছে ৪০ টাকা, টম্যাটো ৩০ টাকা, পটল ৩০ টাকা, এক পিস ফুলকপি (ছোট) ৩০ টাকা। খরিদা বাজারে দাম আবার আলাদা।

জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে বারবারই কড়া নজরদারির আশ্বাস দিয়েছে সরকার। নেতা-মন্ত্রীরা তো বটেই এমনকী খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও বাজারে ঘুরতে দেখা গিয়েছে। দরদাম নিয়ন্ত্রণে গঠিত হয়েছে টাস্ক-ফোর্সও। তবে সেই সব পদক্ষেপ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বিশেষ করে উৎসবের মরসুম এলেই আগুন হচ্ছে বাজার। হাত পুড়ছে মধ্যবিত্ত ক্রেতার। ফড়েদের দাপটেই খুচরো বাজারে সবজির দাম বেড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। অনেকে সুযোগ বুঝে গুদামে সব্জি মজুত করে রাখেন। পরে বাড়তি দামে বাজারে বিক্রি করেন। মেদিনীপুরের এক সব্জি ব্যবসায়ী মানছেন, “বাজার নিয়ন্ত্রণ করে মূলত ফড়েরাই। ব্যবস্থা নিতে হলে ফড়েদের বিরুদ্ধেই নেওয়া উচিত।’’ একাংশ ব্যবসায়ী আবার জানালেন, বৃষ্টিতে অনেক এলাকায় সব্জি চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলন মার খেয়েছে। তাই দাম বেড়েছে। খড়্গপুর গোলবাজারের সব্জি ব্যবসায়ী সন্তোষ পঙ্কজের কথায়, “এ বার চাষ খুব ভাল হয়নি। ফলে আমদানি ভাল হচ্ছে না। তাই বাজার দর একটু চড়া রয়েছে।’’

এই মাগ্গি-গন্ডার বাজার মধ্যবিত্ত ক্রেতার পকেটে টান ধরাচ্ছে। বাধ্য হয়েই চড়া দামে রোজকার সব্জি-মাছ কিনছেন তাঁরা। মেদিনীপুরের গৃহবধূ রীতা দত্ত, সঙ্গীতা দাসরা যেমন বলছিলেন, ‘‘বাজারে সব সব্জিরই দাম বেশি। বাজেটের মধ্যে থাকতে জিনিস কেনার পরিমাণ কমাতে হচ্ছে।’’ খড়্গপুরের গোলবাজারের ক্রেতা সুনীল সরকারেরও অভিজ্ঞতা, ‘‘দিন কুড়ি আগেও বাজার এতটা চড়া ছিল না। তার উপর টাটকা সব্জিরও যথেষ্ট অভাব রয়েছে।’’

সব্জির দাম নাগালের মধ্যে রাখতে পুরোদমে বাজার পরিদর্শন জরুরি বলেই দুই শহরের বাসিন্দাদের দাবি। শহরবাসীর মতে, পাইকারি বাজারে হানা দিলে খুচরো বাজারে সব্জির দাম কমতে বাধ্য। জেলার কৃষি কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষের আশ্বাস, ‘‘প্রয়োজনে নজরদারি চালানো হবে।’’

(তথ্য সহায়তা: বরুণ দে, দেবমাল্য বাগচী ও কিংশুক আইচ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

vegetable
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE