E-Paper

মহিলাদের স্বনির্ভরতার আড়ালে কি প্রতারণা চক্র! চিন্তা প্রশাসনে

দিনকয়েক ধরেই ঘাটাল মহকুমা জুড়ে হাজার হাজার মহিলার থেকে নানা গুরুত্বপূর্ণ নথি সংগ্রহ নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।

অভিজিৎ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:৪২

কাজুবাদাম প্যাকেটে ভরলেই আয় হবে হাজার হাজার টাকা। বিগত কয়েকদিন ধরে এলাকার মহিলাদের এ ভাবেই রোজগারের ‘সুযোগ’ দেওয়া হচ্ছে। গ্রামেরই এক মহিলাকে প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। তারপর সেই মহিলাকে সামনে রেখেই চলছে মহিলাদের ‘গ্রুপ’ তৈরির কাজ। এরপর গ্রুপের মহিলাদের আধার কার্ড, ছবি এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট-সহ ব্যাঙ্কের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ঘটনায় শোরগোল পড়তেই তৎপর হয়েছে পুলিশ-প্রশাসন।

দিনকয়েক ধরেই ঘাটাল মহকুমা জুড়ে হাজার হাজার মহিলার থেকে নানা গুরুত্বপূর্ণ নথি সংগ্রহ নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। নিছকই রোজগারের সুযোগ নাকি অন্য কোনও অভিসন্ধি রয়েছে এর পিছনে— তা নিয়ে চলছে চাপানউতোর। এ ব্যাপারে সন্দেহ আরও বেড়েছে তৃণমূলের দাসপুর ২ ব্লক সভাপতি সৌমিত্র সিংহরায়ের এক বিবৃতি ঘিরে। সেখানে সৌমিত্র দাবি করছেন, ‘কাজুবাদাম প্যাকেটে ভরার কাজে টোপ দিয়ে গ্রামে গ্রামে মহিলাদের গ্রুপ তৈরির নামে গুরুত্বপূর্ণ নথি সংগ্রহের কাজ অত্যন্ত সন্দেহজনক’। পাশাপাশি তাঁর আরও বার্তা— ‘দলের কোনও কর্মী-নেতা কিংবা জনপ্রতিনিধিরা যেন এ ব্যাপারে জড়িত না থাকেন। দলের একটা ভাবমূর্তি রয়েছে’। দলীয় বৈঠক করে সে কথা তিনি জানিয়েছেন বলে খবর।

যদিও তৃণমূলের ঘাটাল সাংগাঠনিক জেলা সভাপতি আশিস হুতাইত বলছেন, ‘‘এক সংস্থা মহিলাদের ওই কাজের সুযোগ করে দিচ্ছে বলে শুনেছি। কাজুবাদাম প্যাকেট করলে ঘরে বসেই মহিলাদের বাড়তি আয় হবে। এই কাজে সন্দেহের আর কী রয়েছে? ব্যাঙ্কেই তো টাকা পাঠাবে। তাই ব্যাঙ্কের তথ্য নিচ্ছে তারা।’’ বিষয়টি নিয়ে ঘাটালের মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাস অবশ্য বলেন, ‘‘ঘটনাটি নজরে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে।’’ জেলা পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টির খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।’’

জানা গিয়েছে, বেশ কিছুদিন ধরে কাজুবাদামের প্যাকেট তৈরির নাম করে গ্রামে গ্রামে মহিলাদের নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে গ্রুপ। মোট ২৮ জন মহিলাকে নিয়ে তৈরি হচ্ছে এই গ্রুপ। তার আগে মহিলাদের কাছ থেকে আধার কার্ড, ব্যাঙ্কের তথ্য জমা দিতে বলা হচ্ছে। প্রতি গ্রুপে একজন মহিলাকে সুপার-ভাইজ়ার হিসেবে নিয়োগ করা হচ্ছে। ওই সুপার-ভাইজার পুরো গ্রুপটিকে পরিচালনা করবেন। মহিলা সদস্যদের কাজ হল, কাজুবাদাম প্যাকেট করে তা জমা দেওয়া। প্রতি প্যাকেট পিছু টাকা পাবেন তাঁরা। সারা দিনে যিনি যত প্যাকেট করতে পারবেন, তাঁর রোজগার তত বেশি। তার জন্য সকলের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে কাজুবাদাম এবং পলিথিন প্যাকেট। ঘরে বসে এমন আয়ের সুযোগ পেয়ে নাম লেখানোর হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছে ঘাটাল মহকুমা জুড়ে। কয়েক দিনে মহকুমায় এই রকম এক হাজার গ্রুপ নাকি তৈরি হয়ে গিয়েছে। ঘাটাল, দাসপুর ও চন্দ্রকোনা তিনটি থানা এলাকা জুড়েই চলছে ওই গ্রুপ তৈরির কাজ। এই মুহূর্তে গোটা ঘাটাল মহকুমায় নাকি ৩০ হাজার মহিলা ওই গ্রুপের সদস্য হয়েছেন। সংস্থার ডাকে মাঝে মধ্যে মহিলাদের নিয়ে কর্মশালা হচ্ছে বলেও খবর। সেখানে ভিড় জমিয়েছিলেন অন্তত কয়েক হাজার মহিলা এবং সেই ভিড় দেখেই সন্দেহ বেড়েছে প্রশাসনের।

ঘাটালের এক তৃণমূল নেতা বলছেন, ‘‘গ্রামের মহিলাদের কাছে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প সবচেয়ে জনপ্রিয়। কিন্তু এতো দেখছি, লক্ষ্মীর ভান্ডারের চেয়েও বেশি জনপ্রিয়। তা-ও আবার মাত্র কয়েকদিনে। নিঃশব্দে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

ghatal

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy