এক চিলতে ঘর থাকলেই হল। ঝুপড়িও হতে পারে! ঘরটা রক্ত পরীক্ষাকেন্দ্রের মতো করে একটু সাজিয়ে নিয়ে বাইরের দেওয়ালে পোস্টার বা বোর্ড লাগিয়ে দিতে হবে। জানিয়ে দিতে হবে, এটি ‘কালেকশন সেন্টার’। রক্তের পরীক্ষা হয়। নিয়ম আছে। সে নিয়ম মানা হচ্ছে কি না, তা দেখতে পরিদর্শনও হয়। অভিযোগ, এ সবের ফাঁক গলে রমরমিয়ে বেআইনি ভাবে চলছে রক্ত পরীক্ষাকেন্দ্র। পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম- দুই জেলাতেই ছবিটা মোটের উপর এক।
কখনও কখনও ওই কেন্দ্রগুলির ভুল রিপোর্ট দেওয়া নিয়ে গোলমাল বাধে। কিছু দিন তা নিয়ে আলোচনা হয়। তার পর যে কে সেই! কখনও দেখা যায়, সেন্টারের প্যাডে বা রিপোর্টের কাগজে চিকিৎসক আগেভাগে সই করে রাখছেন। পরে সেন্টারের কর্মীরা সেই কাগজে রিপোর্ট লিপিবদ্ধ করে তা রোগীর হাতে তুলে দেন। পশ্চিম মেদিনীপুর ডায়াগনস্টিক ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সম্পাদক বিশ্বনাথ দাস বলেন, ‘‘বেশ কিছু ডায়াগনস্টিক সেন্টার অবৈধ। দায়সারা ভাবে কাজ করছে, অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। আমরা ওই সব সেন্টারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেওছি।’’
চন্দ্রকোনা রোডের সাতবাঁকুড়ার বাসিন্দা এক ব্যক্তি অবৈধভাবে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেন বলে অভিযোগ। সংগৃহীত নমুনা একটি রক্ত পরীক্ষা কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেন। রিপোর্ট সেখান থেকে এলে রোগীদের কাছে পৌঁছে দেন। অভিযুক্তের অবশ্য দাবি, ‘‘আমি রক্তের নমুনা সংগ্রহ করি না। আমার কোনও সেন্টার নেই।’’ ঝাড়গ্রাম জেলাতেও দিব্যি রমরমিয়ে চলেছে কিছু বেআইনি রক্তপরীক্ষাকেন্দ্র। ভুল রিপোর্টের ভিত্তিতে ভুল চিকিৎসার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। জেলায় প্যাথোলজিস্ট ছাড়াই রিপোর্ট তৈরির অভিযোগ উঠছে একাংশ ল্যাবে। অভিযোগ, লাইসেন্স ছাড়াই গজিয়ে উঠেছে এই সব ল্যাবরেটরি। গোপীবল্লভপুর, নয়াগ্রাম, সাঁকরাইল ব্লকে বেআইনি ল্যাবরেটরির সংখ্যা বেশি। এ ক্ষেত্রেও একই ভাবে আগে থেকে সই করিয়ে রাখার অভিযোগ রয়েছে।
ঝাড়গ্রাম জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভুবনচন্দ্র হাঁসদা সমস্যার কথা মানছেন। ভুবনচন্দ্র বলেন, ‘‘আগে থেকে সই করা নিয়ে অভিযোগ এসেছিল। তা ধরার পর সংশ্লিষ্ট ল্যাবরেটরিকে ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে সতর্ক করা হয়েছে।’’ জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, ল্যাবরেটরির জন্য ‘ক্রিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্ট’ অনুযায়ী অনলাইনে লাইসেন্সের আবেদন করতে হয়। তার পর সরেজমিনে পরিদর্শন ও সবকিছু খতিয়ে দেখে লাইসেন্স দেওয়া হয়। একবার লাইসেন্স পাওয়ার পর পরবর্তী ক্ষেত্রে আর পুননর্বীকরণ করতে চায় না একাংশ সেন্টার। ‘স্মল ল্যাব’ হিসেবে লাইসেন্স নেওয়ার কথা ‘কালেকশন সেন্টারে’র। তা-ও নিতে চায় না একাংশ সেন্টার। ভুবনচন্দ্র বলেন, ‘‘ বাড়িতে বসে কেউ টেস্ট করলে তা কোনওভাবে বোঝা যাচ্ছে না।’’
পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী বলেন, ‘‘নজরদারি রয়েছে। পরিদর্শন চলে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’ (চলবে)
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)