Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ভোল বদলাচ্ছে ভাইয়ের অফিস, বসবেন দাদা

অক্টোবরের ৭ তারিখ দুর্গাপুজোর সপ্তমীর রাতে মাইশোরায় দলীয় কার্যালয়ে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হয়েছিলেন তৃণমূলের পাঁশকুড়া ব্লক কার্যকরী সভাপতি তথা পাঁশকুড়া-১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি কুরবান।

খুলে ফেলা হয়েছে কাচের দরজা। এখানেই বসবেন আফজল। নিজস্ব চিত্র

খুলে ফেলা হয়েছে কাচের দরজা। এখানেই বসবেন আফজল। নিজস্ব চিত্র

দিগন্ত মান্না
পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:১০
Share: Save:

দলীয় কার্যালয়ে যে ঘরে খুন হয়েছিলেন পাঁশকুড়ার তৃণমূল নেতা কুরবান শা। সেই ঘরেই বসে এ বার দলের কাজ চালাবেন দাদা আফজল। আর তাই ‘অভিশপ্ত’ সেই ঘরকে ঢেলে সাজা হচ্ছে। খোলনলচে বদলানোর পাশাপাশি বাড়ছে নিরাপত্তা। কারণ এখানে বসেই ভাইয়ের মতো প্রতিদিন জনসংযোগ সারবেন আফজল।

অক্টোবরের ৭ তারিখ দুর্গাপুজোর সপ্তমীর রাতে মাইশোরায় দলীয় কার্যালয়ে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হয়েছিলেন তৃণমূলের পাঁশকুড়া ব্লক কার্যকরী সভাপতি তথা পাঁশকুড়া-১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি কুরবান। সেদিন তাঁর সরকারি নিরাপত্তারক্ষী ছুটিতে ছিলেন। দলীয় কার্যালয়ের ভিতরে ও বাইরে ছিল না কোনও সিসি ক্যামেরা। ফলে কুরবান খুনের তদন্তে নেমে প্রথমে বেশ বেগ পেতে হয় পুলিশকে। সেদিন যে ঘরে কুরবান বসেছিলেন সেই ঘরের কাচের দরজা ঠেলে যে কেউ ভিতরে চলে আসতেন। ঘটনার দিন কুরবানের অফিসের বাইরে দলীয় কর্মীদের উপস্থিতিও ছিল কম। কুরবান অনুগামীরা মনে করছেন, এতগুলি ‘দুর্বলতা’র সুযোগ নিয়েই দুষ্কৃতীরা কুরবানকে খুন করে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল।

কুরবান খুন হওয়ার পর মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর নির্দেশে মাইশোরায় দলের দায়িত্ব নিয়েছেন দাদা আফজল। এলাকার সমস্ত মানুষ যাতে অনায়াসে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে সে জন্য ভাইয়ের মোবাইল নম্বরগুলিও ব্যবহার করছেন আফজল। সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ভাই যে ঘরে খুন হয়েছিলেন সেখানে বসেই তিনি সামলাবেন দলীয় কাজকর্ম। তদন্তের কারণে ঘরটি এতদিন তালাবন্দি ছিল। সম্প্রতি ঘরটি খুলেছেন আফজল। শুরু হয়েছে ঘরের সাজ বদল। নজর দেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তায়। টেবিল ও বসার বেঞ্চ সহ সমস্ত আসবাব নতুন মোড়কে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে। বদলে ফেলা হচ্ছে ঘরের কাচের দরজাও। বদলে বসানো হচ্ছে নতুন বৈদ্যুতিন দরজা। ঘরের ভিতর থেকে কেউ নির্দিষ্ট স্যুইচ অন করলে তবেই খুলবে দরজা। কুরবান যে ঘরে খুন হয়েছিলেন, তার ঠিক পাশের ঘরে হচ্ছে কম্পিউটার সেল। সেখানে দলের কাজকর্মের প্রয়োজনীয় নথি থাকবে। দলীয় কার্যালয়ের বাইরে বসানো হয়েছে একাধিক সিসি ক্যামেরা।

কুরবান খুনের পর আফজলের জন্য নিরাপত্তারক্ষী দিয়েছে প্রশাসন। সরকারি নিরাপত্তারক্ষীর পাশাপাশি কার্যালয়ের সামনে দলীয় সমর্থকদের সমাগম বাড়ানো হয়েছে। কুরবানের ছায়া সঙ্গী শেখ ইমরান আলি বলেন, ‘‘কুরবান দা কোনওদিন নিজের ব্যাপারে ভাবতেন না। সেই দুর্বলতার সুযোগেই তাঁকে খুন করা হয়েছে। তাই এ বার আমরা দলীয় কার্যালয়ের নিরাপত্তায় জোর দিচ্ছি।’’

আফজলের কথায়, ‘‘প্রতিদিন কয়েকশো মানুষ ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে আসতেন। তাঁদের কাছে আমার ভাইয়ের মোবাইল নম্বর আর এই অফিস খুবই চেনা। তাই এই অফিসেই আমি বসে দলীয় কাজ সামলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’

ঘর সাজানোর খরচের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘পুরো খরচই আমার।’’ সাজ বদলের সঙ্গে সঙ্গে ঘরে নতুন রঙের পোঁচও পড়তে শুরু করেছে। যদিও এ দিনও ‘অভিশপ্ত’ ঘরের দেওয়ালে গুলির দাগ এখনও দগদগে। এখনও তার পাশে জ্বলজ্বল করছে ফরেন্সিক দলের লেখা ‘বুলেট হিট’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Qurban Shah Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE