Advertisement
E-Paper

বিজেপিতে কোন্দল ঠেকাতে আসরে নামল সঙ্ঘ

বিজেপিতে বিক্ষুব্ধ কাঁটা সরাতে এ বার আসরে নামল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ। ভোটের আগে দলে কোন্দল নিয়ে অসন্তুষ্ট সঙ্ঘ। দলের এক সূত্রে খবর, সম্প্রতি বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়কে তলব করে এই অসন্তোষের কথা জানিয়ে দিয়েছেন সঙ্ঘের মেদিনীপুর জেলা কার্যবাহ শমিত দাশ। সঙ্ঘের মতে, দলে একাধিক মত থাকতেই পারে। কিন্তু প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে যে ভাবে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা হয়েছে, তা কখনওই কাম্য নয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৫ ০১:০১
যুযুধান। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থীর পাশেই দেওয়াল লিখন বিক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মী অজয় চট্টোপাধ্যায়ের। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

যুযুধান। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থীর পাশেই দেওয়াল লিখন বিক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মী অজয় চট্টোপাধ্যায়ের। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

বিজেপিতে বিক্ষুব্ধ কাঁটা সরাতে এ বার আসরে নামল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ।

ভোটের আগে দলে কোন্দল নিয়ে অসন্তুষ্ট সঙ্ঘ। দলের এক সূত্রে খবর, সম্প্রতি বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়কে তলব করে এই অসন্তোষের কথা জানিয়ে দিয়েছেন সঙ্ঘের মেদিনীপুর জেলা কার্যবাহ শমিত দাশ। সঙ্ঘের মতে, দলে একাধিক মত থাকতেই পারে। কিন্তু প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে যে ভাবে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা হয়েছে, তা কখনওই কাম্য নয়। পুরভোটের আর এক মাসও বাকি নেই। পরিস্থিতি দেখে শেষ বেলায় আরও শক্ত হাতে রাশ ধরতে চাইছে সঙ্ঘ। দলের ওই সূত্রে খবর, বিজেপির জেলা সভাপতিকে শমিতবাবু জানিয়ে দিয়েছেন, নিচুতলার কর্মীদের গুরুত্ব দিতে হবে। উপরতলার নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। প্রচারে কেন্দ্রীয় সরকারের ইতিবাচক দিকগুলো বেশি করে তুলে ধরতে হবে।

বিজেপির প্রার্থী তালিকা প্রত্যাহারের দাবিতে খড়্গপুরে বিক্ষোভ দেখায় দলের একাংশ কর্মী। বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ ও দলের শহর সভাপতি প্রেমচাঁদ ঝাঁর কুশপুতুলও পোড়ায় বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে আলোচনাতেও বরফ গলেনি। রেলশহরের ১৮টি ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেয় বিক্ষুব্ধরা। শেষ পর্যন্ত তাঁদের মধ্যে চার জন মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। গত লোকসভা নির্বাচনে খড়্গপুর বিধানসভা কেন্দ্রে প্রথম স্থানে ছিল বিজেপি। লোকসভা ভোটের ধারা পুরভোটেও বজায় থাকা নিয়ে আশাবাদী বিজেপি নেতৃত্ব। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, বিক্ষুব্ধদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সমস্যা রয়েছে। শহরের কয়েকটি ওযার্ডে বিক্ষুব্ধদের ভাল প্রভাব রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ভোট কাটাকাটির সম্ভাবনাও রয়েছে।

সঙ্ঘ- বিজেপির এই বৈঠক নিয়ে অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছে দু’পক্ষই। বিজেপির কোন্দল প্রকাশ্যে আসায় সঙ্ঘ কী বেশ অসন্তুষ্ট? না- হলে কেন পুরভোটের মুখে এই তলব? সদুত্তর এড়িয়ে তুষারবাবু বলেন, “সঙ্ঘ আমাদের অনুপ্রেরণা।” অন্য দিকে, সঙ্ঘের মেদিনীপুর জেলা কার্যবাহ শমিতবাবুর বক্তব্য, “এটা তেমন কোনও ব্যাপার নয়।” দলীয় সূত্রে খবর, সম্প্রতি মেদিনীপুরের নিবাসে সঙ্ঘের মেদিনীপুর জেলা কার্যবাহের সঙ্গে বৈঠক হয় বিজেপির জেলা সভাপতির। সঙ্ঘের তরফ থেকে তুষারবাবুকে তলব করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়, গত কয়েক মাসে দলের কর্মীদের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ কমছে। ফলে, কিছু এলাকায় আগে দলের যে প্রভাব ছিল, এখন তা নেই। দল জমি হারাচ্ছে। এটা হতে পারে না। কর্মীদের উচিত, মানুষের সঙ্গে নিরন্তর যোগাযোগ রেখে চলা। আগামী ২৫ এপ্রিল পশ্চিম মেদিনীপুরের ৬টি পুরসভায় নির্বাচন। এরমধ্যে অন্যতম রেলশহর খড়্গপুর। গত লোকসভা ভোটে এখানে আশাতীত ফল হয় বিজেপির। লোকসভার নিরিখে খড়্গপুরের ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৯টিতে এগিয়ে গেরুয়া- শিবির।

অর্থাত্‌, লোকসভার ফল ধরে রাখতে পারলে রেলশহরে বিজেপিই ক্ষমতায় আসবে। অবশ্য ওই ফল ধরে রাখা যে খুব সহজ নয়, তা এখন বেশ বুঝতে পারছেন বিজেপির জেলা নেতৃত্ব। পশ্চিম মেদিনীপুরের বেশ কিছু এলাকায় সঙ্ঘের ভাল সংগঠন রয়েছে। গত কয়েক মাসে সঙ্ঘের সংগঠন বৃদ্ধিও পেয়েছে। এ জন্য নানা কর্মসূচি হচ্ছে। গত জানুয়ারিতে সঙ্ঘের উদ্যোগে মেদিনীপুর শহরে এক নাগরিক সম্মেলন হয়। যেখানে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) সহ সরকার্যবাহ সুরেশ সোনি, মেদিনীপুর বিভাগ সঙ্ঘচালক চন্দনকান্তি ভুঁইয়া, মেদিনীপুর জেলা সঙ্ঘচালক ঠাকুরদাস অধিকারী প্রমুখ। দলের এক সূত্রে খবর, যে ভাবে আবেদনের ভিত্তিতে পুরভোটের প্রার্থী বাছাই করা হয়েছে, সেই পদ্ধতি নিয়েই অসন্তুষ্ট সঙ্ঘের জেলা নেতৃত্ব।

নর্দমার ধারে পড়ে বিজেপির পতাকা।

রেলশহরের ৩৫টি ওয়ার্ডে প্রার্থী হতে চেয়ে ১৪০টি আবেদন জমা পড়েছিল। পরে এঁদের মধ্যে থেকেই প্রার্থী বাছাই করা হয়। সঙ্ঘের একাংশ নেতা মনে করেন, দলের নিচুতলা থেকে প্রার্থীর নাম সুপারিশ করা হলেই ভাল হত। সঙ্ঘ- ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, “যিনি সপ্তাহ কয়েক আগে দলে এসেছেন, তিনিও প্রার্থী হতে চেয়ে আবেদন করেন। যিনি দুঃসময়ে দলে ছিলেন, তিনিও প্রার্থী হতে চেয়ে আবেদন করেন। দলের নিচুতলা থেকে প্রার্থীর নাম সুপারিশ করা হলে এটা হত না।”

পাশাপাশি, সঙ্ঘের সতর্কবার্তা, দলের মধ্যে অনুশাসন আনতেই হবে। না- হলে দল কখনও বড় হবে না। সবার মধ্যে মূল্যবোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন। মূল্যবোধ ছাড়া সমাজে পরিবর্তন আসতে পারে না। রেলশহরে পুরভোটের প্রচারে বড় ভূমিকা নিতে পারে সঙ্ঘ। সঙ্ঘ- ঘনিষ্ঠ এক নেতার কথায়, “যে কোনও রাজনৈতিক দল তৈরি হয় এটা ভেবেই যে ওই দল কোনও না- কোনও দিন ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু, ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতির জন্য কাউকে তোষণ করা উচিত নয়। সবার সমৃদ্ধি, সবার বিকাশ, সবার উন্নতিই লক্ষ্য হওয়া উচিত। প্রচারে এই বার্তাই দেওয়া হবে।”

সঙ্ঘের এই সতর্কবার্তার পর কতটা নড়েচড়ে বসে বিজেপি, সেটাই দেখার।

midnapore municipal election RSS BJP Loksava election Kharagpur Rahul Sinha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy