সুনসান একাড়িয়া গ্রাম (বাঁ দিকে)। গড়বেতা আদালতে ধৃত তৃণমূল নেতা-কর্মীরা (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলে তিন জন খুন হওয়ার পরে শাসক দলেরই লোকজন গ্রেফতার হল গড়বেতায়। শুক্রবার ঘটনার রাতেই রীতিমতো অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় ৮ জনকে। সকলেই তৃণমূলের নেতা-কর্মী। একটি গোষ্ঠীর নেতা সুলজার মণ্ডলও ধরা পড়েছেন। তিনটি খুনের ঘটনায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে মোট ২৭ জন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকের নামে। পুলিশ জানিয়েছে, বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
তোলাবাজির অভিযোগে বিধাননগরের তৃণমূল কাউন্সিলর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারের পরে একটা জিনিস স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, ‘অসৎ’ হলে নিজের দলের কাউকে রেয়াত করবেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গড়বেতার ঘটনায় ধরপাকড়ের পরে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক আশিস চক্রবর্তীও বলছেন, “ওই ঘটনায় যারা জড়িত তারা গ্রেফতার হবেই। কিছু লোক দলে থেকে দলকে বদনাম করার চেষ্টা করছে। খারাপ লোকেদের দলে কোনও জায়গা নেই।”
গড়বেতার ঘটনা নিয়ে রাজ্য পুলিশের শীর্ষ মহল থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশ এসেছে বলেই জেলা পুলিশের এক সূত্রে খবর। ওই নির্দেশ পেয়ে অভিযুক্তদের ধরতে নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। সুলজার ছাড়াও ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন আফতুর মল্লিক, ছাবিবুর মণ্ডল, আজিম চৌধুরী, আলতাব মল্লিক, আনিসুর রহমান খান, আমিরুদ্দিন খান এবং সাকির মল্লিক। শনিবার ধৃতদের গড়বেতা এসিজেএম আদালতে হাজির করা হয়। পুলিশের ধৃতদের ১০ দিনের জন্য হেফাজতে চেয়ে আবেদন করে। সেই আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করা প্রয়োজন। তাই হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।”
শুক্রবার সকাল থেকে হামলা-পাল্টা হামলায় তেতে ওঠে গড়বেতার আগরা পঞ্চায়েতের একাড়িয়া গ্রাম। প্রথমে গুলিতে খুন হন তৃণমূল কর্মী সিরাজ ওরফে সেরা মল্লিক। পাল্টা হিসেবে জনা তিরিশেক লোক গিয়ে গ্রামের মণ্ডলপাড়ায় পরপর চারটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুড়ে মারা যান তৃণমূল সমর্থক বৃদ্ধ আলম মণ্ডল। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে হামলাকারীদের টাঙির কোপে প্রাণ হারান বৃদ্ধের মেজ ছেলের স্ত্রী আসমা বিবি। একাড়িয়ায় তৃণমূলের দুই নেতা আকবর খান এবং সুলজার মণ্ডলের অনুগামীদের মধ্যে এলাকা দখলের লড়াইয়ের জেরেই এই খুনোখুনি। আকবর তৃণমূলের গড়বেতা ব্লক সভাপতি সেবাব্রত ঘোষের আর। সুলজার দলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি দিলীপ পালের অনুগামী।
এই গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব দীর্ঘ দিনের হলেও একই দিনে তিন-তিনজন খুনের ঘটনা সাম্প্রতিক অতীতে গড়বেতায় ঘটেনি। এ ভাবে চার-চারটি বাড়িও পোড়েনি। শুক্রবারের ঘটনার পরে তাই উস্কে যাচ্ছে ছোট আঙারিয়ার স্মৃতি। তবে এ সব ঘটনা যে বরদাস্ত করা হবে না, তড়িঘড়ি ধরপাকড়েই তার প্রমাণ মিলেছে। আকবর-সুলজার, দু’জনের নামই অভিযুক্ত তালিকায় রয়েছে। সুলজার ধরা পড়েছেন। আর আকবরের খোঁজ চলছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “ধরপাকড় চলবে। কেউ যদি মনে করে, সব ধামাচাপা পড়ে যাবে, পুলিশ ঢিলে দিয়ে দেবে, তাহলে ভুল করবে।”
গড়বেতার এই ঘটনাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্বও। আজ, রবিবার গড়বেতায় তৃণমূলের সাংগঠনিক বৈঠক হওয়ার কথা। শাসক দলের জেলা নেতৃত্বের প্রতিনিধিদের যাওয়ার কথা। থাকার কথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি, দলের জেলা চেয়ারম্যান দীনেন রায়দের। বৈঠক থেকে কড়া বার্তা দিতে পারেন নেতৃত্ব। অজিতবাবুর সাফ কথা, “দলের মধ্যে কোনও বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করা হবে না!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy