Advertisement
E-Paper

হনুমান তাণ্ডব ঠেকাতে রেলিং মন্দিরে

এক থালা ফল-মিষ্টি-বাতাসার উপাচার আঁচল চাপা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন আশালতা চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু মন্দিরে পৌঁছনোর আগেই হ্যাঁচকা টানে আশালতাদেবীর আঁচল সরিয়ে সব কেড়ে নিয়েছিল লুঠেরার দল।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৬ ০০:৪৮
 অলঙ্করণ: নির্মাল্য প্রামাণিক।

অলঙ্করণ: নির্মাল্য প্রামাণিক।

এক থালা ফল-মিষ্টি-বাতাসার উপাচার আঁচল চাপা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন আশালতা চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু মন্দিরে পৌঁছনোর আগেই হ্যাঁচকা টানে আশালতাদেবীর আঁচল সরিয়ে সব কেড়ে নিয়েছিল লুঠেরার দল। রামভক্তদের নখের আঁচড়ে ছড়ে গিয়েছিল হাত। ইঞ্জেকশন নিতে হয়েছিল। বছর দশেক আগের সেই দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়লেই বুকটা ঢিপঢিপ করে ওঠে জামশেদপুরের বাসিন্দা আশালতাদেবীর। তারপর থেকে আতঙ্কে আর কনকদুর্গা মন্দিরে আসেননি এই প্রবীণা।

বছর খানেক আগে সপরিবারে দেবী দর্শনে এসেছিলেন আসানসোলের সঞ্চিতা সরকার। মন্দির থেকে পুজো দিয়ে বেরোতেই প্রসাদী মিষ্টির প্যাকেট ও নারকেল কেড়ে নিয়েছিল হনুমান। বাধা দিতে গিয়েছিলেন সঞ্চিতাদেবীর স্বামী সৌমিত্র সরকার। হনুমানটা সৌমিত্রবাবুর বুকে ধাক্কা মেরে তাঁকে মাটিতে ফেলে দিয়েছিল। সেদিনের বুকের ব্যথাটা এখনও টেন পান সৌমিত্রবাবু।

প্রতিদিন কয়েকশো দর্শনার্থী আসেন জামবনির চিল্কিগড়ে ঐতিহ্য-প্রাচীন কনকদুর্গা মন্দিরে। ডুলুং নদীর ধারে ৬৩ একর জঙ্গল এলাকার মধ্যে রয়েছে কনকদুর্গার মন্দির। জঙ্গলে রয়েছে প্রায় সাড়ে তিনশো প্রজাতির দুষ্প্রাপ্য প্রাচীন গাছগাছড়া ও ভেষজ উদ্ভিদ। এ ছাড়াও জঙ্গলে রয়েছে প্রায় তিনশো হনুমান। মন্দির খোলা হলেই জঙ্গল থেকে বেরিয়ে হনুমানগুলি চলে আসে মন্দির প্রাঙ্গণে। সুযোগ পেলেই পুজোর সামগ্রীর দোকান থেকে ফল-মিষ্টি ছোঁ মেরে লুঠ করে মগডালে চড়ে বসে। প্রায়ই হনুমানগুলি নিজেদের মধ্যে মারামারি করে মন্দির চত্বরকে রণক্ষেত্র করে তোলে। এ ছাড়া দর্শনার্থীদের হাতে খাবার-দাবার থাকলে রক্ষে নেই। পুজোর সামগ্রী লুঠ হওয়া ঠেকাতে ব্যাগের মধ্যে, কিংবা আঁচল চাপা দিয়ে নিয়ে গিয়েও অনেক ক্ষেত্রে শেষ রক্ষা হয় না। চতুর হনমানের দল, দর্শনার্থীদের খানাতল্লাশি করে খাবার দাবার পেলেই কেড়ে নেয়। যাঁরা প্রথমবার চিল্কিগড়ে বেড়াতে আসেন, তাঁদের অনেকেরই বজরঙ-বাহিনীর সম্পর্কে ধারণা নেই। ফলে, তাঁরাই আক্রান্ত হন বেশি। অধিকাংশই ফেরেন আশালতাদেবীর মতো তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে।

মন্দির চত্বরে হনুমানের উপদ্রব দিন দিন বেড়ে চলায় এবার অবশ্য হেস্তনেস্ত করতে চায় মন্দির কমিটি। কর্তৃপক্ষের সম্মতিক্রমে এগিয়ে এসেছে জামবনি পঞ্চায়েত সমিতি। হনুমান-বাহিনীর উৎপাত ঠেকাতে মন্দিরে পুজো দিতে যাওয়ার সুরক্ষিত পথ বানাবে জামবনি পঞ্চায়েত সমিতি। জানা গিয়েছে, রেলিং ও জালে ঘেরা এই পথ তৈরি হলে পুজোর সামগ্রী নিয়ে নির্বিঘ্নে মন্দিরে পৌঁছতে পারবেন দর্শনার্থীরা। এবং পুজো দিয়ে প্রসাদী সামগ্রী নিয়ে ফিরেও আসতে পারবেন। জামবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা কনকদুর্গা মন্দির উন্নয়ন কমিটির সহকারি সভাপতি সমীর ধল বলেন, “হনুমানরা চিল্কিগড় জঙ্গলের দীর্ঘদিনের বাসিন্দা। ওই বন্যপ্রাণীদের কোনও ক্ষতি না করে আমরা পর্যটক ও দর্শনার্থীদের রক্ষা করার বিকল্প পথ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” সমীরবাবু জানান, পুজোর সামগ্রীর দোকানগুলির সামনে থেকে মন্দিরের গর্ভগৃহ পর্যন্ত রেলিং ও জাল ঘেরা কংক্রিটের সুরক্ষিত পথ তৈরির জন্য পঞ্চায়েত সমিতির সভায় আলোচনা হয়েছে। সৌন্দর্যায়নের জন্য রাস্তাটিকে ধনুকের মতো তৈরি করা যায় কি-না সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে এটি তৈরি করতে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে। সমীরবাবু বলেন, “শীঘ্রই আমরা এজন্য টাকা চেয়ে জেলা পরিষদে প্রকল্প জমা দেব। আশা করছি চলতি বছরের মধ্যে কাজটি করে ফেলা সম্ভব হবে।”

চিল্কিগড় মন্দিরের কাছে পর্যটকদের জন্য অতিথিশালা তৈরি করছে পঞ্চায়েত সমিতি। আরও একটি অতিথিশালা তৈরির জন্য রাজ্যসভার সাংসদ মুকুল রায়ের কাছ থেকে ২৯ লক্ষ টাকা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু এ সবের পাশাপাশি, হনুমানের উৎপাত থেকে বাঁচতে দর্শনার্থীদের জন্য সুরক্ষিত পথের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন পর্যটকরা।

Monkey Temple
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy