Advertisement
E-Paper

মেঘ-বৃষ্টিতে তাল কাটল  কালীপুজোয়

সকলেই চায় একে  অপরকে টক্কর দিতে। ছবিটা এ বারও এক। তবে বৃষ্টিতে অনেক মণ্ডপের সাজই জলে গিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৭ ০০:৫৪
বাঁচতে: বৃষ্টির মধ্যে প্লাস্টিকে মোড়া প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র

বাঁচতে: বৃষ্টির মধ্যে প্লাস্টিকে মোড়া প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র

মুখ ভার সুদীপ রুইদাসের। মেঘ-বৃষ্টিতে কালীপুজো যে পণ্ড হওয়ার জোগাড়। মেদিনীপুরের মানিকপুর ভ্রাতৃসঙ্ঘের কালীপুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা সুদীপ বলছিলেন, “কালীপুজোতেও এত বৃষ্টি হবে ভাবতে পারিনি। অনেক আয়োজন ছিল। বৃষ্টিতে কিছু কিছু নষ্ট হয়েছে।” ভ্রাতৃসঙ্ঘের কালীপুজোর এ বার সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষ। শহরের বটতলাচকের স্বামী বিবেকানন্দ ক্লাবের কালীপুজোর এ বার থিম ‘বাহুবলী’। থিম সাজাতে হিমশিম খেতে হয়েছে পুজো উদ্যোক্তাদের। শহরের এই পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা প্রদীপ পড়িয়া বলছিলেন, “এই সময় এত বৃষ্টি ভাবা যায় না!”

এ বার দুর্গাপুজোতেও আকাশের মুখ ছিল ভার। দফায় দফায় বৃষ্টি হয়েছে চার দিনই। ভিজে ভিজেই ঠাকুর দেখেছেন অনেকে। কালীপুজো-দীপাবলির আগেও সেই বৃষ্টি-অসুর ফিরে আসায় উৎসবের আকাশে আশঙ্কা ঘনাচ্ছে। মেদিনীপুরে বড় বাজেটের কালী পুজো কম হয়। তবে পাড়ায় পাড়ায় সর্বজনীন কালীপুজোর পুজোর সংখ্যা নেহাত কম নয়। এক-একটি পাড়ায় তো একাধিক কালীপুজো হয়। দুর্গাপুজোর মতো কালীপুজোতেও থাকে থিমের বাহার। পুজো কমিটিগুলো রকমারি থিম তুলে দর্শকদের মন জয়ের চেষ্টা করেন। সকলেই চায় একে অপরকে টক্কর দিতে। ছবিটা এ বারও এক। তবে বৃষ্টিতে অনেক মণ্ডপের সাজই জলে গিয়েছে।

বুধবার মেদিনীপুরে বৃষ্টি হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেও এক ছবি। শুধু সদর শহর নয়, জেলার বিভিন্ন এলাকাতেই এ দিন বৃষ্টি হয়েছে। সকাল থেকেই আকাশের মুখ ছিল ভার। আর আকাশের মুখ ভার দেখে পুজো উদ্যোক্তাদের মুখও ভার হয়ে যায়! বিশেষ করে বড় পুজোগুলোর। অনেক জায়গায় মণ্ডপের কাজ শেষ করতে করতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়। রাঙামাটির সমাগম ক্লাবের পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা সুশান্ত ঘোষ বলছিলেন, “এ দিন সকাল থেকেই বৃষ্টি শুরু হল। পুজোর মুখে বৃষ্টি হলে তো সমস্যা হবেই।’’ শহরের এক পুজো উদ্যোক্তার কথায়, “দুর্গাপুজোর সময়ও বৃষ্টি হয়েছে। তবে টানা ভারী বৃষ্টি হয়নি। আশা করেছিলাম, কালীপুজোটা ভালয় ভালয় কাটবে। তা আর হল কই!”

বৃহস্পতিবার খুব কম সময়ই মেদিনীপুরের আকাশ পরিষ্কার ছিল। সকালের দিকে মাঝারি বৃষ্টি হয়। দুপুরে কালো মেঘ ভেঙে ভারী বৃষ্টি নামে। টানা বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন এলাকায় জল দাঁড়িয়ে যায়। কালীপুজোর বেশ কয়েকটি মণ্ডপের সামনেও জল দাঁড়িয়ে যায়। যে সব পুজোর কাজ অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিল, বিশেষ করে মণ্ডপের বাইরের কাজ, সেই সব পুজোর প্রস্তুতি কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার থাকায় মাথায় হাত খড়্গপুর শহরের কালীপুজো উদ্যোক্তাদেরও। মিশ্র সংস্কৃতির এই শহরে বরাবর দীপাবলি ও কালীপুজোর জাঁক তুলনায় বেশি। কিন্তু কালীপুজোর দিন সকাল থেকেই মেঘলা আকাশ ও দফায়-দফায় বৃষ্টিতে উৎসবের তাল কেটেছে। অনেকেই বাড়িতে বৈদ্যুতিন আলোকসজ্জা করলেও বৃষ্টিতে শর্টসার্কিটের ভয়ে আলো জ্বালাতে পারেনি। উদ্বেগে পুজোর কর্মকর্তারাও। ইন্দা মোড়ের ‘ইউথ কর্নার অ্যাণ্ড সেভেন স্টারে’র ৮লক্ষ টাকা বাজেটের পুজোয় এবারের থিম ‘মাতৃশক্তি’। এই মণ্ডপে ব্যবহার হয়েছে লোহার রড, কাপড়, থার্মোকল, সাইকেল টায়ার, ফোমের মতো উপকরণ। পুজোর কর্মকর্তা সোমনাথ আচার্য বলেন, “এত খরচ করে পরিশ্রম করে পুজো করছি। কিন্তু আকাশের যা অবস্থা, তাতে ভিড় হবে বলে মনে হয় না। সেই সঙ্গে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ায় মণ্ডপের ক্ষতিরও আশঙ্কা রয়েছে।”

ঝাপেটাপুর মোড়ে ‘টোয়েন্টি সেভেন্থ ইউথ সেন্টারে’র ২২তম বর্ষের পুজোয় ৯ লক্ষ টাকা তৈরি হয়েছে ‘কাল্পনিক স্বর্গে’র থিমের মণ্ডপ। মণ্ডপসজ্জায় সিন্থেটিক কাপড়, প্লাস্টিকের ঘোড়া, হাতি, পরী রয়েছে। পুজোর উদ্যোক্তা প্রাক্তন পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডে বলেন, “বৃষ্টি চললে সমস্যা হতে পারে। তাই দেবীর কাছে প্রার্থনা ছাড়া উপায় নেই।” অনেক পুজো কমিটি আবার প্রাকৃতিক এই দুর্যোগকে মেনে নিয়েছে। যেমন, ১০লক্ষ টাকা বাজেটে মালঞ্চর যুব সঙ্ঘের ৫০বছরের পুজোর থিম ‘বৌদ্ধের ছায়ায় বিশ্বশান্তি’। ত্রয়োদশীতেই বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সহযোগে মণ্ডপে আনা হয়েছে প্রতিমা। পুজোর কর্মকর্তা সৌমেন চক্রবর্তী বলেন, “প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে তো কিছু করার নেই। পুজোর দু’দিন আগে থেকেই দর্শনার্থীরা আমাদের মণ্ডপে আসছেন। তাই চিন্তা নেই।”

Diwali কালীপুজো Kali Puja 2017
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy