E-Paper

নিমেষে চোখের তলায় বহু গ্রাম

বৃহস্পতিবার চন্দ্রকোনার সিমলায় জলের তোড়ে ভেসে যান এক তুলসী রুইদাস নামে যুবক। সেতুতে উঠে কোনও ভাবে জীবন বাঁচান ওই যুবকের স্ত্রী।

অভিজিৎ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২৫ ০৯:০৯

হঠাৎ জলের তোড়। স্ত্রীর চোখের সামনে তলিয়ে গেলেন স্বামী। কোনও ভাবে জীবন বাঁচালেন স্ত্রী। চন্দ্রকোনা এ এক টুকরো জলছবি। শিলাবতী নদীর চাপে নিমেষে জলের তলায় চলে গিয়েছে একাধিক গ্রাম।

কোথাও দেড়তলা পাকার বাড়ি জলের তলায়। কোথাও টিনের ছাউনির মাথাটুকু দেখা যাচ্ছে। শিলাবতীর বাঁধ ভেঙে নিমেষের মধ্যেই জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল গ্রাম গুলি। গ্রামের বাসিন্দাদের প্রস্তুতি ছিল না। ফলে জরুরি কাগজপত্র-সহ ঘর গেরস্থালির সব জিনিসপত্রও ছড়ানো ছিটনো ছিল। মজুত ছিল না জ্বালানি,পানীয় জল থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় কোনও কিছুই। হাতের কাছে নৌকাও নেই। শেষ বাঁধ ভেঙে এমন পরিস্থিতি হয়েছিল সেই ১৯৭৮ সালে। ফলে জল দুর্ভোগের এতটা তিক্ত অভিজ্ঞতাও ছিল না। কিন্তু দু’দিনের নিম্নচাপের বৃষ্টিতে আচমকাই জলবন্দি হয়ে আতান্তরেচন্দ্রকোনার বাসিন্দারা।

বৃহস্পতিবার চন্দ্রকোনার সিমলায় জলের তোড়ে ভেসে যান এক তুলসী রুইদাস নামে যুবক। সেতুতে উঠে কোনও ভাবে জীবন বাঁচান ওই যুবকের স্ত্রী। সাহায্যে এগিয়ে আসেন গ্রামবাসীরা। শুক্রবার স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে ওই মহিলাকে উদ্ধার করে প্রশাসন। যুবকের খোঁজ নেই এখনও।শুক্রবার ওই মহিলা বলছিলেন, “সাইকেলে করে আত্মীয়র বাড়ি থেকে যাদবনগরে গ্রামের বাড়ি ফিরছিলাম। হঠাৎ করে জলের তোড়ে স্বামী ভেসে যান। আমি কোনও ভাবে সেতুতে উঠে পড়েছিলাম। স্বামীকে পাওয়া যায়নি।’’

এ দিন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গড়বেতা থেকে চন্দ্রকোনা পৌঁছন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। সঙ্গে ছিলেন সেচ সচিব মনীশ জৈন, পঞ্চায়েত সচিব পি উলগানাথন, জেলা শাসক খুরশিদ আলি কাদরী, পুলিশ সুপার ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়, জেলা সভাধিপতি প্রতিভা মাইতি, সহ সভাধিপতি অজিত মাইতি। একাধিক এলাকা পরিদর্শন করেন তাঁরা। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন চন্দ্রকোনা ব্লক অফিসে। মানস বলেন, ‘‘এত বৃষ্টি হওয়ায় জলমগ্ন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রশাসন দুর্গতদের উদ্ধার-সহ প্রাথমিক দায়িত্ব পালন করেছে।’’

বৃহস্পতিবার সকালেও চন্দ্রকোনার স্থানীয় খাল গুলি কার্যত শুকনো ছিল।বেলা বাড়ার সঙ্গে নদীর জলের চাপ দ্রুত বাড়তে থাকে। ব্লকের ভগবন্তপুর ১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় একাধিক নদীবাঁধে বড় বড় ফাটল দেখা দেয়। চোখের পলকে ডুবে যায় চন্দ্রকোনা ২ ব্লকের কল্লা, খুড়শি, চৈতন্যপুর, কমরপুর, পাঁচামি, নিত্যানন্দপুর, পলাশচাবড়ি, কেশেডাল, ইশনগর, সিমলা, আকতকলা পঞ্চাশ ষাটটি গ্রাম। প্লাবিত বাসিন্দাদের প্রশ্ন, “ছ’মাস ধরে বাঁধ মেরামতির কথা বলা হচ্ছিল। মাস্টার প্ল্যানের এত প্রস্তুতির পরেও সময়ে বাঁধ সংস্কার করা হল না কেন?”

বাঁধ ভাঙার পরই প্রশাসনের তরফে দুর্গত বাসিন্দাদের উদ্ধার করে আশ্রয় শিবিরে রাখার ব্যবস্থা করে প্রশাসন। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন থাকায় ঘর থেকে বাসিন্দারা বেরোতেই পারেনি অনেকে। পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। রাস্তাঘাট, স্কুল-সহ সরকারি নানা প্রতিষ্ঠানও জলের তলায় চলে যায়। গ্রামে নৌকাও নেই। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলার কর্মীরা জলের পাউচ নিয়ে এলাকায় বিলি করলেও সব গ্রামে সেই পাউচ পাচ্ছে না বলে অভিযোগ। দুর্গত গ্রাম গুলিতে গবাদি পশুদের খাবারও নেই। বৃহস্পতিবার রাত থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন গ্রাম গুলি।

এ দিন জলমগ্ন কেশেডাল গ্রামের বটকৃষ্ণ কাণ্ডার বলছিলেন, “কখন সেই ৭৮ সালে বন্যা হয়েছিল। এ বার কোনও ভাবে আধার কার্ড, রেশন কার্ড তুলে রাখতে পেরেছিলাম। খাবার জল নেই। রান্না করার কাঠও নেই।উনোনও জলে ডুবে গিয়েছে। মুড়ি খেয়েই রাত কাটিয়েছি।” চন্দ্রকোনার মতো ক্ষীরপাই (চন্দ্রকোনা ১) ব্লকের একাংশ- সহ ক্ষীরপাই পুরসভার একাধিক ওয়ার্ডও জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ক্ষীরপাই ব্লকের মনোহরপুর ১ ও ২, মানিকুন্ডু, লক্ষ্মীপুর-সহ একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েত জলমগ্ন। ক্ষীরপাই পুরসভার ১, ২,৮,৯ ও ৫ নম্বর জলমগ্ন। একাধিক ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। এ দিন সেচমন্ত্রী-সহ আধিকারিকেরা ক্ষীরপাইয়ের জারায় ত্রিপল বিলি করেছেন। ক্ষীরপাইয়ের ব্লক অফিসেও পরিস্থিতি মোকাবিলায় হয়েছে বৈঠক।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Chandrakona

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy