Advertisement
E-Paper

স্কুলেই ন্যায্যমূল্যের পেন-পেন্সিল

 স্কুলের একটি ঘরে আলমারির সামনে ঝোলানো তালিকা। পরপর লেখা— মোটা খাতা ৫ টাকা, চটি খাতা ২.৫০ টাকা, পেন ২ টাকা, পেন্সিল ৪ টাকা, বড় রবার ৪ টাকা, ছোট রবার ১ টাকা, লেখার আঁকার পেনসিল ৫ টাকা। ঠিকমতো দাম দিয়ে জিনিস নিলেই হল।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৫০
স্কুলেই মিলছে পেন-পেন্সিল। নিজস্ব চিত্র

স্কুলেই মিলছে পেন-পেন্সিল। নিজস্ব চিত্র

স্কুলের একটি ঘরে আলমারির সামনে ঝোলানো তালিকা। পরপর লেখা— মোটা খাতা ৫ টাকা, চটি খাতা ২.৫০ টাকা, পেন ২ টাকা, পেন্সিল ৪ টাকা, বড় রবার ৪ টাকা, ছোট রবার ১ টাকা, লেখার আঁকার পেনসিল ৫ টাকা। ঠিকমতো দাম দিয়ে জিনিস নিলেই হল।

প্রাথমিক স্কুলে শিশু সংসদের উদ্যোগেই গড়ে উঠেছে ন্যায্যমূল্যের এই শিক্ষাসামগ্রীর দোকান। বৃহস্পতিবার সেই শিশু সমবায়ের বর্ষপূর্তি ছিল মেদিনীপুর সদর ব্লকের পলাশি প্রাথমিক স্কুলে। স্কুলের পড়ুয়া, শিক্ষকের পাশাপাশি সেই উৎসবে সামিল হন গ্রামবাসীও। গত এক বছর ধরে সফল ভাবে সমবায় চালানোর আনন্দ ভাগ করে নেন সকলে।

কিন্তু অন্য রকম এই ভাবনা এল কী ভাবে? পলাশি প্রাথমিক স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সৌম্যসুন্দর মহাপাত্র বলছিলেন, “ছাত্রছাত্রীদের জন্য, স্কুলের জন্য কিছু করার ইচ্ছে ছিল। তাই অন্য ভাবে ভাবার চেষ্টা করেছি। স্কুলেও যে সমবায় গড়া যায়, সেই সমবায় যে ভাল ভাবে চালানো যায়, তা দেখানোর চেষ্টা করেছি।’’ একই সঙ্গে তিনি মানছেন, অভিভাবকেরা সব রকম সহযোগিতা করেছেন। না হলে হয়তো এই সমবায় এগোতে পারত না।”

সৌম্যসুন্দরবাবু জানালেন, এই শিশু সমবায়ের পুরোটাই শিশু সংসদ চালায়। একজন শিক্ষক শুধু দেখভাল করেন। কিন্তু কী ভাবে চলে সময়বায়? জানা গিয়েছে, ছাত্রছাত্রীরা যে যেমন পারে এই সমবায়ে সঞ্চয় করে। কেউ সপ্তাহে ২-৫ টাকা, কেউ ৫- ১০ টাকা। কে, কত টাকা জমা করল তা খাতায় লিখে রাখা হয়। কেউ পেন-পেন্সিল কিনলে জমা টাকা থেকে তার দাম কেটে নেওয়া হয়। আর সেই দাম নেওয়া হয় পাইকারির হারে, যা খোলাবাজারের থেকে অনেকটাই কম। সৌম্যসুন্দরবাবুর কথায়, “স্কুলে যে পেন ১ টাকা ৭৫ পয়সায় মেলে বাজারে তার দাম ৩ টাকা। এখানে স্কুলের লাভ-ক্ষতির কোনও ব্যাপার নেই। ছাত্রছাত্রীরা উপকৃত হচ্ছে, এটাই প্রাপ্তি।”

পলাশি প্রাথমিক স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৯১, শিক্ষক ৫জন। এর মধ্যে ২ জন পার্শ্বশিক্ষক। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র বুদ্ধদেব হেমব্রম যেমন স্কুলের সমবায়ে গত এক বছরে ২৬৩ টাকা জমিয়েছিল। এর মধ্যে ২০১ টাকা ৫০ পয়সার শিক্ষাসামগ্রী কিনেছে সে। সঞ্চয়ের ৬১ টাকা ৫০ পয়সা এ দিন তাকে ফেরত দেওয়া হয়েছে। বুদ্ধদেব স্কুলের শিশু সংসদের ‘প্রধানমন্ত্রী’। তার কথায়, “এই সময়ের মধ্যে খাতা, পেনসিল, পেন যা প্রয়োজন হয়েছে, স্কুল থেকেই কিনেছি। বাজারের থেকে অনেক কম দামে এখানে থেকে পেয়েছি। টাকা জমা করায় বাধ্যবাধকতা ছিল না। যখন যেমন পেরেছি ২-৫ টাকা করে জমা করেছি।” বুদ্ধদেবের বাবা লক্ষ্মীকান্ত হেমব্রম কাপড়ের দোকানে কাজ করেন। সামান্য জমি রয়েছে। লক্ষ্মীকান্তবাবু বলছিলেন, “স্কুলের এই উদ্যোগ খুবই ভাল। এক বছরে খাতা-পেন্সিল কেনা নিয়ে ভাবতে হয়নি।”

শিশু সমবায়ের বর্ষপূর্তিতে এ দিন স্কুলে এসেছিলেন মেদিনীপুর সদর পঞ্চায়েত সমিতির নারী ও শিশুকল্যাণ কর্মাধ্যক্ষ শ্রাবন্তী মণ্ডল। তিনিও মানছেন, “এখন সমবায় অনেক বদলে গিয়েছে।
স্কুলের এই ভাবনাটা সত্যিই অন্য রকম।” অনুষ্ঠানে উপস্থিত এলাকার বিধায়ক দীনেন রায়ও শিশু সমবায়ের প্রশংসা করেন। তাঁর কথায়, ‘‘এই ব্যবস্থাকে যদি জনপ্রিয় করা যায়, তাহলে ছাত্রছাত্রীদের আরও কল্যাণ হবে।’’ বিধায়ক তহবিল থেকে স্কুলের উন্নয়নে অর্থ সাহায্যের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।

এক বছরে যারা বেশি সঞ্চয় করেছে, এ দিন তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। সৌম্যসুন্দরবাবু বলছিলেন, “ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যাতে সঞ্চয়ের মানসিকতাটা তৈরি হয় সেই জন্যই এই পুরস্কার।” শিক্ষামূলক প্রদর্শনী থেকে ম্যাজিক শো, এ দিন স্কুলে নানা অনুষ্ঠানও হয়।

School Pen Pencil Students
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy