E-Paper

জমি-কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত ধৃত বাঁকুড়ার মন্দিরে

সঞ্জয়ের বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশিয়াড়ি থানার ছোবদা এলাকায়। তাঁকে নিয়ে জমি বেহাত কাণ্ডে মোট তিন জন গ্রেফতার হলেন।

রঞ্জন পাল

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:২২
ধৃত দলিল লেখককে আদালতে নিয়ে যাওয়ার পথে।

ধৃত দলিল লেখককে আদালতে নিয়ে যাওয়ার পথে। নিজস্ব চিত্র ।

অভিযোগে তাঁর নাম উঠতেই বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন। বন্ধ করে দেন মোবাইল ফোনও। আশ্রয় নিয়েছিলেন পাশের জেলার এক মন্দিরে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। স্ত্রীর মোবাইল ফোনই ধরিয়ে দিল সঞ্জয়কুমার দাসকে। দলিল লেখক সঞ্জয় সাঁকরাইলের বাকড়া এলাকার জমি-কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত। বাঁকুড়া সদর থানার ডাবরা এলাকার ওই মন্দির থেকে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে।

সঞ্জয়ের বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশিয়াড়ি থানার ছোবদা এলাকায়। তাঁকে নিয়ে জমি বেহাত কাণ্ডে মোট তিন জন গ্রেফতার হলেন। ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা বলেন, ‘‘মূল অভিযুক্ত দলিল লেখককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনায় আরও কারা জড়িত রয়েছেন, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। যাঁরা জড়িত রয়েছেন সবাইকে গ্রেফতার করা হবে।’’

পুলিশ সূত্রে খবর, সঞ্জয়ের খোঁজ চলছিল কিছুদিন ধরেই। গত দু’দিন ধরে বাঁকুড়ার এক মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিল একটি ব্যাগ। ওই মন্দিরে আশ্রয়হীন বহুজন থাকেন। তাঁদের ভিড়ে মিশে থাকতে পারবেন ভেবেছিলেন সঞ্জয়। স্ত্রীর মোবাইল ফোন ব্যবহার করছিলেন। সেই ফোনের সূত্র ধরেই সঞ্জয়ের অবস্থান জানতে পারে পুলিশ। মঙ্গলবার ঝাড়গ্রাম সাইবার ক্রাইম থানার সাব-ইন্সপেক্টর নিলাদ্রী প্রামাণিক ও সাঁকরাইল থানার এএসআই মধু মণ্ডলের নেতৃত্বে একটি দল বাঁকুড়ায় অভিযান চালায়। পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় সঞ্জয় কয়েক জনের নাম বলেছেন।

সঞ্জয় মেদিনীপুর সদর অফিসের দলিল লেখক। ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইল ব্লকের বাকড়া এলাকায় ১২৫টি পরিবারের প্রায় ৪০০ একর জমির দলিল অন্যের নামে করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। জীবিতকে মৃত দেখিয়ে ভুয়ো উত্তরাধিকার শংসাপত্র জমা দিয়ে দলিল করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। গত ১৬ সেপ্টেম্বর সাঁকরাইল থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন জেলা নিবন্ধক জয়জিৎ চন্দ। পুলিশ প্রথমে চিড়াকুঠি গ্রামের বাসিন্দা শুকরঞ্জন মাহাতোকে গ্রেফতার করে। পুলিশ সুপার ১৯ সেপ্টেম্বর জমি-কাণ্ডের তদন্তে ‘সিট' (স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম) গঠন করেন। গত শনিবার ‘টাইপকারক’ দেবাংশু পাহাড়িকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

তদন্তকারী দল সূত্রে খবর, সন্দেহজনক ৪০০ দলিলের লেখক, শনাক্তকারী, এবং প্রথম সাক্ষী হিসেবে সঞ্জয়ের নাম পাওয়া যাচ্ছে। দলিল লেখকের হাতের লেখার সঙ্গে বেশ কিছু উত্তরাধিকার শংসাপত্রের হাতের লেখার মিল রয়েছে। বুধবার দলিল লেখককে ঝাড়গ্রাম আদালতে তোলা হলে তদন্তকারী আধিকারিক ১৪ দিন পুলিশ হেফাজতের আবেদন জানান। বিচারক আট দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।

বুধবার বাকড়া এলাকায় জমি মাফিয়া গ্রেফতারের দাবিতে মিছিল করে বিজেপি নেতা-কর্মীরা। মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন বিজেপির জেলা সভাপতি তুফান মাহাতো, সাঁকরাইল ব্লকের মণ্ডল সভাপতি অঞ্জন জানা। মিছিল শেষে পথসভায় পাথরা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান দীপক বৈষ্ণবের গ্রেফতারের দাবিতে সরব হন তাঁরা। জমির দলিল করতে উত্তরাধিকার শংসাপত্র প্রধান দেন। দীপকের দাবি, তাঁর পৈতৃক সম্পত্তিও বেহাত হয়েছে।

তুফান বলেন, ‘‘জমিহারাদের সঙ্গে থাকার জন্য জমি মাফিয়ার বিরুদ্ধে আমরা পথে নেমেছি। শাসকদল থেকে প্রশাসন জড়িত না থাকলে এত বড় ঘটনা হতে পারে! জমি মাফিয়া গ্রেফতার না করলে আমরা বড়সড় আন্দোলনে নামব।’’ যদিও প্রধান বলেন, ‘‘বিজেপি রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করতে চাইছে। একদিন সত্য উদঘাটিত হবে। বিজেপি তাঁদের মত রং চড়িয়ে কথা বলছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

sankrail

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy