Advertisement
E-Paper

প্রায় প্রতি রাতেই বোমার শব্দ, উত্তপ্ত বাকচায় মাধ্যমিক নিয়ে উদ্বেগ

ময়নার বাকচা এলাকায় প্রধান নির্বাচন ঘিরে শাসকদলের কোন্দলে রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনায় শুধু মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরাই নন, উদ্বেগে তাঁদের অভিভাবকেরাও। উদ্বেগে রয়েছেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও।

আনন্দ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:০৮
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মাঝে মাত্র ৪০ দিন। তারপরেই শুরু মাধ্যমিক। টেস্ট পরীক্ষার শেষে ফর্ম ফিলাপের পর জোরকদমে চলছে প্রস্তুতি। কিন্তু বাদ সেধেছে এলাকার পরিস্থিতি। প্রায় রোজ রাতেই এলাকায় বোমা ফাটার শব্দে আতঙ্কে দিন কাটাতে হচ্ছে মাধ্যমিকের জন্য প্রস্তুতি শুরু করা পড়ুয়াদের।

ময়নার বাকচা এলাকায় প্রধান নির্বাচন ঘিরে শাসকদলের কোন্দলে রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনায় শুধু মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরাই নন, উদ্বেগে তাঁদের অভিভাবকেরাও। উদ্বেগে রয়েছেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। পরিস্থিতি সামাল দিতে এলাকায় পুলিশ বাহিনী মোতায়েন থাকলেও তা যে সাধারণ মানুষকে স্বলস্তি দিতে পারছে না তা মানছেন প্রশাসনের কর্তারাও। তাই মাধ্যমিক পরীক্ষার আগেই এলাকায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার জন্য জোরদার চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের দাবি।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাকচা পঞ্চায়েত এলাকায় মাধ্যমিক পরীক্ষার একমাত্র কেন্দ্রটি হয় মির্জানগর আড়ংকিয়ারানা যজ্ঞেশ্বর স্মৃতি বিদ্যাপীঠে। ওই স্কুলে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয় স্থানীয় সাতটি স্কুলের ৭০০ জনেরও বেশি মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। কিন্তু পঞ্চায়েত প্রধান নির্বাচন ঘিরে গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে দফায় দফায় রাজনৈতিক সংঘর্ষে এলাকার স্বাভাবিক জনজীবনের পাশাপাশি স্কুলের পড়াশোনাও ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ। এলাকার শান্তি ফেরাতে বাকচা বিবেকানন্দ জনসেবা হাইস্কুলে পুলিশ ক্যাম্প খুলে এলাকায় পুলিশের টহলদারির ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে বাকচা হাইস্কুলের ওই পুলিশ ক্যাম্প ঘিরে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। স্কুলের কাছে এক তৃণমূল নেতার বাড়িতে হামলার ঘটনার জেরে ছাত্র–ছাত্রীদের অনেকে বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দেয় বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, ঘটনার জেরে ওই বিদ্যালয় সহ স্থানীয় কয়েকটি বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরাও আতঙ্কে রয়েছে বলে অভিযোগ। অভিভাবকদের অভিযোগ, সন্ধ্যার পর ছেলেমেয়েদের টিউশনে পাঠাতে ভরসা পাচ্ছেন না তাঁরা। এর ফলে মাধ্যমিকের প্রস্তুতি নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন অনেক পরীক্ষার্থী।

গোড়ামহল গ্রামের এক পরীক্ষার্থী বলেন, ‘‘এলাকায় গোলমালের জেরে প্রায় রোজ রাতেই বোমা ফাটছে। টিউশন তো দূর, সন্ধ্যের পরে বাড়ির বাইরে যেতে পারছি না। বাড়িতে পড়তে বসেও আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে। পড়াশোনা করতে খুবই অসুবিধা হচ্ছে।’’ বাকচা গ্রামের এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘গোলমালের জেরে উদ্বেগে আছি। মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে ছেলেকে আত্মীয়ের বাড়িতে রেখেছি। আশা করি পুলিশ-প্রশাসনের সহায়তায় পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’’

বাকচা বিবেকানন্দ জনসেবা হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক সুশান্তকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কারণেই পড়ুয়াদের একাংশ বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করেছিল। ফলে বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হারও কমে গিয়েছিল। তবে গত কয়েকদিনে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। পড়ুয়াদের হাজিরাও বেড়েছে। তবে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পড়াশোনায় কিছুটা ব্যাঘাত তো হচ্ছেই। আমরা পরীক্ষার্থীদের যতটা সম্ভব সাহায্যের চেষ্টা করছি।’’

মির্জানগর আড়ংকিয়ারানা যজ্ঞেশ্বর স্মৃতি বিদ্যাপীঠে বুধবার থেকেই শুরু হয়েছে সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব। প্রধান শিক্ষক দীপককুমার সামন্ত বলেন, ‘‘এলাকার সামগ্রিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। স্কুলে মাধ্যমিক পরীক্ষার কেন্দ্র হচ্ছে। আশাকরি পরীক্ষা শুরুর আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’’

তমলুকের এসডিপিও সুরজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘‘বাকচায় কিছু ঘটনা ঘটেছিল। তবে পরিস্থিতি আপাতত স্বাভাবিক। এলাকায় পুলিশের ক্যাম্প ও টহলদারি রয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের অসুবিধা হচ্ছে এমন কোনও অভিযোগ এখনও আমাদের কাছে আসেনি। এলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) আমিনুল আহসান বলেন, ‘‘এই নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না। পর্ষদ সভপাতি জেলায় আসবেন। সেখানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।’’

Madhyamik Examination Secondary Examination Political Violence Bombing
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy