Advertisement
E-Paper

হাতির গতিপথ আটকানো নিয়ে ধন্দে বন দফতর

ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে দলমার পরিযায়ী হাতির স্বাভাবিক গতিপথ আটকানো কতটা যুক্তিসঙ্গত? বেলপাহাড়ির কাঁকড়াঝোর দিয়ে দলমার হাতির পাল এ রাজ্যে ঢুকে পড়ার পরে প্রশ্ন উঠেছে বন দফতরের অন্দরেই। তবে প্রকাশ্যে এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ বনকর্তারা।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৬ ০০:১৯

ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে দলমার পরিযায়ী হাতির স্বাভাবিক গতিপথ আটকানো কতটা যুক্তিসঙ্গত? বেলপাহাড়ির কাঁকড়াঝোর দিয়ে দলমার হাতির পাল এ রাজ্যে ঢুকে পড়ার পরে প্রশ্ন উঠেছে বন দফতরের অন্দরেই। তবে প্রকাশ্যে এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ বনকর্তারা।

বেলপাহাড়ির কাঁকড়াঝোর সীমানা দিয়ে ঢুকে পড়া হাতির দলটিকে ফের ঝাড়খণ্ড সীমানার দিকে ফেরত পাঠাতে চায় বন দফতর। কিন্তু অভিজ্ঞ বনকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, বুনো হাতির পাল একবার নিজস্ব রুটে যেতে শুরু করলে জোর করে কখনও তাকে ফেরানো যায় না। সেটা করা হলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাতে সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির আশঙ্কা বহুগুণ বেড়ে যায়। হাতির পালটি চিরাচরিত গতিপথ ধরে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। মঙ্গলবার দলদলির জঙ্গলে ছিল দলটি। বুধবার দু’টি দলে ভাগ হয়ে প্রায় চল্লিশটি হাতি বেলপাহাড়ির ওখুলডোবা ও কোদপালের জঙ্গলে দিনভর ছিল। বুধবার সন্ধ্যে হতেই ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে হাতিগুলি জঙ্গল থেকে বেরিয়ে পড়েছে। হাতিগুলিকে আটকে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করছেন বনকর্মীরা। কিন্তু দাঁতাল-বাহিনী মন্থর পায়ে বেলপাহাড়ির পাহাড়ি এলাকা থেকে সমতলের দিকে এগিয়ে চলেছে। ঝাড়গ্রামের ডিএফও বাসবরাজ হোলেইচ্চি বলেন, “হাতিগুলিকে কাঁকড়াঝোরের কাছে ময়ূরঝর্না সংরক্ষিত বনাঞ্চলের দিকে পাঠানোর চেষ্টা হচ্ছে।”

কেন বন দফতর হাতির পালকে আটকাতে চাইছে? গত জুনে ঝাড়গ্রামে এক প্রশাসনিক বৈঠকে হাতির হানায় প্রাণহানির পরিসংখ্যান শুনে রীতিমতো অসন্তুষ্ট হন মুখ্যমন্ত্রী। বন কর্তাদের কড়া ধমক দেন তিনি। এরপরই মাস খানেক ধরে ঝাড়খণ্ড সীমানাবর্তী কাঁকড়াঝোরে ২৪ ঘন্টা নজরদারির ব্যবস্থা করেছিল বন দফতর। ঝাড়খণ্ড সীমানা বরাবর জঙ্গলের ভিতরে অনেকটা এলাকা জুড়ে পরিখা খনন করা হয়েছিল। এ ভাবে গত এক মাস হাতির পালকে ঝাড়খণ্ডের দিকে আটকে রাখা গিয়েছিল। কিন্তু সোমবার সন্ধ্যায় ঝাড়খণ্ড সীমানা দিয়ে হাতির পাল ঢুকে পড়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে দলমার হাতি ঢোকা মানেই জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বিস্তর ক্ষয়ক্ষতি। এখন সবে আমন চাষ শুরু হয়েছে। তাই বর্ষায় হাতির পাল লোকালয়ে হানা দিলে কী হবে সেটা ভেবেই দিশেহারা হয়ে পড়ছেন বনকর্মীরা। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বুধবার বেলপাহাড়িতে যান রাজ্যের মুখ্য বনপাল (পশ্চিম চক্র) নীরজ সিংঘল। বন দফতর সূত্রের খবর, এ দিন আমঝর্নার কাছে ঝাড়খণ্ড-বাংলা সীমানা পরিদর্শন করেন তিনি। কথা বলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে।

দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে ঝাড়খণ্ডের দলমা থেকে পরিযায়ী হাতির পাল বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে বেলপাহাড়ির কাঁকড়াঝোর হয়ে দক্ষিণবঙ্গে ঢোকে। বছর ভর দক্ষিণবঙ্গে কাটিয়ে আবার তারা দলমায় ফিরে যায়। কিছু হাতি অবশ্য ফেরে না। সেগুলি বাঁকুড়ার দিকে ঘুরে বেড়ায়। তবে দলমার একটি বড়সড় হাতির পাল জুনের শেষ সপ্তাহে বেলপাহাড়ি হয়ে ঝাড়খণ্ডে ফিরে যায়। এরপরই ৯ জুলাই থেকে কাঁকড়াঝোরে হাতির পালের ফের ঢোকা ঠেকাতে নজরদারি শুরু করে বন দফতর।

গত এক মাসে দলমার হাতির পাল ঝাড়খণ্ড সীমানা দিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরে ঢুকতে পারেনি। ফলে, স্বস্তিতে ছিলেন জঙ্গলমহলবাসী। কিন্তু হাতি খেদানোর দলে আরও বেশি করে স্থানীয়দের নেওয়ার দাবিতে সোমবার রাতে কাঁকড়াঝোর গ্রামে বিস্তর গোলমাল হয়। হাতি খেদানোর সময় বনকর্মী ও হুলাপার্টির লোকজনকে বাধা দেন গ্রামবাসী। প্রহৃত হন বনকর্মীরা। সেই সুযোগে দলমার পালের চল্লিশটি হাতি ঢুকে পড়ে বেলপাহাড়ির জঙ্গলে। যার ফলে প্রবল চাপে পড়ে গিয়েছেন বন কর্তারা।

Elephant Rampage Forest Departemnt
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy