E-Paper

নামে ধাম কেন? প্রশ্ন নানা মহলে

সরকারি ই-টেন্ডারের নথিতে অবশ্য দিঘার নতুন মন্দিরের পরিচয়, ‘জগন্নাথ ধাম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’ হিসেবে। সেখানে মন্দির শব্দটি নেই।

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:৪২
মেদিনীপুরেও জগন্নাথ ধাম উদ্বোধনের প্রচার।

মেদিনীপুরেও জগন্নাথ ধাম উদ্বোধনের প্রচার। নিজস্ব চিত্র ।

রাজনৈতিক ভাবেই বিতর্কটা শুরু হয়েছিল। পরে কেউ কেউ আভিধানিক বা ঐতিহ্যগত দিক থেকেও প্রশ্ন তুলছেন। দিঘায় নতুন জগন্নাথ মন্দিরকে ধাম বলা হচ্ছে। এই মন্দিরের উদ্বোধন ৩০ এপ্রিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্বোধন করার কথা। অনেকেরই প্রশ্ন, যে মন্দিরের উদ্বোধনই হয়নি তাকে ধাম বলা যাবে কী করে? এ যে প্রচলিত ‘রাম না জন্মাতেই রামায়ণ’এর মতো বিষয়!

ধাম কাকে বলে? নানা অভিধান অনুসারে, তীর্থস্থান বা আবাস। আবাস সাধারণ মানুষেরও হতে পারে। যেমন, মাতৃধাম। আবার দেবতার নামেও হতে পারে। যেমন, গোলোকধাম। কিন্তু তীর্থস্থান হতে গেলে দেবতা বা মহাপুরুষের লীলা বা অধিষ্ঠান ক্ষেত্র হতে হবে। এক সংস্কৃতজ্ঞ জানাচ্ছেন, ধাম কথার অর্থ তেজ, জ্যোতিও হয়। জয়তি কনকঃ ধামা কৃষ্ণ চৈতন্য নামে। তাঁর ব্যাখ্যা, তেজোদীপ্ত কেউ জন্ম গ্রহণ করলে কিংবা প্রতিষ্ঠা করলে সেটা ধাম হতে পারে। নবদ্বীপে চৈতন্যদেবের জন্ম। তাই সেটি ধাম।

এই সংজ্ঞায় কি দিঘার জগন্নাথ মন্দিরকে ধরা যায়? ইস্কনের মেচেদা শাখার সম্পাদক অমলেন্দু জানা বলেন, "দিঘায় যা হচ্ছে তাকে কোনও ভাবেই ধাম বলা যেতে পারে না। যাঁরা বেড়াতে যাবেন তারা নিশ্চিত মন্দির দর্শন করবেন ঠিক। তবে দেশের চার ধামের একটা নির্দিষ্ট ডেমোগ্রাফি আছে। উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব আর পশ্চিম প্রান্তে গড়ে উঠেছে সেই সব ধাম।" ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের মহিষাদল শাখার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গৌতম মহারাজের কথায়, "ব্যক্তিগত ভাবে বলতে পারি, কোনও জায়গায় ধাম তখনই গড়ে ওঠে যদি সেখানে মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করেন। পুরীতে মহাপ্রভু অবস্থান করেছিলেন। তাই সেখানে ধাম গড়ে উঠেছে।’’

সরকারি ই-টেন্ডারের নথিতে অবশ্য দিঘার নতুন মন্দিরের পরিচয়, ‘জগন্নাথ ধাম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’ হিসেবে। সেখানে মন্দির শব্দটি নেই। কিন্তু পশ্চিম মেদিনীপুরের মেদিনীপুর শহরে সোমবার জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন নিয়ে একটি প্রচার-ফ্লেক্স দেখা গিয়েছে। সরকারি এই প্রচারে মন্দিরটিকে জগন্নাথ ধাম হিসেবেই পরিচয় করানো হয়েছে। দিঘায় পুরনো একটি জগন্নাথ মন্দির রয়েছে। সেটি নতুন মন্দিরের জগন্নাথের মাসির বাড়ি হিসেবে ঘোষিত হতে চলেছে। ওই মন্দিরের প্রধান পুরোহিত তথা জগন্নাথ ধাম সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের ট্রাস্টের অন্যতম সদস্য পূর্ণচন্দ্র নন্দ বলেন, "পুরীতে জগন্নাথ দেবের মন্দির গড়ে ওঠার পিছনে অনেক ইতিহাস আছে। রাজা-রাজড়াদের হাত ধরে হয়েছে। দিঘায় আগে পুরনো মন্দির ছিল। এখন মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে মহাপ্রভুর মন্দির হচ্ছে।"

খেজুরির প্রাচীন কলিয়াচক সংস্কৃত মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা সংস্কৃত গবেষক অভিজিৎ পন্ডা বলেন, "ধামন্ শব্দ থেকে ধাম শব্দটি এসেছে। তীর্থক্ষেত্র ছাড়াও ধাম গড়ে উঠতে পারে। যদি দিঘায় বিশেষ কিছু কর্ম হয়ে থাকে এবং অনেক মানুষের আগমন ঘটে তা হলে মহাপ্রভুর মন্দিরকে ধাম বলতে আপত্তি নেই।’’

বিজেপি নতুন মন্দিরকে ধাম বলতে রাজি নন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আগেই জানিয়েছিলেন নতুন মন্দির ধাম নয়। রবিবার তিনি বলেন, "ওটা মন্দির নয়। ধামও নয়। কেউ মুখে বলতেই পারেন।" তবে রাজ্য তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র কুণাল ঘোষের ব্যাখ্যা, "সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধামের পরিবর্তন ঘটে। যেখানে মন্দিরে পুজো হচ্ছে, প্রতিষ্ঠা হচ্ছে, আরতি হবে সেটাই বাড়ি হিসেবে গৃহীত হবে। বিজেপি নেতারা যত মন্দিরে যান ওই মন্দিরের সঙ্গে তার দেবতার সম্পর্ক রয়েছে, এটা নিশ্চিত করে বলতে পারবেন!"

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

digha

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy