‘বিজলি’!
বিদ্যুতের বাল্ব জ্বলে ওঠায় অবাক হয়ে এই শব্দটাই বলে উঠেছিলেন লোডশেডিং সমস্যায় জেরবার উত্তরপ্রদেশের চরণপুরের এক বৃদ্ধা। তাঁর মুখের বলি রেখার ভাঁজে ফুটে উঠেছিল হাসি। ওই দৃশ্য ছিল চলচ্চিত্রের পর্দার। ‘স্বদেশ’ সিনেমার।
‘স্বদেশ’এর ওই দৃশ্যেরই যেন পুনরাবৃত্তি হয়েছে পটাশপুরের আগরাঞ্যা গ্রামের শীটপাড়ায়। বহু বছর ধরে এই পাড়ার একটা অংশ বিদুৎ পরিবষেবা থেকে বঞ্চিত ছিল। বিদ্যুৎ দফতরের আবেদনের প্রায় আট বছর পরে বৃহস্পতিবার ওই পাড়ায় এসেছে ‘বিজলি’ (বিদ্যুৎ)।
স্থানীয় সূত্রের খবর, শীটপাড়ার কয়েকটি পরিবার ২০১৮ সালে বাড়িতে বিদ্যুতের সংযোগ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন জানিয়েছিল। সেই মতো তাঁদের নামে মিটার মঞ্জুর হয়ে গিয়েছিল। এলাকায় ঠিকাদার গিয়ে খুঁটি পুঁতেছিলেন। পরে জমি জটের কারণে আর কাজ এগোয়নি। এ নিয়ে পঞ্চায়েত এবং বিদ্যুৎ দফতর দায় ঠেলাঠেলি শুরু করে। পরিবারগুলির দাবি ছিল, পটাশপুর-২ বিদ্যুৎ অফিস থেকে স্থানীয় সাউৎখণ্ড গ্রাম পঞ্চায়েতে ঘুরে ঘুরে জুতোর সুখতলা ছিঁড়ে গেলেও কাজের কিছুই হয়নি।
বুধবার ওই সংক্রান্ত খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এর পরেই নড়েচড়ে বসে বিদ্যুৎ দফতর। এ দিন সকাল থেকে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আগরাঞ্যা গ্রামের ওই এলাকায় বিদ্যুতের তার পাতার কাজ শুরু হয়ে যায়। দুপুরের মধ্যে দু’টি পরিবারের বাড়িতে নতুন মিটার সংযোগ দিয়ে আলো জ্বালিয়ে দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। বাকি চারটি পরিবারেও ‘বিজলি’ পৌঁছে দিতে রাত পর্যন্ত খুঁটি পোঁতা ও কেবল পাতার কাজ চলেছে। এ দিন দুপুরে দফতরের তরফে জানানো হয়, রাতের মধ্যে আবেদনকারী বঞ্চিত সকল পরিবারে বিদ্যুৎ পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া হবে।
আট বছর পরে বাড়িতে আলো জ্বলে ওঠায় খুশি গোটা পাড়া। এদিন দুপুর থেকে বাড়িতে ঘূর্ণায়মান পাখার নীচে বসে হাওয়া খাচ্ছেন খুদে থেকে বয়স্করা। অনেকে এক দিনেই নতুন টেলিভিশন কিনে এনেছেন বাড়িতে। শুরু হয়ে গিয়েছে টিভি দেখা। বিদ্যুত পরিষেবা পাওয়া লক্ষ্মণ শীট বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যেন একটা নতুন দিনের শুরু হল। বাড়িতে আলো জ্বলল। আর অন্ধকারে দিন কাটাতে হবে না। বিদ্যুৎ দফতরকে ধন্যবাদ।’’
তাদের এই তৎপরতায় মুখে হাসি ফুটেছে বাসিন্দাদের। এ ব্যাপারে তমলুক বিদ্যুৎ দফতরের রিজিওনাল ম্যানেজার শুভেন্দু কর বলেন, ‘‘আমরা বিষয়টি জানতে পেরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা চালু করেছি। বাড়ি লোকেদের পরিষেবা দিতে পেরে আমরাও খুশি।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)