সাজ: নিজের বাড়ি সাজিয়ে তুলছেন এক শিল্পী। নিজস্ব চিত্র
মাটির বাড়ির নিকোনো দেওয়াল যেন হঠাৎই হয়ে উঠেছে ক্যানভাস— শিল্পীর রঙিন হাতে বিচিত্র তার রূপ। একে একে রঙে ভরে গিয়েছে কুঁড়ে ঘরগুলি।
আগামী শুক্রবার, ১০ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনের পটচিত্র মেলা। পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার নয়া গ্রামে দীর্ঘদিন ধরেই হচ্ছে এমন মেলা— পটমায়া। সেই আদলে এই প্রথম পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুরের নানকারচক গ্রাম সেজে উঠছে পট শিল্পীদের হাতের গুণে।
একটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে হবিচক-নানকারচক লোকশিক্ষা শিল্প পটুয়া সমিতির আয়োজনে এই মেলায় থাকবে কেনাকাটার ব্যবস্থাও। সঙ্গে পটুয়াদের হাতের কাজ দেখার অভিজ্ঞতা। এমনকী শিল্পীদের সঙ্গে থেকে শিখে নিতে পারবেন প্রকৃতি থেকে রং সংগ্রহ করার প্রক্রিয়াও। শোনা যাবে কল্পনা চিত্রকর, আলেয়া চিত্রকর, হাসিনা চিত্রকরদের সাফল্যের কাহিনিও।
গত বছর নিজের কাজ নিয়ে লন্ডন গিয়েছিলেন এই গ্রামের শিল্পী নুরদিন চিত্রকর। বার্মিংহামের স্প্রিং ফেস্টিভালে তাঁর শিল্পকর্ম প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সেখান থেকে বাকিংহাম প্যালেস কর্তৃপক্ষ একটি শিল্পকর্ম কিনেও নিয়ে গিয়েছিলেন। নুরদিনের এমন সাফল্য উদ্বুদ্ধ করেছে অন্য শিল্পীদেরও। এ বারের ‘পটচিত্র মেলা’ নিয়েও তাই তাঁদের উৎসাহের অন্ত নেই।
মেলার প্রস্তুতিতে রাত দিন এক করে ফেলেছেন শুভ চিত্রকর, নুরদিন চিত্রকররা। সঙ্গে আছেন গ্রামের ১২৬ টি পরিবারের মহিলা শিল্পীরাও। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদ।
এ রাজ্যে পট চিত্রের ইতিহাস বড় পুরনো। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা শিল্প কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার সমিত চট্টোপাধ্যায় বললেন, “পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুর ব্লকের হবিচক, নানকারচক, মুরাদপুর ও খড়িগেড়িয়া, এই চারটি গ্রামে ১২৬টি পটুয়া পরিবারের বাস। প্রায় ৩৫০ বছর আগে তাঁদের পূর্ব পুরুষরা অভিভক্ত বাংলাদেশ থেকে এখানে এসে বসবাস শুরু করেছিলেন। সেই থেকে পটচিত্রের ট্র্যাডিশন চলছে।’’
আজকের প্রজন্মের শিল্পী নুরদিন ঘুরে এসেছেন বিদেশে। কিন্তু তিনি সার বুঝেছেন, ‘‘শুধু শিল্প সৃষ্টি বা তার উৎকর্ষ সাধন শেষ কথা নয়। জোর দিতে হবে বিপণনে, তৈরি করতে হবে বাজার। শিল্পী বাঁচলে, তবেই বাঁচবে শিল্প।’’ তাই নতুন করে পট চিত্রকে রূপায়িত করছেন তাঁরা। মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন পটচিত্রের গল্পে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে প্রতিটি বাড়ির দেওয়াল। তা ছাড়া পটচিত্রের নিজস্ব অঙ্কন রীতিতে রঙিন হয়ে উঠছে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, টি শার্ট, ছাতা, হাতপাখা, হ্যান্ড-ব্যাগ বা ট্রে, মোড়া, ঘর সাজাবার নানা উপকরণ।
প্রতিটি বাড়ির দাওয়ায় থাকবে বিকিকিনির আয়োজন। থাকবে কর্মশালাও। তৈরি হয়েছে একটি মঞ্চ। সেখানে তিন দিন থাকবে বাউল গান, ছৌ নাচ-সহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন।
রাজ্য সরকারের ক্ষুদ্র, ছোট, মাঝারি উদ্যোগ ও বস্ত্র দফতরের সঙ্গে ইউনেস্কোর সহযোগিতায় ১০ টি জেলায় গ্রামীণ শিল্প কেন্দ্র (রুরাল ক্রাফট হাব) গড়ে তোলার মউ সাক্ষরিত হয়েছিল। দায়িত্বে ছিলেন এই মেলার উদ্যোক্তা বেসরকারি সংস্থাটি।
সেই সংস্থার ম্যানেজার নির্মাল্য রায় জানালেন, ‘‘এই হাবগুলির মাধ্যমে সারা রাজ্যে ১৫০০০ লোকশিল্পী ও হস্তশিল্পীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রকল্পের অধীনে থাকা গ্রামগুলিতে প্রতি বছর অক্টোবর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে একটি করে মেলার আয়োজন করা হয় তাদের নিজস্ব শিল্পের প্রচার ও বিপণনের জন্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy