শেষ বেলার বিকিকিনি।
ঝিরঝিরে বৃষ্টি থেকে বাঁচাতে বিশ্বকর্মার গায়ে সাদা পলিথিনের চাদর টেনে দিচ্ছিলেন পুষ্পদেবী। তার ভিতরেই চলছে শেষ তুলির টান। দীর্ঘদিন ধরে এ ভাবেই মূর্তি তৈরি করতে অভ্যস্ত পুষ্প মণ্ডল। তমলুক শহরের কাছে হাসপাতাল মোড়ে এক চিলতে ঘরে মূর্তি গড়েন পুষ্পদেবী ও তাঁর ছেলে। এ বছর কপালে ভাঁজ, তেমন বায়না হয়নি। প্রৌঢ়া শিল্পীর আক্ষেপ, ‘‘অনেক পুজো উদ্যোক্তাই এ বছর আসেননি। কেন এমন হল বুঝতে পারছি না।’’ ছেলে প্রভাস মণ্ডল জানালেন, কম-বেশি খান ষাটেক মূর্তি তাঁরা প্রতি বছরই গড়েন। গত বছর পুজোর একদিন বাকি থাকতেই সব মূর্তি বায়না হয়ে গিয়েছিল। এ বার পুজোর আগের দিনও অনেক মূর্তির বায়না হয়নি।
পরিস্থিতি একই শঙ্করআড়ার ভট্টাচার্য পরিবারেও। প্রতিমা শিল্পী অরূপ ভট্টাচার্যও জানালেন এ বার মূর্তির চাহিদা অনেকটাই কম। অরূপবাবু ৩২টি বিশ্বকর্মা গড়েছেন এ বার। বেশ কিছু মূর্তি আগের সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্রি হয়নি।
কিন্তু কেন কমছে বড় মূর্তির চাহিদা? অরূপবাবু আক্ষেপ, ‘‘এখানে তো বড় কলকারখানা নেই। যে দু’একটি পুজোয় বড় মূর্তি বায়না হত, এখন সেখানেও জাঁকজমক কমেছে। চাহিদা কমেছে মূর্তির।’’ এ বছর বড় মূর্তির দাম গড়ে ২০০০- ২২০০ টাকা। আর ছোট থেকে মাঝারি মূর্তির দাম ৭০০-১২০০ টাকা পর্যন্ত। তমলুক শহর ও সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ১০৪টি বাস-লরির কাঠামো সজ্জার ছোট-মাঝারি কারখানা রয়েছে। এইসব কারখানার মালিকদের সংগঠন তমলুক মোটর বাস বডি বিল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক নারায়ণ মাইতি বলেন, ‘‘আগের চেয়ে বাস-লরির কাঠামো সজ্জার কারখানা বেড়েছে। কিন্তু ব্যবসার পরিমাণ সে ভাবে বাড়েনি। প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে অনেকের ব্যবসা আগের চেয়ে কমেছে। ফলে জাঁকের পুজো করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’’ তাঁর অভিযোগ, এই সব কারখানা এখনও ক্ষুদ্র শিল্প হিসেবে সরকারি মর্যাদা পায়নি। ফলে সরকারিভাবে কোন সুবিধা মেলে না। তাই পুজোর বাজেটে কাটতি হচ্ছে। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy