Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

কর্মী সঙ্কটে ধুঁকছে জেলার গ্রন্থাগারগুলি

জেলার গ্রন্থাগারগুলিতে ৬০ শতাংশ পদই শূন্য। ফলে হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া বেশিরভাগ গ্রন্থাগারই নিয়মিত খোলা রাখা যায় না। আর তার জেরে সমস্যায় পশ্চিম মেদিনীপুরের পুস্তকপ্রেমীরা।

বন্ধ পড়ে দাসপুরের বাসুদেবপুরের পাঠাগার। —নিজস্ব চিত্র।

বন্ধ পড়ে দাসপুরের বাসুদেবপুরের পাঠাগার। —নিজস্ব চিত্র।

সুমন ঘোষ
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৫ ০০:১৪
Share: Save:

জেলার গ্রন্থাগারগুলিতে ৬০ শতাংশ পদই শূন্য। ফলে হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া বেশিরভাগ গ্রন্থাগারই নিয়মিত খোলা রাখা যায় না। আর তার জেরে সমস্যায় পশ্চিম মেদিনীপুরের পুস্তকপ্রেমীরা।

গ্রন্থাগার দফতর সূত্রে খবর, জেলা গ্রন্থাগার ও শহর গ্রন্থাগারে অনুমোদিত কর্মী সংখ্যা কিছুটা বেশি হলেও (জেলা গ্রন্থাগারে ১০ ও শহর গ্রন্থাগারে ৪ জন কর্মী) গ্রামীণ গ্রন্থাগারে কর্মী সংখ্যা মাত্র ২ জন। পিছিয়ে পড়া এই জেলায় গ্রামীণ গ্রন্থাগারের সংখ্যাই বেশি। ১৫৮টি গ্রন্থাগারের মধ্যে একটি জেলা গ্রন্থাগার, শহর গ্রন্থাগার ১৫টি আর ১৪২টি গ্রামীণ গ্রন্থাগার। কর্মীর অভাবে গ্রামীণ গ্রন্থাগারগুলির হাল বেশি খারাপ। অন্য অফিসে এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অফিসেরই অন্য কর্মী দিয়ে কাজ চালানো হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সে সুযোগ নেই। ফলে, একজন গ্রন্থাগারিককে একাধিক গ্রন্থাগারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই তিনি যে দিন যেখানে থাকবেন সেটি চালু থাকলেও অন্যগুলি বন্ধ থাকবে।

পড়ার প্রবণতা বাড়ানো ও সুস্থ সংস্কৃতি গড়ে তোলার লক্ষ্যেই গ্রামে গ্রামে গ্রন্থাগার তৈরির পরিকল্পনা করেছিল সরকার। মানুষকে গ্রন্থাগারমুখী করে পাঠক তৈরি করতে কম কসরত করতে হয়নি। তবুও বহু মানুষ যে গ্রন্থাগারমুখী হয়েছেন এমন নয়। কর্মী সঙ্কটে নিয়মিত গ্রন্থাগার না খোলায় এ বার তাতেও ভাটা পড়তে শুরু করেছে।

ধরা যাক আনন্দপুর গ্রন্থাগারের কথা। আনন্দপুরের গ্রন্থাগারিক রতিকান্ত চক্রবর্তীকে দাসপুরের বাসুদেবপুর গ্রন্থাগারেরও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে দু’টি গ্রন্থাগারই নিয়মিত চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। আগে যেখানে গ্রন্থাগারে নিয়মিত পাঠক ২৫-৩০ জন আসতেন, বিভিন্ন পত্রপত্রিকা পড়তেন, তারপর ১০-১২ জন বাড়িতে বিভিন্ন গল্প, উপন্যাস থেকে শুরু করে ছাত্রছাত্রীরা পাঠ্যবই নিয়ে যেতেন, এখন সেটাও অর্ধেকে নেমে এসেছে। গ্রন্থাগারিক রতিকান্তবাবুর কথায়, “নিয়মিত গ্রন্থাগার খোলা রাখলে মানুষের যাতায়াত বাড়ে। সংবাদপত্র থেকে বিভিন্ন মাসিক, ত্রৈমাসিক পত্রিকা পড়া, তারপর পছন্দের বই নিয়ে বাড়ি ফেরা। এটা একটা অভ্যেস। কিন্তু তাতে ধাক্কা খেলে মানুষ বিরক্ত হন। বিশেষত, ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রে সমস্যা হয় বেশি।”

গ্রামীণ এলাকার স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের অনেকেই পড়াশোনার জন্য গ্রন্থাগারের উপর নিভর্রশীল। গ্রামীণ গ্রন্থাগারগুলিতে তাই পাঠ্যবই রাখার চল রয়েছে। রতিকান্তবাবু বলেন, “বাসুদেবপুর হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রীরা তো আমার গ্রন্থাগারের নিয়মিত পাঠক। কিন্তু বর্তমানে তা প্রায়ই বন্ধ থাকার ফলে সমস্যা তো হচ্ছেই।” একই ভাবে মানিকপাড়া ও শালবনি— দু’টি গ্রন্থাগারের দায়িত্বে রয়েছেন গ্রন্থাগারিক রবিশঙ্কর শেঠ। তার উপরে জেলা গ্রন্থাগারিক অফিসেও কাজ করার জন্য তাঁকে সপ্তাহে দু’দিন শহরে আসতে হয়। ফলে সব গ্রন্থাগারে নিয়মিত থাকা অসম্ভব। নিয়মিত গ্রন্থাগার না খুললে পাঠকদেরও মন ভরে না। রবিশঙ্করবাবুর কথায়, “তারই মধ্যে চেষ্টা করি কী ভাবে সকলকে বাড়ির জন্য তাঁদের প্রয়োজনীয় বই ইস্যু করা যায়। তবে এটা ঠিক যে, গ্রন্থাগারে নিয়মিত গ্রন্থাগারিক না থাকলে সমস্যা তো হবেই।” জেলা গ্রন্থাগারিক ইন্দ্রজিত্‌ পানও মানছেন, “জেলার গ্রন্থাগারগুলিতে কর্মী সঙ্কট সত্যিই প্রকট। বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিও।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Staff shortage Library book
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE