Advertisement
০৭ মে ২০২৪
ওঝার কাছে নয়, যান হাসপাতালে

এ বার প্রচারে নামবেন জামবনির লালু!

রবিবারই লালুকে হাসপাতাল থেকে গাড়িতে বাড়ি পৌঁছে দিতে এসেছিলেন ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক শুভঙ্কর গায়েন। তিনি বলেন, “সাপে কামড়ালে ওঝা নয়, সরাসরি সরকারি হাসপাতালে যাতে লোকজন যায়, সেটা গ্রামের লোকেদের বোঝাবে লালু।”

ঘরে-ফেরা: হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পর। রবিবার নিজস্ব চিত্র

ঘরে-ফেরা: হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পর। রবিবার নিজস্ব চিত্র

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৭ ১২:৪৫
Share: Save:

সাপে কেটেছিল জামবনি ব্লকের পড়শুলি গ্রামের বছর পনেরোর লালু মুর্মুকে। সরকারি হাসপাতালে না গিয়ে গুনিনের উপরে ভরসা করেছিলেন পরিবার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসাতেই বেঁচে ফিরেছে লালু। তাই সর্পদষ্ট রোগীকে সবার আগে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিতে লালুই এখন প্রচারের মুখ।

রবিবারই লালুকে হাসপাতাল থেকে গাড়িতে বাড়ি পৌঁছে দিতে এসেছিলেন ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক শুভঙ্কর গায়েন। তিনি বলেন, “সাপে কামড়ালে ওঝা নয়, সরাসরি সরকারি হাসপাতালে যাতে লোকজন যায়, সেটা গ্রামের লোকেদের বোঝাবে লালু।” আর লালুর কথায়, ‘‘ডাক্তারবাবুর জন্য জীবন ফিরে পেয়েছি। সাপে কাটলে গুনিন নয়, সরকারি হাসপাতালেই যে যেতে হবে এটা সবাইকে বোঝাব।”

পরিবার সূত্রে খবর, গত ৩ জুন রাতে রাতে বাঁ হাতে হুল ফোটার মতো যন্ত্রণায় ঘুম ভেঙে যায় লালুর। পরদিন সকালে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে গুনিনের ওষুধ খাওয়ানো হয়। ৫ জুন সকাল থেকেই সে চোখ খুলতে পারছিল না। খাওয়াদাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। কাউকে চিনতেও পারছিল না সে। এই অবস্থায় তাকে প্রথমে চিল্কিগড় গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। জানা যায় তাকে সাপে কামড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে লালুকে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে রেফার করা হয়। ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের সিসিইউতে যখন লালুকে ভর্তি করা হয়, তখন তার অবস্থা সঙ্কটজনক ছিল বলে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান।

আরও খবর
চিকিৎসক পারেন না, দালাল পারে

সিসিইউ-এর চিকিৎসক শুভঙ্কর গায়েন বলেন, “অসুস্থ লালুকে দু’দিন বাড়িতে ফেলে রাখা হয়েছিল। ফলে চিকিৎসায় তেমন সাড়া দিচ্ছিল না। অ্যান্টি ভেনাম সিরাম ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়ার পরেও লালুর রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ ছিল খুবই কম।” ৫ তারিখ রাতে লালুকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। টানা ৭২ ঘণ্টা সেখানে থাকার পরে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে লালু। এই পাঁচ দিন লালুকে কড়া পর্যবেক্ষণে রেখেছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। লালুর বাবা হপনা মুর্মু বলেন, “ছেলেকে যে সাপে কামড়েছে তা বুঝতেই পারিনি। হাসপাতালে যখন নিয়ে যাই তখন ওর অবস্থা খুবই খারাপ। কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।” তিনি জানান, হাসপাতালে দু’দিন পরেও ছেলে সুস্থ না হওয়ায় আত্মীয়রা ধার দেনা করে ছেলেকে সরকারি হাসপাতালে থেকে সরিয়ে নার্সিংহোমে ভর্তি করতে বলে। কিন্তু ঝাড়গ্রাম হাসপাতালের ডাক্তারবাবুরা আশ্বাস দিয়ে বলেন, এখানে আর ভালও পরিষেবা দেওয়া হবে। তাই আর কোথাও যাইনি। শেষ পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসাতেই ছেলে ঘরে ফিরল।

সিএমওএইচ (ঝাড়গ্রাম) অশ্বিনী মাঝি বলেন, ‘‘জানুয়ারি থেকে এপর্যন্ত ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের সিসিইউতে সাপে কামড়ে অসুস্থ ১৮ জন ভর্তি হন। এর মধ্যে ১৬ জনকে সুস্থ করা গিয়েছে।’’ তিনি জানান, ভেন্টিলেটর সাপোর্ট পাওয়ার জন্যই লালুকে প্রাণে বাঁচানো গিয়েছে। বহু ক্ষেত্রেই সাপে কাটলে গ্রামে গঞ্জে ওঝার কাছে সকলে দৌড়ান। পরে হাসপাতালে আসেন। কিন্তু ততক্ষণ অনেক দেরি হয়ে যায়। তা ছাড়া অনভিজ্ঞতার জন্য অনেকে সাপে যে কেটেছে তাই-ই বুঝতে পারেন না। এ বিষয়ে সচেতনতার জন্য গ্রামে গঞ্জে কর্মশালা করা হবে। সেখানে লালুর উদাহরণ দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE